একে তো বিশাল অংকের ঋণের বোঝা, তার ওপর নভেল করোনাভাইরাসের কারণে ব্যবসায় মন্দা। এ দুই প্রতিকূল স্রোতের সঙ্গে আর পেরে উঠল না ভার্জিন অস্ট্রেলিয়া। দুঃসময়ের সঙ্গে ধুঁকতে থাকা অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম আকাশসেবা সংস্থাটি শেষ পর্যন্ত ঋণখেলাপি হওয়ার দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে। কোম্পানিটি পরিচালনার ভার স্বতন্ত্র প্রশাসকের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে। খবর এএফপি ও বিবিসি।
অস্ট্রেলিয়ান স্টক এক্সচেঞ্জে দেয়া এক ঘোষণায় ভার্জিন অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, তারা তাদের ফ্লাইট পরিচালনা অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা করলেও কোম্পানিটির নীতিগত সিদ্ধান্ত এখন থেকে ভলান্টারি অ্যাডমিনিস্ট্রেটরই নেবে।
ভার্জিন অস্ট্রেলিয়ার এ পতনকে বৈশ্বিক আকাশসেবা খাতের জন্য অশনিসংকেত হিসেবে দেখা হচ্ছে। নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে তারাই সবচেয়ে বড় এয়ারলাইনার হিসেবে ভেঙে পড়ল।
এক বিবৃতিতে কোম্পানিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পল সারাহ বলেছেন, ‘ভার্জিন অস্ট্রেলিয়া গ্রুপের ভবিষ্যৎ সুসংহত রাখতেই আজ আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। করোনা সংকট কেটে গেলে আমরা আবার ফিরে আসতে চাই। অস্ট্রেলিয়ায় আমাদের মতো এয়ারলাইনারের প্রয়োজন রয়েছে। আমরা আমাদের ফ্লাইট পরিচালনা চালিয়ে যাব।’
ভার্জিন অস্ট্রেলিয়ার মাথায় রয়েছে ৫০০ কোটি অস্ট্রেলীয় ডলারের (৩২০ কোটি মার্কিন ডলার) বেশি ঋণের বোঝা। এর ওপর কোম্পানিটির আয়ও বন্ধ। নভেল করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক সংক্রমণ শুরু হতেই আকাশপথে যাত্রী চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বিভিন্ন দেশ। এতে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট চলাচলও স্থবির হয়ে পড়ে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত মাস থেকে নিজেদের সিংহভাগ ফ্লাইটই বন্ধ রেখেছে ভার্জিন অস্ট্রেলিয়া। চলমান আর্থিক সংকট নিরসনে অস্ট্রেলিয়া সরকারের কাছে ১৪০ কোটি অস্ট্রেলীয় ডলারের ঋণসহায়তা চেয়েছিল কোম্পানিটি। কিন্তু ভার্জিন অস্ট্রেলিয়ার সিংহভাগ শেয়ারহোল্ডার বিদেশী হওয়ায় এ আবেদন প্রত্যাখ্যান করে সরকার। যদিও গত মাসে অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় এয়ারলাইনারগুলোকে সাহায্যার্থে ৯০ কোটি অস্ট্রেলীয় ডলারের সহায়তা প্যাকেজের ঘোষণা দিয়েছে সরকার।
উল্লেখ্য, কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ইতিহাদ এয়ারওয়েজ (২০ দশমিক ৯৪ শতাংশ), সিঙ্গাপুর
এয়ারলাইনস (২০ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ), চীনের
নানশান গ্রুপ (১৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ) ও এইচএনএ গ্রুপ (১৯ দশমিক ৮২ শতাংশ) এবং যুক্তরাজ্যভিত্তিক ভার্জিন গ্রুপ (১০ দশমিক ৪২ শতাংশ)।
২০০০ সালের ২৯ আগস্ট ভার্জিন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ব্রিটিশ ব্যবসায়ী স্যার রিচার্ড ব্র্যানসন ও ব্রেট গডফ্রের হাত ধরে যাত্রা হয় ভার্জিন অস্ট্রেলিয়ার। গত এক দশকে কোম্পানিটি মাত্র দুবার প্রত্যাশা অনুযায়ী মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
ভার্জিন অস্ট্রেলিয়ার সহপ্রতিষ্ঠাতা রিচার্ড ব্র্যানসন এক টুইটার বার্তায় কোম্পানিটির কর্মীদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘আমি আপনাদের নিয়ে গর্বিত। এ পর্যন্ত আমাদের যা কিছু অর্জন, তা আপনাদের সঙ্গে নিয়েই হয়েছে। ভার্জিন অস্ট্রেলিয়ার যাত্রা এখানেই শেষ নয়। আমি নতুন শুরুতে বিশ্বাসী। আমি কথা দিচ্ছি, এ বিশ্বাস বাস্তবায়নে আমরা দিন-রাত পরিশ্রম করে যাব।’
ভার্জিন অস্ট্রেলিয়াকে আর্থিক সহায়তা না দেয়ায় ক্যানবেরার কড়া সমালোচনা করেছেন তিনি। ব্র্যানসন বলেন, ‘বৈশ্বিক আকাশসেবা খাতে এমন দুর্যোগ নেমে এসেছে, যা আগে দেখা যায়নি। এ অবস্থায় বেশির ভাগ দেশের সরকারই তাদের এয়ারলাইনারগুলোকে সহায়তায় এগিয়ে এসেছে।’
ভার্জিন অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন লন্ডনভিত্তিক বহুজাতিক অ্যাকাউন্টিং ফার্ম ডেলয়েটের ভন স্ট্রব্রিজ। তিনি জানিয়েছেন, ভার্জিন অস্ট্রেলিয়ার পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় অংশীদার হতে এরই মধ্যে ১০টির বেশি গ্রুপ আগ্রহ দেখিয়েছে। তিনি বলেন, ‘বেশ কয়েকটি গ্রুপ ভার্জিন অস্ট্রেলিয়ার ব্যবসা ও এর পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, শিগগিরই আমরা ইতিবাচক ফল দেখতে পাব।’
ভার্জিন অস্ট্রেলিয়া এরই মধ্যে এক হাজার কর্মী ছাঁটাই করেছে। এর ১০ হাজার পাইলটের মধ্যে চাকরি হারিয়েছেন আট হাজার জন। তবে স্ট্রব্রিজ জানিয়েছেন, প্রশাসকরা এসব কর্মী ও পাইলটের চাকরি ফিরিয়ে দিতে যথাসম্ভব চেষ্টা করবেন।
অস্ট্রেলিয়ায় পূর্ণাঙ্গ সেবাদানকারী কেবল দুটো এয়ারলাইনারই রয়েছে। একটি ভার্জিন অস্ট্রেলিয়া, আরেকটি জাতীয় পতাকাবাহী কানতাস। ফলে ভার্জিন অস্ট্রেলিয়ার পতন মানে দেশটির পুরো আকাশসেবা খাতের জন্যই বিপদ। এছাড়া তা বৈশ্বিক এভিয়েশন খাতের জন্যও হুমকিস্বরূপ নয় কি?