অক্সফোর্ডের করোনা ভ্যাকসিন নেয়া দুই বিজ্ঞানী

বণিক বার্তা অনলাইন

যুক্তরাজ্যে শুরু হলো মানুষের দেহে করোনা ভ্যাকসিনের প্রথম পরীক্ষা। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এই ভ্যাকসিন গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম ডোজটি দিয়েছেন একজন স্বেচ্ছাসেবীর শরীরে। আরেকজন স্বেচ্ছাসেবী নিয়েছেন মেনিনজাইটিসের ভ্যাকসিন। মূলত করোনা ভ্যাকসিনের কাযকারিতা তুলনা করতেই দুই জনকে দুই ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। 

অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন গ্রুপ এ টিকা নিয়ে খুবই আশাবাদী। এটা প্রথমজনের শরীরে ইতিবাচক ফল দিলে শনিবার আরো ছয় জনকে দেয়া হবে। এবং সোমবার থেকে এক হাজারের বেশি মানুষের শরীরে এ ভ্যাকসিন পরীক্ষার প্রক্রিয়া শুরু হবে। 

ব্রিটেনের করোনার প্রথম ভ্যাকসিন প্রথম যে দুই ব্যক্তি শরীরে নিলেন তারাও কিন্তু সাধারণ কেউ নন। করোনার ভ্যাকসিন নিয়েছেন ড. এলিসা গ্র্যানাটো। তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান বিভাগের অনুজীব বিজ্ঞানী। আর মেনিনজাইটিসের ভ্যাকসিন নিয়েছেন এডওয়ার্ড ও’নিল, তিনিও অক্সফোর্ডের একজন ক্যানসার গবেষক। তারা এই মহামারীর সময় মানুষের পাশে দাঁড়ানেরা তাগিদ থেকেই এটি করছেন। গ্র্যানাটো ভ্যাকসিন নিয়েছেন তার ৩২তম জন্মদিনে।  স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে অংশ নিতে পেরে তিনি খুবই গর্ববোধ করছেন।

গ্র্যানাটো বিবিসিকে বলেন, যেহেতু আমি ভাইরাস বিষয়ে পড়াশোনা করিনি, তাই এই সময়টাতে নিজেকে খুবই অবাঞ্ছিত মনে হচ্ছিল। এইসময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সবচেয়ে সহজ একটা উপায় বলে মনে হলো এটি।

আর ও’নিল বলেন, এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই এবং কম সময়ের মধ্যে জয়লাভ করার উপায় হিসেবে এটিই সঠিক কাজ বলে আমার মনে হয়েছে।

ভ্যাকসিন ট্রায়াল টিমের প্রধান অধ্যাপক সারা গিলবার্ট বলছেন, তিনি এই ভ্যাকসিন নিয়ে খুবই আশাবাদী। তবে এখনই নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাবে না। একাধিক ধাপে পরীক্ষায় ১ হাজার ১০২ জন স্বেচ্ছাসেবী অংশ নেবেন। অক্সফোর্ড, সাউদাম্পটন, লন্ডন এবং ব্রিস্টলে আগামী সপ্তাহেই বড় পরিসরে এটির পরীক্ষা শুরু হবে।

লিডিয়া গাথ্রি আগামী সপ্তাহেই এ কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। তিনি বিবিসি রেডিও ফোরকে বলেন, তারা (ভ্যাকসিন ট্রায়ার টিম) শুরু থেকেই স্বেচ্ছাসেবীদের সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে খোলাখুলি বলে আসছেন। আর এ কাজটি খুবই সতর্কতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ফলে প্রতিটি ধাপে আমাদের পরিষ্কার সম্মতি দিতে হয়েছে। আমাদের কেউ চাইলে যেকোনো পযায় থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিতে পারবে।

তিনি বলেন, তাকে করোনা ভ্যাকসিন বা মেনিনজাইটিস যেটিই দেয়া হোক না কেন তিনি স্বাভাবিক জীবনযাপন করবেন এবং কেমন বোধ করছেন, কী ধরনের উপসর্গ দেখা দিচ্ছে তা একটি ডায়েরিতে লিখে রাখবেন। স্বেচ্ছাসেবীদের কাজই এটি।

আরেক স্বেচ্ছাসেবী জন জুকস। অক্সফোর্ডশায়ারে উইটনির এ বাসিন্দা আগামী সোমবার ভ্যাকসিন নিতে পারেন। তিনি ডেইলি মেইলকে বলেন, আমি যেটি করছি সেটি মোটেও নায়কোচিত কিছু নয়। আমি এমন একটা কাজ করতে যাচ্ছি যা বিপুল সংখ্যক মানুষের উপকারে আসতে পারে। এ সুযোগ আমি নিতে চাই।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের গতি থামাতে সারা বিশ্বেই ভ্যাকসিন তৈরির তোড়জোড় চলছে। সাধারণত একটি ভ্যাকসিন মানুষের শরীরে প্রয়োগের জন্য উন্মুক্ত করতে দুই তিন বছর লেগে যায়। সেখানে করোনার ভ্যাকসিন এ বছরই প্রয়োগযোগ্য করার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় গবেষকরা ভ্যাকসিনের জন্য চলতি সপ্তাহে ২ কোটি পাউন্ডেরও বেশি নগদ অর্থ অনুদান পেয়েছেন। সব ঠিক থাকলে সেপ্টেম্বরের মধ্যেই কমপক্ষে ১০ লাখ মানুষকে এ ভ্যাকসিন দেয়া যাবে। ইম্পেরিয়াল কলেজ অব লন্ডনে গবেষকরাও এমনটি ভ্যাকসিন উদ্ভাবন করেছেন। সেটিও এ বছরের শেষ নাগাদ মানুষের শরীরে প্রয়োগ করা শুরু হতে পারে। তারা সরকারের যথেষ্ট পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন