এপ্রিলে তৈরি পোশাক রফতানি কমেছে ৮৫%

নিজস্ব প্রতিবেদক

নভেল করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক সংক্রমণ শুরু হলে আংশিক বা পূর্ণাঙ্গ লকডাউনে চলে যায় প্রায় সব দেশ। পরিস্থিতিতে একে একে ক্রয়াদেশ বাতিল হতে থাকে দেশের প্রধান রফতানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পের। ফলে অস্বাভাবিক পতন ঘটে রফতানিতে। পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর তথ্য বলছে, চলতি বছরের এপ্রিলেই গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ কমেছে বাংলাদেশ থেকে পোশাক রফতানি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে বিজিএমইএ জানায়, এপ্রিলে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে ৩৬ কোটি ৬৫ লাখ ৮০ হাজার ডলারের। গত বছরের এপ্রিলে রফতানি হয়েছিল ২৪২ কোটি ১২ লাখ ১০ হাজার ডলারের। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২০৫ কোটি ৪৬ লাখ ৩০ হাজার ডলারের রফতানি কমেছে।

বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএ পর্ষদের পক্ষে বলা হয়, এপ্রিলের পুরো মাস কারখানাগুলো কাজ করেনি। আবার ক্রেতারাও ক্রয়াদেশ বাতিল করেছেন। যার প্রতিফলন ঘটেছে রফতানি চিত্রে। ভবিষ্যৎ রফতানি পরিস্থিতিও অনিশ্চিত।

চীনের উহানে কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় গত বছরের ডিসেম্বরের শেষে। আর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে তা বিশ্বের অধিকাংশ দেশে ছড়িয়ে পড়ে। আমেরিকা ইউরোপ মহাদেশে বাংলাদেশের বৃহৎ রফতানি গন্তব্য প্রায় প্রতিটি দেশেই কভিড-১৯-এর কারণে বিপর্যস্ত। আংশিক বা পূর্ণ লকডাউনে রয়েছে প্রায় সব দেশ। বাংলাদেশেও অঘোষিত লকডাউন চলছে গত ২৬ মার্চ থেকে। একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল স্থগিত হওয়ার কারণে দেশের রফতানি কার্যক্রম বর্তমানে স্থবির হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতের রফতানি ধারাবাহিকভাবেই কমছে। গত মার্চেও বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাকের রফতানি কমেছে প্রায় ২৭ শতাংশ। রফতানিতে পতনের ধারাবাহিকতা বজায় ছিল এপ্রিলেও।

বিকেএমইএ জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এপ্রিলে রফতানি কমারই কথা, কারণ কারখানা বন্ধ ছিল। এখন কারখানা পুনরায় চালু হয়েছে। পুরনো ক্রয়াদেশের কাজ হচ্ছে। নতুন কোনো ক্রয়াদেশ নেই। চাহিদা ঘাটতিতে রফতানির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।

সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনার প্রভাবে দেশের তৈরি পোশাক খাত প্রথমে কাঁচামালের সরবরাহ সংকটে পড়ে। চীনে নভেল করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণের কারণে দেশটি থেকে কাঁচামাল আমদানি ব্যাহত হয়। দেশে তৈরি পোশাক খাতের ওভেন পণ্যের আনুমানিক ৬০ শতাংশ কাপড় আমদানি হয় চীন থেকে। আর নিট পণ্যের কাঁচামাল আমদানি হয় ১৫-২০ শতাংশ। পরবর্তী সময়ে ধীরগতিতে হলেও কাঁচামাল সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। কিন্তু পরে রফতানি গন্তব্যগুলোয় রোগের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ায় চাহিদার সংকট তৈরি হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ক্রয়াদেশ বাতিল বা স্থগিত করতে থাকে একের পর এক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান।

ক্রয়াদেশ বাতিল বা স্থগিত করা ক্রেতাদের মধ্যে প্রাইমার্কের মতো বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠানও আছে। আয়ারল্যান্ডভিত্তিক প্রাইমার্কের পাশাপাশি ছোট-মাঝারি-বড় সব ধরনের ক্রেতাই ক্রয়াদেশ বাতিল বা স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে। আবার এইচঅ্যান্ডএম, ইন্ডিটেক্স, মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার, কিয়াবি, টার্গেট, পিভিএইচসহ আরো কিছু ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ক্রয়াদেশ বহাল রাখার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে। ফলে ক্রয়াদেশ বাতিল বা স্থগিতের পরিমাণ যা বলা হচ্ছে, তার চেয়ে কমে আসতে পারে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিজিএমইএর তথ্য বলছে, গত ২৯ এপ্রিল সকাল ১০টা পর্যন্ত হাজার ১৫০ কারখানার মোট ৩১৮ কোটি ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল স্থগিত হয়েছে। এসব ক্রয়াদেশের আওতায় ছিল ৯৮ কোটি ২০ লাখ পিস পোশাক। অন্যদিকে এসব কারখানায় কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা ২২ লাখ ৮০ হাজার।

চলতি অর্থবছরের (২০১৯-২০) শুরু থেকেই রফতানি নিয়ে কিছুটা খারাপ সময় পার করছিল তৈরি পোশাক খাত। রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে (জুলাই) পোশাক রফতানি বেড়েছিল আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দশমিক শতাংশ। এর পরের মাসেই বড় ধরনের পতন হয় পোশাক রফতানির। সে সময় রফতানি হ্রাস পেয়েছিল ১১ দশমিক ৪৬ শতাংশ। রফতানিতে নেতিবাচক ধারা বজায় থাকে নভেম্বর পর্যন্ত। এর মধ্যে সেপ্টেম্বর, অক্টোবর নভেম্বরে তৈরি পোশাকের রফতানি হ্রাস পেয়েছিল যথাক্রমে দশমিক শতাংশ, ১৯ দশমিক ৭৯ ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

এরপর ডিসেম্বরে কিছুটা ইতিবাচক ধারায় ফিরে আসে তৈরি পোশাক রফতানি। ওই সময় বাংলাদেশ থেকে পণ্যটির রফতানি বেড়েছিল আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দশমিক ২৬ শতাংশ। কিন্তু জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ধসের ধারায় রয়েছে তৈরি পোশাক রফতানি। এর মধ্যে জানুয়ারি ফেব্রুয়ারিতে তৈরি পোশাক রফতানি কমেছে যথাক্রমে দশমিক ৯৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

এদিকে চলতি বছরের মার্চ থেকে মে পর্যন্ত তিন মাসে পোশাক রফতানি ৫০০ কোটি ডলার হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিজিএমইএ। সংগঠনটির প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ থেকে মে পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক রফতানি হবে ৩৭০ কোটি ৬৯ লাখ ৮০ হাজার ডলারের। যেখানে গত বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৮৬০ কোটি ৭৫ লাখ ৩০ হাজার ডলার। হিসেবে তিন মাসের সম্মিলিত রফতানি হ্রাস পেতে যাচ্ছে ৪৯০ কোটি ডলার বা ৫৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন