আইএলওর বিবৃতি

সংক্রমণ বাড়াতে পারে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার ঘাটতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার ঘাটতি শ্রমিকদের মধ্যে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়াতে পারে বলে অভিমত দিয়েছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) গতকাল প্রকাশিত এক বিবৃতিতে অভিমত দেয় সংস্থাটি।

জেনেভা কার্যালয় থেকে পাঠানো বিবৃতিতে সতর্ক করে দেয়া বার্তায় আইএলও বলেছে, শ্রমিকদের কাজে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষা না দিলে নভেল করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ ঢেউ দেখা দিতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বর্তমানে লকডাউনের বিধিনিষেধ শিথিল করার বিষয়ে চাপ বাড়ছে। পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট সরকারগুলোর প্রত্যেক কর্মক্ষেত্রে কভিড-১৯ প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণের জন্য পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। বিষয়ে নিয়োগকর্তা শ্রমিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে কাজ করার পাশাপাশি সংলাপের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

আইএলও বলছে, সব মালিকপক্ষকে কর্মীদের ঝুঁকি কমানোর জন্য ঝুঁকি মূল্যায়ন করতে হবে এবং কর্মস্থলগুলোয় শ্রমিকরা কাজে ফেরার আগেই কঠোর সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ধরনের নিয়ন্ত্রণ ছাড়া দেশগুলোয় দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণ ঢেউ বৃদ্ধির ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া গেলে কর্মক্ষেত্রে দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ ঝুঁকি হ্রাস পাবে।

বিবৃতিতে আইএলওর মহাপরিচালক গাই রাইডার বলেন, মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে গোটা কর্মীবাহিনীর সুরক্ষা স্বাস্থ্যনিরাপত্তা। মহামারীর প্রভাব এখন পুরোপুরি নির্ভর করছে ব্যাপক প্রাদুর্ভাবের বিপরীতে কর্মীদের দেয়া সুরক্ষা, তাদের নিরাপত্তা ব্যবসায়িক স্থিতিশীলতার ওপর।

গাই রাইডার বলেন, কেবল পেশাগত সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে আমরা শ্রমিকতাদের পরিবার বৃহত্তর পরিসরে জনগণের জীবন রক্ষা করতে পারি। এতে কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষার পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে টিকে থাকা সম্ভব হবে।

এজন্য তিনি স্বাস্থ্যকর্মীসহ জরুরি সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের যথাযথ স্বাস্থ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন।

বিবৃতিতে আইএলওর বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর তুওমো পওতিশিয়াইনেন বলেন, কিছু কিছু শিল্প ধীরে ধীরে কার্যক্রম শুরু করছে, সে বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শ্রমিকদের নিরাপদে কাজে ফেরার বিষয়টি নিশ্চিত করতে একটি তিন ধাপের কৌশল তৈরি করেছে আইএলও। এর মধ্যে প্রথম পদক্ষেপ হলো নিয়োগকারী শ্রমিকের মধ্যে আলোচনার ওপর ভিত্তি করে কাজের জন্য বেশ কয়েকটি সুরক্ষা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গ্রহণ নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকি প্রশমন।

তুওমো পওতিশিয়াইনেন বলেন, ভাইরাসটিকে প্রতিরোধের পাশাপাশি কর্মীদের মধ্যে সংক্রমণ ঠেকাতে আইএলও শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীন কলকারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই) সঙ্গে যৌথভাবে কভিড-১৯ সংক্রান্ত নির্দেশিকা তৈরি করেছে। এছাড়া আইএলও আনুষ্ঠানিক অনানুষ্ঠানিক খাতের কর্মীদের জন্য জীবিকা ভাতা, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা আয়ের সুরক্ষা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়াও কাজ ভাগাভাগির ভিত্তিতে কর্মসংস্থান ধরে রাখার পরামর্শ দিচ্ছে।

আইএলওর বিবৃতিতে সবচেয়ে নাজুক অবস্থানে থাকা শ্রমিক ব্যবসায়ী, বিশেষত অভিবাসী গৃহকর্মীদের প্রয়োজনের কথা তুলে ধরা হয়।

শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য কিছু পদক্ষেপ আশু গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মনে করছে আইএলও। এসব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে নিরাপদ স্বাস্থ্যকর কাজের অনুশীলন সম্পর্কে শিক্ষা প্রশিক্ষণ, প্রয়োজনমতো বিনা মূল্যে পিপিইর ব্যবস্থা করা, জনস্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট পরিষেবাগুলোয় শ্রমিকদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা জীবিকার অন্য বিকল্পের ব্যবস্থা করা।

শ্রমিকদের কাজে নিরাপদে ফিরে আসা নিশ্চিত করার পাশাপাশি মহামারীসংক্রান্ত অন্যান্য বিপত্তি এড়ানোর জন্য বিবৃতিতে আরো কিছু সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে সব কাজের ক্ষেত্রে বিপত্তির জায়গাগুলো চিহ্নিত করা, সংক্রমণের ঝুঁকিগুলো নির্ধারণ করা এবং শ্রমিকরা কাজে ফেরার পরও নির্ধারণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখা। এছাড়া প্রত্যেক খাত কর্মক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথাও বলা হয়েছে বিবৃতিতে। এক্ষেত্রে শ্রমিক, ঠিকাদার, গ্রাহকের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, ভেন্টিলেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, নিয়মিত মেঝে পরিষ্কার করা, কর্মস্থলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করা, হাত ধোয়া এবং স্যানিটাইজেশনের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ সরবরাহ করা গৃহীত এসব ব্যবস্থার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে বলে বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে।

সুপারিশগুলোয় আরো বলা হয়েছে, যেখানে প্রয়োজন সেখানে বিনা মূল্যে কর্মীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) সরবরাহ, কারো মধ্যে লক্ষণ দেখা দিলে তাকে পৃথক করা কার কার সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা কর্মীদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এছাড়া সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুশীলন এবং কর্মক্ষেত্রে পিপিইর ব্যবহারসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ, শিক্ষা তথ্য উপাদান সরবরাহ করার কথাও সুপারিশে বলা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন