গুগলের কমিউনিটি মবিলিটি রিপোর্ট

মানুষ আগের চেয়ে ঘরে থাকছে কম

নিজস্ব প্রতিবেদক

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার পাশাপাশি যথাসম্ভব মানুষকে ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কোনো ধরনের প্রতিষেধক বা ওষুধ না থাকায় মারণ ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানোর একমাত্র উপায় লকডাউনকে বেছে নিয়েছে বিশ্বের দেশগুলো। বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো লকডাউন শব্দটি ব্যবহার না করলেও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি ঘোষণার পাশাপাশি সারা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষকে ঘরের বাইরে না আসার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। যদিও গুগলের কমিউনিটি মবিলিটি রিপোর্ট বলছে, মার্চের তুলনায় এপ্রিলে বাংলাদেশে মানুষের ঘরে থাকার হার কমেছে। তাছাড়া সময়ে কর্মস্থলেও মানুষের সমাগম বেড়েছে। অন্যদিকে যথাযথভাবে শারীরিক দূরত্ব মেনে না চলার কারণে মার্চের তুলনায় এপ্রিলে কভিড-১৯- আক্রান্ত মৃত্যুর সংখ্যাও পাল্লা দিয়েছে বেড়েছে।

বিশ্বব্যাপী নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য খাতের বিশেষজ্ঞদের সহায়তার জন্য কমিউনিটি মবিলিটি রিপোর্টের মাধ্যমে সারা বিশ্বের মানুষের অবস্থানগত তথ্য উন্মুক্ত করেছে গুগল। এতে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আগে পরে ট্রানজিট স্টেশন, রিটেইল শপ, বিনোদন কেন্দ্র, কর্মক্ষেত্র, মুদি দোকান, ফার্মেসি, পার্ক বাসাবাড়িতে মানুষের অবস্থানের তুলনামূলক তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বছরের জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ সপ্তাহের তথ্যের সঙ্গে ২৯ মার্চ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণের ভিত্তিতে প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল গুগল। সেসময় প্রকাশিত গুগলের কমিউনিটি মবিলিটি রিপোর্ট অনুসারে লকডাউন কার্যকরে পার্শ্ববর্তী ভারতসহ বিশ্বের বেশকিছু দেশের তুলনায় পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ।

এরপর দ্বিতীয় দফায় বছরের ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী মানুষের অবস্থানগত তথ্য প্রকাশ করেছে গুগল। এতে দেখা যায়, বাংলাদেশে ট্রানজিট স্টেশন, রিটেইল শপ, বিনোদন কেন্দ্র, কর্মক্ষেত্র, মুদি দোকান, ফার্মেসি পার্কে মার্চের তুলনায় এপ্রিলে মানুষের সমাগম কমেছে। অন্যদিকে বাসা বাড়িতে মানুষের অবস্থানের হার মার্চের তুলনায় এপ্রিলে কমে গেছে।

গুগলের মবিলিটি রিপোর্ট অনুসারে, বাংলাদেশে ট্রানজিট স্টেশনে বছরের ২৯ মার্চ পর্যন্ত ৬৬ শতাংশ জন সমাগম কমেছে, যা ১৭ এপ্রিল শেষে  ৭২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। রিটেইল বিনোদন কেন্দ্রে মার্চে ৬৮ শতাংশ জনসমাগম কমেছিল, যা এপ্রিলে এসে দাঁড়িয়েছে ৭৫ শতাংশে। মার্চ শেষে  কর্মক্ষেত্রে ৬০ মানুষের সমাগম কমেছিল, আর এপ্রিলে এসে এটি ৩৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মুদি দোকান ফার্মেসিতে মার্চে ৪৬ শতাংশ জনসামগম কমেছিল, যা এপ্রিলে ৫৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। পার্কে মার্চ মাসে ২৬ শতাংশ মানুষের চলাচল কমেছিল, যেটি এপ্রিলে এসে ৩৬ শতাংশ হয়েছে।  দেশে মার্চ শেষে ঘরে থাকা মানুষের সংখ্যা বেড়েছিল ২৪ শতাংশ। তবে এপ্রিলে এসে ঘরে থাকা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ২০ শতাংশ। এর মানে হচ্ছে আগের তুলনায় মানুষ ঘরে থাকছে কম।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) তথ্যানুসারে, ২৯ মার্চ পর্যন্ত দেশে কভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪৮ জন আর মৃত্যু ৫। ১৭ এপ্রিলে এসে দেশে কভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা ছিল হাজার ৮৩৮ জন এবং মারা গেছে ৭৫ জন। আর সর্বশেষ গতকাল পর্যন্ত দেশে কভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে হাজার ৪৬২ জনে আর পর্যন্ত মারা গেছে ১৫৫ জন।

অবশ্য গুগলের মাধ্যমে বাংলাদেশে বিভিন্ন স্থানে মানুষের চলাচলের অবস্থানগত যে তথ্য পাওয়া গেছে সেখানে প্রকৃত সংখ্যা প্রতিফলিত নাও হতে পারে। এর কারণ হচ্ছে শহর গ্রামের মধ্যে অবস্থানগত এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে। তাছাড়া গুগল ম্যাপে সাইন আপ করলে তখন গুগল অবস্থানগত তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। তাই সাইন আপ করেনি এমন মানুষের সংখ্যাও অনেক। তাছাড়া এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে গার্মেন্টস খোলার খবরে বিপুলসংখ্যক শ্রমিক ঢাকায় প্রবেশ করেছে। লকডাউনের মধ্যেও দেশের বিভিন্ন স্থানে জনসমাগমের তথ্য গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। ফলে এসব কিছু বিবেচনায় নিলে মানুষের চলাচলসংক্রান্ত প্রকৃত তথ্য আরো শোচনীয় হবে। সর্বোপরি পার্ক ঘরের বাইরে মানুষের চলাচলের তথ্য বলছে, এখনো বিপুলসংখ্যক মানুষ সচেতন না হয়ে ঘরে থাকার পরিবর্তে বাইরে অযথা ঘোরাঘুরি করছে।

আইইডিসিআরের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এএসএম আলমগীর বণিক বার্তাকে বলেন, আগের তুলনায় মানুষের মধ্যে সচেতনতা অনেক বেড়েছে। রাজধানী ঢাকার কথাই যদি ধরি আগে রাস্তায় প্রচুর জনসমাগম হত। অথচ এখন ঢাকার রাস্তাঘাট ফাঁকা। তবে এটাও ঠিক যে অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজন ছাড়া অনেকেই অযথা বাইরে বের হচ্ছে। আবার অনেককে জীবনের তাগিদে বের হতে হয়েছে। আমাদের দেশেল বাস্তবতা অন্যদের চেয়ে আলাদা। তাই গুগলের তথ্য আমাদের ক্ষেত্রে কতটুকু প্রযোজ্য সেটিও দেখার বিষয়।

তিনি বলেন, সামনের এক-দুই সপ্তাহ আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এরইমধ্যে গার্মেন্টসসহ কিছু শিল্পকারখানা খুলে দেয়া হয়েছে। তারা কতটুকু সাবধানতা অবলম্বন করতে পারে সেটি দেখার বিষয়। যদি সময়টাতে আমরা সংক্রমণকে একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখতে পারি তাহলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে জানান তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন