নভেল করোনাভাইরাসে (কভিড-১৯) যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের মিছিল কোনোভাবেই যেন থামছে না। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে আরো ২ হাজার ৪১৬ জন। এ নিয়ে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৫০ হাজার ৪৪২। আর নতুন করে দেশটিতে সংক্রমিত হয়েছেন ৩৪ হাজার ৮২৮ জন। এ নিয়ে মরণঘাতী ভাইরাসে দেশটিতে সংক্রমিতের সংখ্যা দাঁড়াল ৮ লাখ ৯১ হাজারে। খবর ডেইলি মেইল।
গত বছরের ডিসেম্বরের শেষে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব হয়। ধীরে ধীরে এটি বিশ্বব্যাপী মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। মাঝের সময়ে ইউরোপের দেশগুলোতে ভাইরাসটি রীতিমতো বিধ্বংসী রূপে দাপিয়ে বেড়িয়েছে। বিশেষ করে এ অঞ্চলের দেশ ইতালি, স্পেন ও ফ্রান্স মরণঘাতী ভাইরাসটির ধাক্কায় টালমাটাল অবস্থায় পড়ে। তবে এখন ধীরে ধীরে অবস্থা উন্নতির দিকে যাচ্ছে। এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রে মারণ ভাইরাসটি কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না। প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমিত ও মৃতের সংখ্যা। বিশেষ করে এ মাসের শুরু থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রমিত ও মৃতের সংখ্যা বড় আকারে বাড়তে থাকে। ১০ এপ্রিল একদিনেই রেকর্ড পরিমাণ ৩৫ হাজার ৫৭৯ জন সংক্রমিত হিসেবে শনাক্ত হয়। সব মিলিয়ে ভাইরাসটিতে সংক্রমিত ও মৃতের দিক থেকে এখন শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
হোয়াইট হাউজের প্রাক্কলন বলছে, আগামী আগস্ট পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৬৬ হাজারে। আর ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশনের প্রাক্কলন বলছে, দেশটির মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৫ হাজার ৯৭৬ জনে গিয়ে ঠেকতে পারে। যা প্রতিষ্ঠানটির আগের প্রাক্কলনের তুলনায় ৫ হাজার ৫৬১ জন বেশি। তবে বর্তমানে ভাইরাসটিতে মৃতের পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে এখনই এমন প্রাক্কলন করা কতটা বাস্তবসম্মত, সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে নিউইয়র্ক সিটি। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত নিউইয়র্ক সিটিতে মারা গেছেন ১৬ হাজার ৩৮৮ জন। আর নিউইয়র্কের নাসাউতে মারা গেছেন ১ হাজার ৪৭১ জন, মিশিগানে ১ হাজার ৩৯৬ জন, ইলিনয়েসে ১ হাজার ১৪২ জন। এছাড়া অন্যান্য অঙ্গরাজ্য ও বড় বড় শহরে মৃতের সংখ্যা ৫০০ বা হাজার ছাড়িয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পরে মৃতের দিক থেকে দ্বিতীয় শীর্ষে রয়েছে ইতালি। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ৫৪৯-এ। আর সংক্রমিতের দিক থেকে স্পেনের পর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে দেশটি। গতকাল রাত পর্যন্ত সংক্রমিতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৯৭৩-এ। অন্যদিকে স্পেনে সংক্রমিতের সংখ্যা ২ লাখ ১৯ হাজার ৭৬৪। আর মারা গেছেন ২২ হাজার ৫২৪ জন। ইউরোপের আরেক দেশ ফ্রান্স সংক্রমিত ও মৃতের দিক থেকে রয়েছে চতুর্থ অবস্থানে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দেশটিতে সংক্রমিতের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৫৯ হাজার ৪৯৫। আর মৃত্যু হয়েছে ২১ হাজার ৮৫৬ জনের।
এছাড়া সংক্রমিতের দিক থেকে শীর্ষে থাকা অন্যান্য দেশের তালিকায় জার্মানিতে শনাক্ত হয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৯৩ জন, যুক্তরাজ্যে ১ লাখ ৩৯ হাজার ২৪৬ জন, তুরস্কে ১ লাখ ১ হাজার ৭৯০ জন, ইরানে ৮৮ হাজার ১৯৪ জন। আর ভাইরাসটির মূল প্রাদুর্ভাবস্থল চীনে গতকাল পর্যন্ত সংক্রমিত হয়েছে ৮৩ হাজার ৮৮৫ জন।
অন্যদিকে মৃতের দিক থেকে শীর্ষ থাকা দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৮ হাজার ৭৩৮ জনের। এছাড়া বেলজিয়ামে ৬ হাজার ৬৭৯, জার্মানিতে ৫ হাজার ৫৭৫, ইরানে ৫ হাজার ৫৭৪, চীনে ৪ হাজার ৫১২, নেদারল্যান্ডসে ৪ হাজার ২৮৯, ব্রাজিলে ৩ হাজার ৩৪৩ ও তুরস্কে মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৪৯১ জনের। সব মিলিয়ে গতকাল রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী মারা গেছেন ১ লাখ ৯২ হাজার ১৯ জন।
এদিকে মৃত ও সংক্রমিতের দিক থেকে শীর্ষ অবস্থানে থাকলেও অর্থনৈতিক স্বার্থে চলমান লকডাউনে শিথিলতা আনার কথা ভাবছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মধ্যে ওকলাহোমা অঙ্গরাজ্যের গভর্নর শুক্রবার থেকে স্যালুন ও পোষা প্রাণীর মতো সীমিত আকারে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার কথা জানান। এছাড়া রেস্টুরেন্ট, থিয়েটারসহ অন্যান্য কিছু প্রতিষ্ঠান আগামী ১০ দিনের মধ্যে খুলে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। একই ধরনের অবস্থান নিয়েছে কলোরাডো, জর্জিয়া, সাউথ ক্যারোলাইনা, টেনেসি ও টেক্সাসের মতো অঙ্গরাজ্যও। অর্থনীতিকে বাঁচাতে চলমান লকডাউন সীমিত করার পথে হাঁটছে এসব অঙ্গরাজ্য।
আর এসব অঙ্গরাজ্যের সরকার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত এমন একটি সময় নিল, যখন এক সপ্তাহ আগে করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ হওয়া ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার জন্য গভর্নরদের রোডম্যাপ তৈরির আহ্বান জানান ট্রাম্প। চলমান মহামারীর মধ্যে মার্কিন অর্থনীতিকে বাঁচানোকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন তিনি। তার কাছে জীবনের চেয়ে অর্থনীতি এখন বড়। কারণ ট্রাম্পের ভাষায়, চলমান মহামারীতে যুক্তরাষ্ট্রে ১ লাখ মানুষের মৃত্যু হলেও সেটি হবে ‘গুড জব’।