জাপানে করোনার বলি হাজারো গোলাপ

বণিক বার্তা অনলাইন

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিস্তার ঠেকাতে মানুষকে ঘরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে বেশিরভাগ দেশের প্রশাসন। জাপানের পরিস্থিতিও এর ব্যতিক্রম নয়। অবশ্য সংক্রমণ বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে দেশে স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা জারি করলেও লকডাউন ঘোষণা করেনি টোকিও। 

এদিকে রাজধানী টোকিওর বাসিন্দাদের কেনাকাটার জন্য বাইরে বেশি বের না হওয়ার অনুরোধ করায় ঘটেছে আরেক বিপত্তি। সায়তামার পার্ক এখন মানুষের আকর্ষণের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে। সময় কাটাতে দলে দলে জড়ো হচ্ছে এখানে। তাতে সামাজিক দূরত্ব বা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার কেউ ধার ধারছেন না।

এই পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসন এক অভিনব ও আপাতদৃষ্টিতে এক নির্মম কৌশল নিয়েছে। পার্কের বাগান ভরে ফুটে থাকা গোলাপ হচ্ছে এই কৌশলের বলি।

ঐতিহ্যগতভাবে জাপানিরা ফুল খুব পছন্দ করেন। বাগান করা এদেশের মানুষের হাজার বছরের ঐতিহ্য। বসন্তের জনপ্রিয় অনুষ্ঠানগুলোতে ফুল অন্যতম উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। 

তবে এখন আশঙ্কা করা হচ্ছে, ফুলের উৎসবগুলো ভাইরাস সংক্রমণের কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। এজন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষ হাজার হাজার গোলাপকে বলিদান করছে।

দর্শণার্থীদের দূরে রাখার প্রয়াসে টোকিওর উত্তরে অবস্থিত সায়তামার ইয়োনো পার্কের শ্রমিকরা এই সপ্তাহে প্রায় ৩ হাজার গোলাপঝাড়ের কুঁড়ি কাটা শুরু করেছেন। 

সায়তামার ইওনো পার্কের গোলাপ বাগান

স্থানীয় সরকার এরই মধ্যে বার্ষিক গোলাপ উৎসবটি বাতিল করে দিয়েছে। তবে পার্কটি এখনও জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। পার্কটিতে ১৮০ প্রজাতির গোলাপের গাছ রয়েছে, এগুলো মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত ফুলে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। ফুলের মন মাতানো ঘ্রাণ ও নজর কাড়া সৌন্দর্য হাজার হাজার দর্শণার্থীদের টানে। 

স্থানীয় এক কর্মকর্তা বলছেন, কাজটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। তবে অন্য শহরগুলোর পরিস্থিতি দেখার পর আমরা এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি। সমস্ত কুঁড়ি কেটে ফেলতে প্রায় এক সপ্তাহ সময় লাগবে বলেও জানান তিনি।

জাপানে আজ শুক্রবার পর্যন্ত ১২ হাজারের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং এর মধ্যে ৩২৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ এড়াতে এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে গত ৭ এপ্রিল জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। বৃহস্পতিবার টোকিওর গভর্নর ইউরিকো কাইকো ভাইরাসটির বিস্তার রোধে রাজধানীর বাসিন্দাদের সুপারমার্কেটগুলোতে ভিড় না করতে অনুরোধ জানান। 

এভাবে গোলাপ নিধন নিয়ে কিছুটা মনক্ষুণ্ণ হলেও পরিস্থিতি মেনে নিচ্ছেন স্থানীয়রা। নিয়মিত পার্কটিতে যাতায়াত করা ৭৬ বছর বয়সী একজন বাসিন্দা স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, প্রতিবছর এখানে সেরা গোলাপগুলো দেখা যায়। আমি মনে করি এটা একটা অপচয়, তবে আমাদের কোনো বিকল্প নেই।

আরেকজন দর্শণার্থী বলেন, এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমি যখন দেখলাম তখন আমার খুব মন খারাপ হয়েছে। 

স্থানীয় এক পর্যটন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, সাপ্তাহিক ছুটিতে অনেক দর্শণার্থী এখানে এসেছিলেন। এটা বিশাল একটি সমাবেশে পরিণত হয়েছে। তাই ফুল কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়া ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় ছিল না। 

তবে কাটা ফুলগুলো অপচয় করা হচ্ছে না। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ফুলগুলো তারা স্থানীয় কিন্ডারগার্টেনগুলোতে দিচ্ছেন।

সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন