কভিড-১৯

পরীক্ষার ফল পেতে সময় লাগছে বেশি, বাড়ছে ঝুঁকি

নিহাল হাসনাইন

টানা চারদিন বিনা চিকিৎসায় থাকার পর গত ২৯ এপ্রিল মারা যান পুলিশ সদস্য মো. জসিম উদ্দিন। মৃত্যুর পর জানা গেল তিনি কভিড-১৯ আক্রান্ত ছিলেন, যদিও পুলিশ সদস্যের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল ২৫ এপ্রিল। জসিম উদ্দিনের পরিবারের অভিযোগ, পরীক্ষার ফল দ্রুত পাওয়া না যাওয়ায় বিনা চিকিৎসায় মরতে হয়েছে তাকে।

শুধু পুলিশ সদস্য নন, অনেকের ক্ষেত্রেই এমন ঘটনা ঘটছে। কেউ পরীক্ষার ফল পেতে দেরি হওয়ায় চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছেন, আবার অনেকেই কয়েক দিন ঘুরেও পরীক্ষা করাতে পারছেন না। কেউবা শনাক্ত কিনা নিশ্চিত না হওয়ায় নিজের অজান্তে অন্যের মধ্যে ছড়াচ্ছেন নভেল করোনাভাইরাস।

পুলিশ সদস্য জসিম উদ্দিনের মারা যাওয়ার দিন দুটি পোশাক কারখানায় দুই শ্রমিকের করোনা শনাক্ত হয়। শিল্প পুলিশ সূত্র জানায়, আশুলিয়ার জিরানিতে স্প্রিং ট্রেড নামের কারখানার এক শ্রমিক রংপুরে অবস্থানকালে অসুস্থ বোধ করছিলেন। সেখানেই গত ২২ এপ্রিল তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরে রংপুর থেকে ঢাকায় এসে ২৬ তারিখে কারখানায় কাজে যোগ দেন ওই শ্রমিক। করোনা শনাক্তের পর স্থানীয় পুলিশ জিরানিতে তার আবাসস্থল লকডাউন করেছে। সেই সঙ্গে কারখানাটিও কর্মীদের ছুটি দিয়ে দেয়।

একই দিন যশোরের চৌগাছায় ডিভাইন গ্রুপের ডিভাইন গার্মেন্টস লিমিটেডের এক শ্রমিক কভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ায় কারখানা ইউনিটটি সাময়িক বন্ধ রাখতে বলেছে স্থানীয় প্রশাসন। গত ২৬ এপ্রিল কারখানায় শ্রমিকের তাপমাত্রা বেশি থাকায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরপর গত ২৮ এপ্রিল তার কভিড-১৯ পজিটিভ পাওয়া যায়।

উপসর্গ গোপন করে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগীর সংস্পর্শে গিয়ে কভিড-১৯ আক্রান্ত হন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজির এক নার্স। গত ১৫ এপ্রিল চিকিৎসা নিতে আসা ওই রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে ১৮ এপ্রিল কভিড-১৯ পজিটিভ জানতে পারেন চিকিৎসক। ততক্ষণে অবশ্য ওই রোগী পালিয়ে চলে গেছেন চুয়াডাঙ্গায় তার গ্রামের বাড়িতে। পরে তার সংস্পর্শে আসা ১৩ স্বাস্থ্যকর্মীর নমুনা সংগ্রহ করে ওইদিনই পাঠানো হয় পরীক্ষার জন্য, যার ফল আসে ২২ এপ্রিল। নমুনা সংগ্রহের পর ওই ১৩ স্বাস্থ্যকর্মীকে হাসপাতালে না এসে বাসায় অবস্থান করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে এক নার্স চলে যান তার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলে। সেখানে পরিবারের সঙ্গে দুদিন কাটানোর পর টেস্ট রিপোর্ট হাতে পেয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানতে পারে ওই নার্সও কভিড-১৯ আক্রান্ত। এরপর তাকে দ্রুত হাসপাতালে ডেকে নেয়া হয়। কিন্তু তার আগেই তিনি নিজের অজান্তেই সংক্রমণ ছড়িয়েছেন আশপাশের মানুষের মাঝে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কভিড-১৯ পরীক্ষার ফল পেতে বিলম্বের কারণে দেশে অনেকেই বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন। কারণ টেস্ট রিপোর্ট দেখাতে না পারলেও কভিড-১৯ চিকিৎসায় সরকার নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে রোগীদের প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। পাশাপাশি হটলাইন নম্বরে ফোন করে মিলছে না প্রত্যাশিত সেবা। আর যারা বেঁচে যাচ্ছেন, তারাও নিজের অজান্তে পরিবার আশপাশের মানুষদের সংক্রমিত করছেন।

জানতে চাইলে আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এএসএম আলমগীর বণিক বার্তাকে বলেন, কভিড-১৯ পরীক্ষার রিপোর্ট শুরুতে আমরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই দিচ্ছিলাম। কিন্তু এখন পরীক্ষার চাপ কয়েক গুণ বেড়েছে। ফলে রিপোর্ট পেতে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লেগে যাচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষে এরচেয়েও বেশি সময় লাগছে। আসলে এখন হাঁচি-কাশি হলেই অনেকেই ছুটছেন কভিড-১৯ পরীক্ষা করাতে। এজন্য যাদের প্রকৃত প্রয়োজন, তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। 

তিনি এও বলেন, পরীক্ষার ফলের দিকে তাকিয়ে না থেকে রোগীর উচিত নমুনা সংগ্রহের দিন থেকেই আইসোলেশনে চলে যাওয়া। পাশাপাশি ফোনে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেয়া। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন