শ্রদ্ধাঞ্জলি

জামিলুর রেজা চৌধুরী: রাষ্ট্রের ডাকে সবসময় সাড়া দিয়েছেন

ড. এম এ মোমেন

নতুন সহস্রাব্দের প্রথম দশকের প্রথমার্ধে যখন কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা দলিল প্রণয়ন করা হচ্ছিল, প্রণয়ন কমিটির প্রধান ছিলেন অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। তার সদস্য সচিব ছিলাম আমি। তিনি প্রধান ছিলেন যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা মেধার বিচারে। আমি সদস্য সচিব ছিলাম কেবল পদাধিকারবলে। সে সময়ে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক ছিলাম। আমি দায়িত্ব নিয়েছিলাম প্রকৌশলী সচিব কামরুল ইসলাম সিদ্দিকের কাছ থেকে। প্রকৌশলী না হয়েও বিশাল কর্মযজ্ঞে অধ্যাপক চৌধুরীর কমিটিতে সদস্য সচিব হিসেবে কাজ করাটা ছিল একটা বড় চ্যালেঞ্জ। আমার জ্ঞানের ঘাটতি ঢাকার জন্য নয়, তিনি যেন আমাকে কেবল চেয়ারে বসা আমলা মনে না করেন, সেজন্য পড়াশোনাও শুরু করে দিই। তিনি বললেন, তার চোখের সামনে সুন্দর সবুজ ঢাকা শহরটি ধ্বংস হয়ে গেল। পুকুর, জলাশয় ভরাট হলো; রাস্তাঘাট দখল হলো।

জামিলুর রেজা চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলতে যোগ্যতার পরীক্ষা দিতে আমিও বললাম, স্যার, আফসোস তো শতবর্ষ পুরনো। ঢাকার সার্ভে সেটলমেন্টের চূড়ান্ত রিপোর্ট লেখার সময় আইসিএস সেটলমেন্ট অফিসার আফসোস করেছেন: এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। ঢাকার রাস্তঘাট কমে যাচ্ছে। ১৭৯৪ সালে ঢাকার কালেক্টরও আফসোস করে লিখেছিলেন: এটা আমার জন্য দুর্ভাগ্যজনক যে পায়ে হেঁটে তেজগাঁওয়ে যাওয়ার মতো কোনো রাস্তা নেই।

আমি তাকে বললাম, স্যার, ১০০ বছর আগেও ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার অভিযোগ বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে উঠেছিল। অবশ্য সেবার ভেঙে পড়ার কারণ ছিল ছোট লাটের ঢাকা আগমন। আমি কাউন্সিল প্রসিডিংস থেকে পাতাটি ফটোকপি করে তাকে দেখাই। আমি তার আস্থাভাজন হয়ে উঠতে থাকি। আরেকদিন বললাম, বৃহত্তর ঢাকা জেলায় (ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর) ১৮৪০ সালে মাত্র ২২ মাইল পাকা রাস্তা সরকারের ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে ছিলএর এক-তৃতীয়াংশ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সড়কে, বাকিটা ঢাকা-টঙ্গী সড়কে। আমি দেশে দেশে বাস র্যাপিড ট্রানজিট, মাস র্যাপিড ট্রানজিট, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল, টকিও সমন্বিত ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ শিখতে শুরু করলাম, যাতে আমি যে প্রকৌশল পেশার কেউ নই, দুর্বলতাটি যেন আড়াল হয়ে থাকে।

আমি তার প্রিয়ভাজনদের একজন হয়ে উঠি। আমার প্রকৌশলী সহকর্মীরা তো বটেই, পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষভাবে আরো শেখালেন বুয়েটের অধ্যাপক আলমগীর মুজিবুল হক।

অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর মৃত্যুতে আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছেন আমার চেনা একজন অন্যতম শ্রেষ্ঠ মানুষ এবং প্রকৌশল জ্ঞানের একজন জীবন্ত এনসাইক্লোপিডিয়া। দেশের একজন শ্রেষ্ঠ প্রকৌশলী, শ্রেষ্ঠ শিক্ষক, তথ্যপ্রযুক্তিবিদ্যার দেশীয় অগ্রনায়ক ছিলেন তিনি। সংকটকালে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টার দায়িত্বও পালন করেছেন। তার জন্ম ১৫ নভেম্বর ১৯৪২ সালে সিলেটে। বাবা মায়ের ভিটে ১৯৪৭ সালের দেশভাগে র্যাডক্লিপ রোয়েদাদে পাকিস্তানে পড়লেও স্বাধীনতার তিনদিন পর ১৭ আগস্ট সংশোধিত রোয়েদাদে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। বাবা মা উভয়ই তখনকার কাছাড় জেলার বাসিন্দা (জেলাভাগের পর এখন হাইলাকান্দি) বাবা আবিদ রেজা চৌধুরী বাংলাদেশের প্রথমদিককার মুসলিম বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের একজন। তিনি শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র ছিলেন। বাংলাদেশের তামাবিল থেকে ভারতীয় সীমান্তে পাহাড়ি পথে দৃশ্যমান সাসপেনশন ব্রিজটি আমাদের অনেকেরই চোখে পড়েছে। ব্রিজটি আবিদ রেজা চৌধুরীর অন্যতম প্রকৌশল কৃতি।জামিলুর রেজা চৌধুরীর জীবনের প্রথম তিন বছর কেটেছে সিলেটে উঁচু পাহাড়ের ওপর একটি স্মৃতিময় বাংলো বাড়িতে। শৈশবের একাংশ ময়মনসিংহে, ১৯৫২ সালের জানুয়ারি শেষে বাবার বদলির কারণে ঢাকায়। ১৯৫৭ সালে সেন্ট গ্রেগরিজ স্কুল থেকে মেট্রিক এবং ১৯৫৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে আইএসসি পাস করে আহসান উল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (পরে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি) ভর্তি হন। তার বাবার পেশার প্রতি আগ্রহ এবং পারিবারিক আবহ গোড়া থেকে তাকে প্রকৌশল অধ্যয়নের প্রতি অনুপ্রাণিত করেছে। মেধাবী ছাত্রদের স্বাভাবিক প্রবণতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা। ১৯৬৩ সালে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। উচ্চশিক্ষা বৃত্তি তাকে সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি পিএইচডি অর্জনে সহায়তা করে। ১৯৬৮-তে অর্জিত পিএইচডি অভিসন্দর্ভ ছিল কম্পিউটার এইডেড ডিজাইন অব হাইরাইজ বিল্ডিং-এর ওপর। ফিরে আসেন শিক্ষকতায়, কম্পিউটার কোর্স চালু করেন, কম্পিউটার সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৬ সালে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পান। তার আগে ১৯৭৪-৭৫ সালে কমওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অব সারেতে ভিজিটিং অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

সাউদাম্পটনে অ্যাডভাসন্ড স্টাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাঠ গবেষণাকালের একটি ঘটনা তারই ভাষায় তুলে ধরছি—‘আমি পড়ছিলাম ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ে, সেখানে উঁচু ইমারতের নকশা নির্মাণ বিষয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করা হলো। বিশ্বের বিখ্যাত কাঠামো নির্মাণ প্রকৌশলীরা সে সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে এলেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুই নাম ছিল . ফজলুর রহমান খান (এফআর খান) আর লেমলি রবার্টসন। দুজনই তখন যুক্তরাষ্ট্রে ১০০ তলার চেয়েও উঁচু ভবনের নকশা প্রণয়ন নির্মাণে নিয়োজিত ছিলেন। এফআর খান তখন শিকাগোর ১০০ তলা, জন হ্যানকক সেন্টার এবং লেমলি রবার্টসন নিউইয়র্কে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে (যে ইমারতটি ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর হামলার শিকার হয়ে ধসে পড়ে) নকশা নির্মাণের প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে যুক্ত ছিলেন। তারা উঁচু ইমারতসংক্রান্ত যে দুটি গবেষণাপত্র সেই সম্মেলনে উপস্থাপন করেন, তাতে বিষয়টিতে আমার আগ্রহ আরো বেড়ে যায়। এছাড়া তখন অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বিখ্যাত অপেরা হাউজের ডিজাইনটি হচ্ছিল। তার প্রধান ডিজাইনার আরএস জেনকিনস আমাদের স্নাতকোত্তর কোর্সে একজন ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে এর নকশা নির্মাণ সমস্যা সমাধান কীভাবে করবেন, তা তুলে ধরেন। হাইরাইজ বিল্ডিংয়ে তার আগ্রহের সাক্ষ্য দেয় ১৯৭০ ১৯৮০-এর দশকে বাংলাদেশে নির্মিত উচ্চ ভবনগুলো। ১৯৭০-এর দশক থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের সব মেগা প্রকল্পে জামিলুর রেজা চৌধুরীর প্রত্যক্ষ পরোক্ষ অবদান রয়েছে।


১৯৮৩ সালে যমুনা ডিঙিয়ে গ্যাস পাইপলাইন নেয়ার নকশা প্রণীত হলে ব্যয়বহুল প্রকল্প পর্যালোচনা করে তিনি বরং তা নাকচ করে কিছু অর্থ বাড়িয়ে সেতু নির্মাণের প্রস্তাব দেন। যে সেতুর কাঠামো বিদ্যুৎ লাইন গ্যাস পাইপলাইন নেয়ার কাজে ব্যবহার করা যাবে। যমুনা সেতু নির্মাণে তিনি দেশীয় বিশেষজ্ঞ প্যানেলের নেতৃত্ব দেন এবং ভূমিকম্প সহনীয় সেতু নির্মাণে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দেন।

যমুনা নদীর ওপর নির্মিত সেতু নিয়ে তার বক্তব্য উল্লেখ্য: যমুনার মতো এত চড়া নদীকেবন্যার সময় যা ১২ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে পড়েশাসন করে দশমিক কিলোমিটারে আনা সম্ভব হয়েছিল। এর জন্য প্রচুর সমীক্ষা করতে হয়। পৃথিবীতে এটাই ধরনের প্রকল্পের প্রথম সফল বাস্তবায়ন।

নিজ দেশের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে নিতে অন্যতম সহায়ক ব্যক্তিত্ব জামিলুর রেজা চৌধুরী। তিনি তার স্বপ্নের কথা বলেছেন: একজন নির্মাণ প্রকৌশলী হিসেবে আমার স্বপ্ন দেশীয় নির্মাণসামগ্রী সর্বোচ্চ ব্যবহার করে দেশের কোটি কোটি মানুষকে স্বল্প ব্যয়ে পরিবেশবান্ধব ঘরবাড়ি নির্মাণ করতে সাহায্য করা, যা ভূমিকম্প ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে পারবে।

দেশের মাটি মানুষের সঙ্গে তার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। ১৯৭০-এর ১২ নভেম্বর প্রলয়ঙ্করী জলোচ্ছ্বাসের পর সঙ্গীদের নিয়ে ত্রাণকাজে নিয়োজিত ছিলেন মনপুরায়তার অন্যতম ভাবনা ছিল জলোচ্ছ্বাসের সর্বপ্লাবি তাণ্ডব থেকে উপকূলীয় মানুষকে রক্ষা করা।

জামিলুর রেজা চৌধুরী অপেক্ষায় ছিলেন, প্রবল তার আশাবাদ, ২০৩০ সালের মধ্যে বিজ্ঞানের কোনো একটি শাখায় বাংলাদেশের কেউ একজন নোবেল পুরস্কার পাবেন।

যখন রাষ্ট্র তাকে চেয়েছে, তিনি সাড়া দিয়েছেন। তিনি সমন্বিত ভূমি সড়ক পরিবহন নীতিমালার কথা বলেছেন। একটি আধুনিক বিল্ডিং কোড প্রণয়নে বড় ভূমিকা রেখেছেন। যখন খবরের কাগজ লিখেছে, বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ঝুঁকি কম, তিনি বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ দিয়ে বলেছেন, এটি মূর্খের প্রলাপ, বাংলাদেশ ভয়ংকর ভূমিকম্পের ঝুঁকির মধ্যে আছে।

তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, বৃহৎ ভবনে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে তা সামাল দেয়ার দায়িত্ব ভবন কর্তৃপক্ষের; তারা তাদের সেফটি প্ল্যান অনুযায়ী নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ টুলস ব্যবহার করে আগুন নেভাবে। ফায়ার বিগ্রেড নিয়ে টানাটানি করবে না।

যখন কর্তৃপক্ষের অবহেলা নিস্পৃহতায় বুয়েটের মতো প্রতিষ্ঠানে আবরারদের নিহত হতে হয়, অধ্যাপক চৌধুরীকে তার ভূমিকা পালন করতেই হবে। তিনি তা করেছেন। সচেতন নাগরিক হিসেবে প্রতিবাদী হন, তিনি সময়ের দাবিতে উঠে দাঁড়িয়েছেন। তার সমালোচকরা আড়ালে প্রকাশে বলে থাকেন, তিনি সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অন্য শাখা নিয়ে কথা বলবেন কেন? এটি তার অনধিকার চর্চা। আমার প্রকৌশলী বন্ধুদের বৃহদাংশ ইলেকট্রিক্যাল ইলেকট্রনিকসের। সুতরাং কারণে সমালোচনা আমাকে একটু বেশিই শুনতে হয়। আমি তাদের বলি, রাষ্ট্র জনগণের আস্থা নিয়ে তিনি যেভাবে এমার্জ করেছেন, শত পাণ্ডিত্য সত্ত্বেও যারা তা করতে পারেননি, সমাজ বিনির্মাণে যাদের ভূমিকা নেই, গণমাধ্যম কখনো তাদের কাছে যাবে না। তিনি যেমন স্বাধীন দেশ চেয়েছিলেন, দেশটি তার স্বপ্ন থেকে এখনো অনেক দূরে। সে আফসোস তার ছিলই। তাকে স্মরণ করে বিজ্ঞানমনস্ক সমাজের উত্থান আমরাও চাই। বিজ্ঞানের মানুষ সমাজের ভার বহন করেন। নিয়তিবাদীদের অনেকে সমাজের বোঝা হয়ে বিরাজ করেন।

অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী যখন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, আমি অনিয়মিত ফ্যাকাল্টি হিসেবে ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স স্টাডিজ পড়িয়েছি। স্মাতকোত্তর পর্বের অভিসন্দর্ভ তত্ত্বাবধান মূল্যায়ন করেছি।

২০০৪ সালের ডিসেম্বরে মহাখালীর ফ্লাইওভার উদ্বোধন হতে যাচ্ছে, সব আয়োজন সম্পন্ন। কিন্তু স্থাপনায় ভূমিকম্পনায় শক ট্রান্সমিশন ইউনিট (এসটিইউ) ৪২টির বদলে ২১টি লাগানো হয়েছে। বাকিগুলোর চালান যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসে পৌঁছেনি। তখনকার বিশ্বব্যাংক আবাসিক প্রতিনিধি চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিলেন, অসমাপ্ত অবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ উদ্বোধন বিশ্বব্যাংক সমর্থন করে না। সরকার বিশ্বব্যাংকের একটি মুলোমুলি অবস্থানে অধ্যাপক চৌধুরী আশ্বস্ত করলেন, সে মুহূর্তে ঝুঁকির সম্ভাবনা নেই।

২০০৫ সালে আমি সিটি করপোরেশনের (তখন অভিজ্ঞতা) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। একদিন স্যার এসে হাজির। এলিফেন্ট রোডে তার বাসার সামনের গলিতে নিরাপত্তাজনিত কারণে গেট লাগাতে চান, একটি আবেদনপত্র নিয়ে এসেছেন। আমি বললাম, স্যার অনেক গলিতেই গেট হয়ে গেছে। আপনিই প্রথম এলেন আবেদন নিয়ে। তার আবেদনের ওপরই অনুমতি দেয়া হলো লিখে সই করে একটি ফটোকপি প্রক্রিয়াকরণের জন্য অফিসে রেখে দিলাম। তিনি হাসতে হাসতে বললেন, এত সহজেই কাজ হয়ে গেলে তো সরকারি অফিসের গুরুত্ব কমে যাবে।

২০১১ সালের বইমেলায় অধ্যাপক চৌধুরী আমাকে বললেন, মেলা থেকে ১৫০ টাকায় প্রতিমন্ত্রী নামের একটি উপন্যাস কিনে সানন্দে পড়ে তার এক বন্ধুকে পড়তে দিয়েছেন। লেখকের ছবি আমার চেহারা দেখে তার মনে হচ্ছে দুজন একই ব্যক্তি। কিন্তু নাম মিলছে না। আমি বললাম, আমার মতো এমন সাদামাটা চেহারার অন্তত দেড় কোটি লোক বাংলাদেশে আছে। কিন্তু আপনার চেহারার একজনই।

তিনি বললেন, বইয়ের ভেতরে মন্ত্রী আমলাদের যে কাহিনী পড়েছেন, তার ধারণা এসব আমারই জানার কথা। আমি মেনে নিই। জি স্যার, আমি আন্দালিব রাশদী নামে এটা-ওটা লিখে থাকি কিংবা আন্দালিব রাশদীই এমএ মোমেন নামে চাকরি করে থাকেন।

এরপর কতবার দেখা হয়েছে, স্যার জিজ্ঞাসা করেছেন, আন্দালিব রাশদী এখন কী লিখছ? করোনাকালে অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী আমাদের সঙ্গে যে সামাজিক দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন, সে দূরত্ব ঘুচিয়ে আর কখনো তার কাছে পৌঁছতে পারব না।

 

. এম মোমেন: সাবেক সরকারি কর্মকর্তা

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন