সকালে হেঁটে হাসপাতালে ভর্তি, পরদিন ভোরে ব্যাংকারের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

শনিবার সকাল ১০টায় হেঁটে রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালে গিয়েছিলেন মুজতবা শাহরিয়ার (৪০) প্রথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি করা হয় তাকে। সর্বশেষ রাত ১০টায় মোবাইলে স্ত্রীর সঙ্গে স্বাভাবিক কথাও বলেন সিটি ব্যাংক লিমিটেডের কর্মকর্তা। কিন্তু ভোর ৫টায় হাসপাতাল থেকে তার পরিবারকে জানানো হয় মুজতবা শাহরিয়ার মারা গেছেন। তার পরিবারের সদস্যরা যেন বাসাতেই থাকেন।

করোনাভাইরাস সংক্রমণেই মুজতবা শাহরিয়ারের মৃত্যু হয়েছে বলে হাসপাতাল থেকে পরিবারকে জানানো হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিধি অনুযায়ী রাজধানীর তালতলা কবরস্থানে মরদেহ দাফন করে। হাসপাতালে ভর্তি, মৃত্যু কিংবা দাফন পর্যন্ত মুজতবা শাহরিয়ারের পাশে পরিবারের কাউকে ঘেঁষতে দেয়নি কর্তৃপক্ষ। সিটি ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা এসব তথ্য বণিক বার্তাকে জানিয়েছেন।

দেশে এখন পর্যন্ত এক ডজনের বেশি ব্যাংক কর্মকর্তা করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। তবে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারীতে এই প্রথম কোনো ব্যাংক কর্মকর্তার মৃত্যু হলো। মৃত মুজতবা শাহরিয়ার সিটি ব্যাংক লিমিটেডের মানবসম্পদ বিভাগের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে কর্মরত ছিলেন। গত ২৮ মার্চ থেকেই নিজ বাসা থেকে দাপ্তরিক কাজ করছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা।

মুজতবা শাহরিয়ারের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে তার পরিবার ব্যাংকে। তিনি স্ত্রী এক মেয়ে রেখে গেছেন। সহকর্মীর মৃত্যুতে শোক জানিয়ে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাশরুর আরেফিন বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের একজন মেধাবী ব্যাংকারের মৃত্যুতে পুরো সিটি ব্যাংক পরিবার শোকাহত। গত ২৮ মার্চ থেকে তিনি নিজ বাসা থেকে দাপ্তরিক কাজ করছিলেন। গত শুক্রবার তিনি ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে আমাদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। প্রায় দুই ঘণ্টা তিনি ওই মিটিংয়ে অংশ নেন। শনিবার বিকালেও তিনি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু ভোর ৫টায় তার মৃত্যুর বিষয়টি আমাদের জন্য মর্মান্তিক।

সিটি ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা মৃতের পরিবারের উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে সর্দি-কাশি জ্বরে ভুগছিলেন তিনি। চিকিৎসকের পরামর্শে দুবার তিনি করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করিয়েছিলেন। কিন্তু দুবারই পরীক্ষার ফল আসে নেগেটিভ চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।

শনিবার সকালে তিনি আবারো মুগদা জেনারেল হাসপাতালে যান। হেঁটেই তিনি হাসপাতালে গিয়েছিলেন। করোনার সব উপসর্গ বিদ্যমান থাকায় তাকে হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি করা হয়। পরে হাসপাতাল থেকে তার পরিবারকে ফোন করে জানানো হয়, মুজতবা শাহরিয়ার করোনায় আক্রান্ত। এজন্য পরিবারের সদস্যদের হাসপাতালে আসতে বারণ করা হয়। দুপুরের পর থেকে ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেন তিনি। সর্বশেষ রাত ১০টার দিকে স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। ওই সময় তিনি কিছুটা আবেগ আপ্লুত ছিলেন বলে জানা গেছে। পরে ভোর ৫টার দিকে হাসপাতাল থেকে ফোন করে জানানো হয় মুজতবা শাহরিয়ার মারা গেছেন।

ব্যাংকার মুজতবা শাহরিয়ার কভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েই মারা গেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মাহবুবুর রহমান। হাসপাতালটির কভিড-১৯ বিষয়ক টিমের ফোকাল পার্সন হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় আমরা ওই ব্যাংক কর্মকর্তাকে হাসপাতালে ভর্তি করি। কভিড-১৯ পরীক্ষার পজেটিভ রিপোর্ট নিয়েই তিনি হাসপাতালে এসেছিলেন। তার ডায়াবেটিস ছিল। হাসপাতালে ভর্তির পরপরই তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। পরে ভোর ৫টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন