গার্মেন্ট শ্রমিকদের এভাবে ডেকে আনা ঠিক হয়নি : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

নভেল করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার, বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে গণপরিবহনও। পোশাক কারখানাগুলো বন্ধ ঘোষণা করায় অনেক পোশাক শ্রমিক গ্রামে চলে গিয়েছিলেন। এরই মধ্যে কারখানা খোলার ঘোষণা দিয়ে অসংখ্য পোশাক শ্রমিক ঢাকায় আসেন। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় অনেকেই পায়ে হেঁটেই ফিরেছেন কর্মস্থলে। তবে এভাবে শ্রমিকদের ডেকে আনা কোনভাবেই ঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় প্রতিরোধের লক্ষ্যে দেশব্যাপী চলমান কার্যক্রমে সমন্বয় করতে আজ সোমবার ঢাকা বিভাগের কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জ জেলা এবং ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাসমূহ ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, জামালপুর ও শেরপুর জেলার মাঠ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কাল ১০টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুপারভাইজারকে দিয়ে শ্রমিকদের ফোন করানো হলো। এভাবে শ্রমিকদের ডেকে আনা কোনোভাবেই ঠিক হয়নি। মাইলের পর মাইল হেঁটে এসেছে। অনেক বাবা তার মেয়েকে নিয়ে এসেছেন। গাড়িঘোড়া বন্ধ ছিল। শ্রমিকদের আনার ব্যবস্থা যেমন করা হবে, নেওয়ার ব্যবস্থাও করতে হবে। 

গাজীপুরে শিল্প কারখানা খোলা রাখার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, লকডাউন নিশ্চিত করে সীমিত পর্যায়ে হলেও উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হবে। সেটি কীভাবে করা যায় নিশ্চিত করতে হবে।

নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য এসব সহায়তা সঠিকভাবে পৌঁছাচ্ছে কি না, সে বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে এখন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম সীমিত। আমি আমাদের একেকজন সচিবকে একেকটি জেলা মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দিয়েছি। জেলাগুলোতে সঠিকভাবে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে কি না, অভাবী মানুষের কাছে খাদ্য পৌঁছাচ্ছে কি না, তারা সেটি দেখবেন এবং আমার কাছে রিপোর্ট করবেন।

তিনি আরও বলেন, এছাড়া আমাদের আওয়ামী লীগের নেতারা রয়েছেন। তাদের প্রত্যেককে আমি নির্দেশ দিয়েছি, সবাই দেখবেন কোনো মানুষ যেন খাবারের অভাবে কষ্ট না পায়। আমাদের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আছে, তারা এর আগে ধান কাটতেও কৃষকদের সহায়তা করেছে। তারাও এখন কাজ করছে।

তিনি বলেন, আমরা কিন্তু ধান সংগ্রহ করার ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়ে দিয়েছি। সাধারণ বোরোতে আগে যা আমরা নিতাম, তার থেকে অনেক বেশি আমরা নিচ্ছি। এখন প্রায় আমরা ৮ লাখ মেট্রিক ধান, ১০ লাখ মেট্রিক টন চাল, ২ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন আতপ এবং ৮০ হাজার মেট্রিক টন গমসহ সর্বমোট ২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য আমরা সংগ্রহ করব। এটা সরকার কিনে রাখবে। তাতে আমাদের আর ভবিষ্যতে কোনো অভাব হবে না। আমরা মানুষকে খাবার সহযোগিতা দিতে পারব। আমাদের খাদ্যের কোনো অভাব হবে না। তাছাড়া আমাদের এখন ধান উঠছে। ধান কাটাও শুরু হয়ে গেছে। আগামীতেও ফসল উঠবে। সেই সঙ্গে তরিতরকারি ফলমূল যে যা পারেন উৎপাদন করবেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ৯৫ হাজার ৬১৯ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছি। যা জিডিপির ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। কৃষিখাতে আরও বেশি। মাত্র ৪ শতাংশ সুদে আমরা কৃষি ঋণ দিচ্ছি। কৃষি মানে শুধু ধান ফলানো না। একেবারে মৎস্য, পোল্ট্রি থেকে শুরু করে ফলমূল, ফুল যা যা আছে-সবকিছু মিলেই এই প্যাকেজটা। কাজেই কোনো সেক্টর বাদ যাচ্ছে না। যে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে, তা শুধু এই বছরের জন্য না। আগামী তিন বছর দেশের অর্থনীতির চাকা যাতে সচল থাকে সেটা মাথায় রেখেই এই প্রণোদনা অব্যাহত রাখা হবে।

তিনি বলেন, আমরা চাই উৎপাদিত পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে আমাদের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। কোনো বাজারে যেন কোনো জিনিসের অভাব না হয়। হাটও বসছে। আমরা বলে দিয়েছি, খোলা বড় জায়গায় যথাযথভাবে দূরুত্ব রেখে হাট-বাজার বসবে। ক্রয়-বিক্রয় হবে। যাতে মানুষের জীবনটা একেবারে স্থবির না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা এই ব্যবস্থা নিয়েছি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন