একা এক নীলকণ্ঠ

মো. আবদুর রহিম

‘আমি নীল কণ্ঠ। নীলকণ্ঠের মত বিষ পান করেও তা হজম করতে পারি’। গণভবনে দলীয় নেতাদের সাথে এক বৈঠকে দুঃখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এ কথা বলেছিলেন। তিনি আরও বলেছিলেন, ‘আমি ব্যক্তিগত লাভের জন্য রাজনীতি করি না। আমি দেশের মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছি’ (চ্যানেল আই অনলাইন, ২৪ নভেম্বর ২০১৬)। নিজের নিয়তি আর পারিপার্শ্বিকতার সাথে সংগ্রাম করতে করতে আজ তিনি নীলকণ্ঠ। সববেদনা একাই বহন করে বাবার অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চান তিনি। 

শেখ হাসিনার জন্মই যেন ত্যাগ স্বীকার করার জন্য। পিতা শেখ মুজিব পরাধীন জাতির মুক্তির আন্দোলনে নিজেকে উৎসর্গ করলেন। তিনি সংসারের খবর কোনদিনই রাখেননি। সন্তানরাও প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হয়েছেন বাবার স্নেহ -ভালবাসা থেকে। বঙ্গবন্ধুর আত্ম-জীবনীতে তার কিছুটা আভাস মেলে। একবার জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর বঙ্গবন্ধু বাড়ি গেলেন। ‘সকলেই খুশী। মেয়েটা তো কোল থেকে নামতেই চায় না, আর ঘুমাতেউ চায় না’ (অসমাপ্ত আত্ম-জীবনী, পৃ.১৪৬)। প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনার বেড়ে ওঠার দিনগুলিতে বঙ্গবন্ধু হয় জেলে না হয় সাংগঠনিক কাজে  দেশের এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছেন। জেলখানাই ছিল বাবার বাড়ি (রাসেলের ভাবনায়)। কাজেই সংসারের বড় সন্তান শেখ হাসিনা ছিলেন ছোট ভাই-বোনদের সকল আবদার আর ভরসার জায়গা। মা’রও সুখ-দুঃখের সাথী তিনি। ১৯৫২ সালে জেলে বন্দী অবস্থায় অনশন করেন বঙ্গবন্ধু। মৃত্যুর অতি সন্নিকটে দাঁড়িয়ে ‘হাচিনা’ আর কামালের নিঃপাপ মুখ স্মরণ করে একবার দেখার সাধ জাগে মনে (অসমাপ্ত আত্ম-জীবনী, পৃ.২০৫)। অবুঝ সন্তানের চেহারা মনে করে হৃদয়ের মধ্যে হাহাকার করে বটে। তবু তিনি দেশের তরে জীবন দিতে প্রস্তুত। শোষকদের কাছে মাথা নত করেননি। তাঁর অনমনীয় মনোভাব আর ক্রমবর্ধমান জনমতের চাপে সরকার শেখ মুজিবকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। স্ট্রেচারে করে বঙ্গবন্ধুকে জেল থেকে বের করা হয়। এ যাত্রা প্রায় আড়াই বছর পর বাড়ি ফেরেন বঙ্গবন্ধু। ‘হাচু আমার গলা জড়িয়ে ধরে প্রথমেই বলল, রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই। রাজবন্দিদের মুক্তি চাই’(অসমাপ্ত আত্ম-জীবনী, পৃ.২০৭)। ঐ ধাতুতেই গড়া শেখ হাসিনা। 

বাবার সংগ্রাম জাতির মুক্তির জন্য আর মা’র সংগ্রাম পরিবার সামলানো। সংসার সামালিয়ে স্বামীর রাজনৈতিক সংগ্রামকে নির্বিঘœ রাখার জন্য সাধ্যমত পয়সার যোগানও দিচ্ছেন তাঁর মা। শুধু কি তাই, বঙ্গবন্ধু জেলে থাকাকালে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দিকনির্দেশনা এবং আর্থিক সাহায্য সহযোগিতাও তাকে করতে হতো। বাঙালির ঠিকানায় পরিণত হওয়া ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বরের ঐতিহাসিক বাড়িটিও তাঁর মা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবই কিভাবে করেছিলেন তা তিনি প্রত্যক্ষ করেন। বত্রিশ নম্বরের ঐ ভবনটিকে বাড়ি না বলে রাজনৈতিক কার্যালয় বলাই শ্রেয়। এটি ছিল একদিকে বাঙালির রাজনৈতিক দর্শনের পাঠশালা অন্যদিকে আটপৌরে বাঙালি জীবনের এক আদর্শ চিত্রপট। পূর্ববাংলার অধিকার বঞ্চিত মানুষের সব পথ যেন এই বাড়িতে এসে মিলিত হয়েছে। এখানেই তিনি মানবতার জননীর প্রাথমিক পাঠ গ্রহণ করেন। অন্যদিকে আত্ম-প্রত্যয়ী রাজনৈতিক নেতৃত্বেরও বিকাশ ঘটে তাঁর মধ্যে।  

তবে তিনি এমনই এক হতভাগা কন্যা যিনি শৈশবে বাবার আদর-স্নেহ থেকে বঞ্চিত ছিলেন। বিয়ের সময়েও বাবা কারাগারে থাকায় বাঙালি সমাজের চিরায়ত পারিবারিক এই আবেগঘন মুহূর্তেও কাছে পেলেন না বাবাকে। বাবা হয়ত জেলে বসেই হৃদয়ের গভীরতম অনুভবে আদরের ‘হাচুর‘ জন্য সুখ-শান্তি কামনা করে দু’ফোটা অশ্রু বিসর্জন দিয়েছিলেন। বাবার অনুপস্থিতিতে অতি আদরের আত্মজার হৃদয়েও রয়ে গেল অব্যক্ত এক শূন্যতা। 

 বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর আরেক সংগ্রাম। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন আর সব হারানো সাড়ে সাত কোটি মানুষের মুখে দু’বেলা দুমুঠো খাবার জুটানোর ভার তাঁর ওপর। রাত্রির অন্ধকার পেরিয়ে সবে মাত্র সোনালী সুর্যের রক্তিম আভা দেখা যায় বাংলার আকাশে। মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে দেশের সমস্ত অঙ্গকে সূদৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড় করান তিনি। বত্রিশ নম্বরের বাড়িটিও মুখরিত হয় আনন্দের কলরোলে। ১৯৭৫ সালের জুলাই মাসের ১৪ তারিখ শেখ কামালের, ১৭ তারিখ শেখ জামালের বিয়ে এবং সর্বশেষ ২৭ তারিখ বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজিব ওয়াজেদ জয়ের জন্ম দিন পালন ছিল শেখ পরিবারের শেষ মিলনমেলা। শেখ হাসিনা ৩০ জুলাই দুই সন্তান আর বোন রেহানাকে নিয়ে জার্মানীতে গমণ করেন। কে জানত যে, জুলাইয়ের ঐ মিলনই ছিল অনন্তের দিকে যাত্রার পূর্বে একে অপরের থেকে শেষ বিদায় নেওয়ার এক উপলক্ষ মাত্র। শেখ হাসিনা বুঝতেও পারলেন না কিভাবে এক রাতের ঝড়ে তাঁদের সুখের আনন্দ-আশ্রম একেবারে লন্ডভন্ড হয়ে গেল। সর্বস্ব হারিয়ে শেখ হাসিনা ছোট বোনকে নিয়ে শুরু করলেন অন্য এক সংগ্রাম। 

হঠাৎই যেন সব অচেনা লাগে। ‘কাছের’ মানুষেরা মুখ ফিরিয়ে নিলেন। যে দেশের মানুষের জন্য নিজের জীবন দিলেন পিতা। পরিবারসহ সর্বস্ব হারালেন। সে দেশে দু’বোনের জন্য একটু জায়গা হলো না। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে শেখ মুজিবের জীবন বাঁচাতে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী সম্ভাব্য সব কিছু করেছিলেন। এবারও তিনি দুই অনাথ কন্যার দায়িত্ব নিলেন। পাঁচ বছর ভারতের আশ্রয়ে থেকে অনেক বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালের ৩১ মে দেশে ফিরে হাল ধরলেন আওয়ামী লীগের। ক্ষতবিক্ষত রুগ্ন আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠন এবং নব্বইয়ে এরশাদের পতন ঘটিয়ে দেশকে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনলেন। ১৯৯৬ সালে দলকে একুশ বছর পর ক্ষমতায় আনলেন। দেশকে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ফিরিয়ে আনলেন। একুশ বছরের পশ্চাৎপদতা অতিক্রম করে দেশ সামনে সামনে চলতে শুরু করে। কিন্তু ২০০১ সালের নির্বাচনের পিএনপি জামাত ক্ষমতায় এলে দেশের চাকা আবার উল্টোপথে চলতে শুরু করে।   

বিএনপি-জামাত জোট সরকার এবার আওয়ামী লীগের ওপর চরম আঘাত হানে। বাংলা ভাই, হরকাতুল জেহাদ আল ইসলামী ইত্যাদি নামে-বেনামে গুপ্তঘাতক সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটে। সরকারী ও বিএনপি-জামাতের দলীয় পৃষ্ঠপোষকতায় শেখ হাসিনাসহ পুরো আওয়ামী লীগকে নিঃচিহ্ন করার প্রচেষ্টা করা হয়। বিএনপি-জামাত জোট সরকারের চরম দুর্ণিীতি আর মুজিব আদর্শে বিশ্বাসীদের নির্বিচারে হত্যা, জেল-জুলুম এবং নির্যাতনের কারণে আইন শৃংখলার চরম অবনতি ঘটে। ষড়যন্ত্রের ওয়ান ইলেভেনের প্লট প্রস্তুত হয়। তৈরি হয় দেশকে বিরাজনীতিকরণের নীলনকশা। দেশী-বিদেশী, সুশীল-কুশীল কুশিলবদের তৎপরতা যায় বেড়ে। আওয়ামী লীগের নেতাদের ধরে মিথ্যা শিকারোক্তি আদায়ের জন্য যৌথ বাহিনীর ইন্টারোগেশন সেলে অমানসিক নির্যাতন শুরু হয়। নেতাদের বাঁচানোর জন্য সব দায় এবারও নিজের ঘাড়ে নিলেন। নির্দেশনা দিলেন ওরা যা বলতে বলে বলে দাও। জীবন বাঁচাও। গ্রেফতার করা হয় শেখ হাসিনাকে। মঞ্চস্থ হয় নাটক। হঠাৎ করে রঙ্গমঞ্চে আবির্ভূত হন তথাকথিত ঘুষদাতারা। ক্ষমতায় ছিল খালেদা জিয়া আর দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয় শেখ হাসিনাকে। হায়রে বাঙালি! জাতির পিতাকে দৈহিকভাবে হত্যা করেও যখন তাঁর চেতনাকে ধ্বংশ করা যায়নি, এবার নিঃচিহ্ন কর বাঙালির ঐক্যের প্রতীক বঙ্গবন্ধুর রক্তধারাকে । শেখ হাসিনা চোর বটে! আওয়ামী লীগের বাঘা বাঘা নেতারা একদা যারা নেত্রীর জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত ছিলেন তারাই শেষে এত দিনে অর্জিত রাজনৈতিক সম্ভ্রম বিসর্জন দিলেন। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যা যা বলতে বললেন তোতা পাখির মত বলে দিলেন সবই। কিন্তু সমস্ত রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধুর ন্যায় হিমালয়ের মত অটল ছিলেন শেখ হাসিনা। তাঁর অনমনীয় দৃঢ়তা আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের প্রতিবাদ আন্দোলনের কারণে জাতি আবার ঘুরে দাঁড়ানোর প্রেরণা পায়।

পরবর্র্তী ইতিহাস সকলেরই জানা। আওয়ামী লীগের দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসা, উৎখাদের চেষ্টায় বিডিআর বিদ্রোহ, বিএনপি-জামাত কর্তৃক দশম জাতীয় নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা, পরবর্তীতে লাগাতার ধর্মঘট কর্মসূচি, অগ্নি-সন্ত্রাস, সুশীলদের চাপ খালেদা জিয়াকে টেলিফোন করে অসৌজন্য আচরণের শিকার হওয়া, কোকোর মৃত্যুতে সমবেদনা জানাতে গিয়ে অপমানিত হওয়া, এসব জাতি আজ ভুলে গেছে। জনগনের সুখের জন্য সব বিষ তিনি একাই হজম করেছেন নিরবে। তাঁর সকল ত্যাগের পেছনে একটিই লক্ষ পিতার কাক্সিক্ষত সোনার বাংলা বিনির্মাণ। 

শেখ হাসিনার হাতে বাংলাদেশ এক অন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। তিনি এক স্বপ্নের ফেরিওয়ালা। তিনি যখন স্বপ্নের কথা বলেন, লোকেরা ভাবেন কল্পকাহিনী। ডিজিটাল বাংলাদেশ, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু, বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, মেট্রোরেল, কর্ণফুলি নদীর তলদেশে টানেল, গভীর সমূদ্র বন্দরের মত বড় বড় প্রকল্পের কথা তিনি যখন বলেছিলেন বাঘা বাঘা সব অর্থনীতিবিদরা এসব অবাস্তব বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। অনেকে হেঁসেছিলেন। আওয়ামী লীগের অনেক সমর্থকরাও ভেবেছিল এসব রাজনৈতিক কথা। ডিজিটাল বাংলাদেশের শ্লোগান নিয়ে কত হাসাহাসিই না হয়েছিল? কিন্তু এসব আজ আর কল্পনা নয়, বাস্তব। 

বঙ্গবন্ধু যেমন বাঙালিকে জাতীয়তাবাদী চেতনায় উজ্জীবিত করে দেশকে স্বাধীন করেছিলেন। শেখ হাসিনা এ দেশের মানুষকে আত্মশক্তিতে বলিয়ান করে দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে গেছেন। এখন বাংলাদেশ ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে দাতা খোঁজে না, উন্নয়ন সহযোগী খোঁজে সমমর্যাদার ভিত্তিতে। এ দেশ আজ সহযোগিতার হাত বাড়াতেও পারে। পরবর্তী লক্ষমাত্রা অর্জন সময়ের ব্যাপার মাত্র। 

অনেক জানা-অজানা শত্রুর মোকাবেলা করে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে বাংলাদেশকে আজ বিশ্বের দরবারে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন করতে পেরেছেন। কিন্তু হঠাৎই দেশ আজ মহাসংকটের মুখোমুখি। আজকের শত্রু অদৃশ্যমান। একই শত্রু আজ পুরো পৃথিবীর জনজীবনকে থামিয়ে দিয়েছে। পৃথিবীর প্রথম সারির রাষ্ট্রগুলিও আজ নাস্তানাবুদ। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের জন্য এটা এক ভয়াবহ হুমকি। অনেক দেশের রাষ্ট্র নায়কেরা আজ পরিস্থিতি শামাল দিতে না পেরে ব্লেম-গেমে জড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু তিনি প্রত্যয়ে অবিচল থেকে ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি শামাল দিয়ে চলেছেন। রাতদিন একাকার করে তিনি মানুষকে রক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা রাখার জন্য প্রতিদিনই তিনি মাঠ প্রশাসনের সাথে মিটিং করছেন। জনগণের জীবন বাঁচাতে কোয়ারেন্টাইনে পাঠিয়ে তিনি নিজে ঝুকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রনোদনা, উৎসাহ-উদ্দিপনা দিয়ে তিনি পালায়নপর স্বাস্থ্য কর্মীদের কাজে ফিরিয়ে আনছেন। অদ্যাবধি শিল্প-কলকারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রায় এক লক্ষ কোটি টাকার প্রনোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। ঘরবন্দী মানুষের কাছে খাদ্য পৌছে দেওয়ার জন্য সব ধরনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। 

কিন্তু যার যা দায়িত্ব সেটা কি সঠিকভাবে প্রতিপালিত হচ্ছে? অন্য রাজনৈতিক দলের কাছে কিছু আসা করা যায় না সমালোচনা ছাড়া। সারা দেশে ৬৭ হাজার ৭৫০ জন নির্বাচিত প্রতিনিধি, আওয়ামী লীগের এতবড় সাংগঠনিক কাঠামো থাকা সত্বেও ত্রাণ ব্যবস্থাপনায় সমন্বয়হীনতা কেন দেখা দিবে?  কিছু কিছু মন্ত্রী আজ হাসির খোরাকে পরিণত হয়েছেন। দেশের এই সংকটময় মুহুর্তে যদি ত্রাণের চাল চুরির খবর আসে, এত এত প্রণোদনা ঘোষণার পরেও যদি হাজার হাজার গার্মেন্টস কর্মীদের ঢাকায় নিয়ে আসা হয়, দুই মাস ধরে প্রস্তুতি নেওয়ার পরেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাস্যকর সব তথ্য প্রদান করেন, ঘরে থাকার জন্য জাতীয় ছুটি ঘোষণার পরে যখন লোকেরা পিকনিকের মুডে বাস ট্রেনে গাঁদাগাদি করে বাড়িতে ফেরেন, লকডাউন দেখার জন্য লোকেরা দলে দলে রাস্তায় বের হয়ে আসেন, সৌদি আরবের মসজিদ আল হারামে জামাত যেখানে বন্ধ রয়েছে, সেখানে কোন এক জানাজার নামাজে যদি লক্ষ মানুষের জমায়েত হয় তখন আমাদের কান্ডজ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। 

পরিশেষে এ কথা বলব, যে কোন সংকটকালীন সময়ে ঘোলা জলের মাছ শিকারীরা ওৎপেতে থাকে। পরিস্থিতি সঠিকভাবে সামলানো না গেলে কেউ নিরাপদ থাকবে না। আইনশৃংখা পরিস্থিতির অবনতি, খাদ্য ঘাটতি, রাজনৈতিক সংকট সব কিছুর কথাই মাথায় রেখে কাজ করতে হবে। পরিস্থিতি অন্যরকম হলে চুরির চাল খাওয়ার সময় পাবেন না, মজুদদারী, প্রনোদনা কিংবা মাস্ক ব্যবসার টাকাটা কবরেও নিতে পারবেন না। সকলকে মানবিক মন নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের নিজেদের বোধোদয় না হলে একা এক শেখ হাসিনার পক্ষে এই জাতিকে মানুষ করা সম্ভব হবে না।  

মো. আবদুর রহিম, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী প্রক্টর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সাবেক সেক্রেটারি, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি
[email protected]

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন