করোনার সংক্রমণ বাড়াতে পারে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার ঘাটতি

আইএলওর স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে প্রয়োগে সচেষ্ট হোক শ্রম মন্ত্রণালয়

শ্রমিকদের কাজে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষা না দিলে নভেল করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ ঢেউ দেখা দিতে পারে বলে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা হুঁশিয়ারি দিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বর্তমানে লকডাউনের বিধিনিষেধ শিথিল করার বিষয়ে চাপ বাড়ছে। পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট সরকারগুলোর প্রত্যেক কর্মক্ষেত্রে কভিড-১৯ প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণের জন্য পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। বিষয়ে নিয়োগকর্তা শ্রমিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে কাজ করার পাশাপাশি সংলাপের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছে সংস্থাটি। বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে মে মাসকে উল্লেখ করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এখন আমরা করোনা সংক্রমণের চতুর্থ পর্যায়ে রয়েছি। সময়ে করোনার সংক্রমণ ব্যাপক আকারে বাড়তে থাকবে। সময়েই আমাদের সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকতে হবে। কিন্তু সময়ের মধ্যেই সরকার অর্থনৈতিক বাণিজ্যিক বিবেচনায় কিছু জরুরি রফতানিমুখী শিল্প-কারখানা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালুর পক্ষে নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ কারখানা চলছে শারীরিক দূরত্বের বিধান না মেনে। কোনো রকম একটি মাস্ক পরে নিয়ে কারখানায় কাজ করছেন শ্রমিকরা। এরই মধ্যে খবর মিলছে, করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত নারায়ণগঞ্জে করোনা শনাক্তের সংখ্যা বেড়েছে সেখানে কারখানা খোলার সঙ্গে সঙ্গে। একসঙ্গে জড়ো হয়ে অনেক কারখানায় কাজ করে এমন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে গার্মেন্ট রয়েছে এক নম্বরে। একসঙ্গে কয়েক হাজার লোক কাজ করে এমন কারখানাও রয়েছে। ফলে লোকসমাগম যত বেশি, করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিও তত বেশি। হিসাবে তৈরি পোশাক খাতের কর্মীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। তিনি বলেন, এমন কমপ্লায়েন্স কারখানাও রয়েছে, যেগুলোয় এত মানুষের হাত ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই।

আইএলও বলছে, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে দ্বিতীয় দফায় করোনার ঢেউ আসবে। তাতে ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়বে। এরই মধ্যে বিপুলসংখ্যক শ্রমিকের বেকার হয়ে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। শ্রমিকদের কাজে নিরাপদে ফিরে আসা নিশ্চিত করার পাশাপাশি মহামারীসংক্রান্ত অন্যান্য বিপত্তি এড়ানোর জন্য আইএলও কিছু সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে সব কাজের ক্ষেত্রে বিপত্তির জায়গাগুলো চিহ্নিত করা, সংক্রমণের ঝুঁকিগুলো নির্ধারণ করা এবং শ্রমিকরা কাজে ফেরার পরও নির্ধারণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখা। এছাড়া প্রত্যেক খাত কর্মক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথাও বলা হয়েছে বিবৃতিতে। এর মধ্যে রয়েছে শ্রমিক, ঠিকাদার, গ্রাহকদের কর্মক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, ভেন্টিলেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, নিয়মিত মেঝে পরিষ্কার করা, কর্মস্থলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করা, হাত ধোয়া এবং স্যানিটাইজেশনের জন্য পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা। দেশের কোনো প্রতিষ্ঠানে এসব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হচ্ছে কিনা, তা তদারক করা প্রয়োজন। মালিকদের সংগঠনের পক্ষ থেকে তদারকির কথা বলা হলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগের খবর পাওয়া যায়নি এখনো। গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন, আলোকচিত্র ভিডিও থেকে দেখা যাচ্ছে, এসব স্বাস্থ্যবিধির অধিকাংশই উপেক্ষিত থাকছে। এতে শ্রমিকদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। অধিকাংশ শ্রমিক এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করেন। তারা স্বল্পশিক্ষিত করোনাভাইরাস সংক্রমণের স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে ততটা সচেতন নন।

রমজান মাস চলছে, সামনে ঈদ। এই সময়ে বিশাল শ্রমজীবী মানুষকে নিরাপদ কর্ম এলাকা, কর্মস্থলে অসংক্রমিত যাতায়াত, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, নিরাপদ বাসস্থান নিশ্চিত করা দরকার। শ্রমিক অন্য কর্মীদের সুস্থ রাখার স্বার্থে পরীক্ষামূলকভাবে প্রশাসনের নজরদারিতে নির্দিষ্ট এলাকায় কিছু কারখানা খুলে পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে। শ্রমজীবী মানুষের সুস্থতা নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিঃসন্দেহে কারখানা মালিককে সর্বাধিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। পাশাপাশি প্রশাসন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, পরিবহন, শ্রম পরিদর্শক বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সবার নিয়মিত নজরদারি প্রয়োজন। অন্যথায় বিগত সময়ের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে এবং বিদেশে পোশাক রফতানিতে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এক্ষেত্রে ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলোও করোনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে কারখানাগুলোকে চাপ প্রয়োগ করতে পারে। এর মধ্যে ইউরোপ আমেরিকার অনেক ব্র্যান্ড তৈরি পোশাক কিনতে তাদের অর্ডারের পরিমাণ কমাচ্ছে, কোথাও কোথাও বাতিল বা স্থগিত করছে। পরিস্থিতিতে কারখানায় শ্রমিকদের মধ্যে করোনা সংক্রমিত হলে ভবিষ্যতে রফতানি আয়ের শীর্ষে থাকা খাত আরো হুমকি বিপদের মধ্যে পড়বে। করোনা শ্রমিকদের মধ্যে ছড়ালে বায়াররা ভবিষ্যতেও বাংলাদেশে অর্ডার দেয়ার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত হবে, যা অর্থনীতিতে বিপর্যয় ডেকে আনবে। মুহূর্তে কারখানা চালু রাখতে আইএলও-মালিক-শ্রমিক-সরকারের যৌথ কমিটি গঠনপূর্বক কারখানা স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন তদারক করা জরুরি। সরকারের পক্ষ থেকে মালিকদের সহায়তা জোগানোর পাশাপাশি শ্রমিকদের সচেতন করতে উদ্যোগ নিতে হবে। আইএলওর নির্দেশনা পরিপালনে শ্রম মন্ত্রণালয়ের কার্যকর ভূমিকাই প্রত্যাশিত।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন