চা বাগানেও হানা দিয়েছে করোনা

দেবাশীষ দেবু সিলেট

বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ধস নামিয়ে দেয়া নভেল করোনাভাইরাস এবার হানা দিয়েছে দেশের চা বাগানেও। সিলেটে সম্প্রতি কভিড-১৯ আক্রান্ত এক শিশুর () মৃত্যু হয়েছে। মৃত শিশুটি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার চণ্ডীছড়া চা বাগানের এক শ্রমিকের সন্তান। বাগানের আরো এক শ্রমিক সম্প্রতি নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। আক্রান্ত ওই শ্রমিক হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এরই মধ্যে চণ্ডীছড়া চা বাগানের ১২ বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।

দেশে ১৬৬টি চা বাগান রয়েছে। এগুলোয় কর্মরত প্রায় দুই লাখ শ্রমিক। এর মধ্যে ১৩৪টি বাগানই সিলেট বিভাগের তিন জেলার।

নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে দেশে অঘোষিত লকডাউন চলছে। বন্ধ রয়েছে সরকারি-বেসরকারি প্রায় সব প্রতিষ্ঠান। তবে এর মধ্যেই চা বাগানগুলোয় উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে। ঝুঁকি নিয়েই বাগানে কাজ করছেন শ্রমিকরা।

করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির কারণে সম্প্রতি বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বাগানের কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার দাবি জানানো হলেও তা আমলে নেয়া হয়নি। অবস্থায় চা শ্রমিকদের মজুরিসহ ছুটির দাবি জানিয়ে বিভিন্ন বাগানে বিক্ষোভও করা হয়েছে। কয়েকটি বাগানের উৎপাদন শ্রমিকরাই বন্ধ করে দিয়েছেন। অবস্থায় চা বাগানের দুজন নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে, যাদের মধ্যে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে মারা যায় চণ্ডীছড়া চা বাগানের ওই শিশু। ওইদিন বিকালেই তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল।

অন্যদিকে চুনারুঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সত্যজিৎ রায় দাশ জানান, বাগানে কাজ করতে গিয়ে নয়, বরং ঢাকায় থাকার কারণে ওই শিশুসহ দুজন নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ছিল।

ইউএনও বলেন, মৃত ওই শিশু ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিল। ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য পরিবারের সদস্যরা তাকে নিয়ে ২০ দিন ঢাকায় ছিলেন। চিকিৎসকরা আশা ছেড়ে দেয়ায় ২০ এপ্রিল পরিবারের সদস্যরা তাকে ঢাকা থেকে বাগানে নিয়ে আসেন। ঢাকা থেকে আসার কারণে ওই শিশুসহ তার পরিবারের পাঁচ সদস্যকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। সন্দেহবশত ওই পাঁচজনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ওসমানী মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়। পরীক্ষায় ওই শিশু তার এক আত্মীয়ের ফলাফল করোনা পজিটিভ আসে। এরপর বাগানের ১২টি বাড়ি লকডাউন করা হয়।

তিনি বলেন, করোনা পজিটিভ হলেও শিশুটি মূলত ক্যান্সারের কারণেই মারা গেছে। একই কথা জানিয়েছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. সুশান্ত কুমার মহাপাত্রও। তিনি বলেন, পাঁচ বছরের শিশুটি দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সার, লিভারের সমস্যাসহ বিভিন্ন অসুখে ভুগছিল। তার চোখ-মুখ ফোলা ছিল। এসব কারণেই সে মারা গেছে।

অন্যদিকে চা শ্রমিক ইউনিয়নের সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা বলেন, কেবল চিকিৎসা নয়, বাগানে অবস্থানকারী অনেকে কাজের প্রয়োজনেও বাইরে যায়। কাজ শেষে রাতে তারা আবার বাগানে পরিবারের কাছে ফিরে আসে। বাইরে কাজ করা লোকদের মাধ্যমেও বাগানে তাদের পরিবারের সদস্যরা আক্রান্ত হতে পারেন। আবার বাগানে কাজের ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব তেমন মানা হয় না। ফলে বাগানের একজন আক্রান্ত হলে তা অনেকের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

তবে সিলেটের জেলা প্রশাসক কাজী এমদাদুল ইসলাম বলছেন, চা বাগানে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কম। তিনি বলেন, বাগানে সাধারণত বাইরের লোকজন যান না। এছাড়া বাগান কর্তৃপক্ষকেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ চালাতে বলা হয়েছে। এখন বাগানের শ্রমিকরা বাইরে না এলে তাদের আক্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন