চলতি বোরো মৌসুম

চাহিদার অর্ধেক কৃষিযন্ত্রও পাচ্ছেন না কৃষক

সাইদ শাহীন

নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে শ্রমিকের সংকট দেখা দেয়ায় চলতি বোরো মৌসুমে দ্রুত ধান কাটার জন্য সারা দেশ থেকে প্রায় হাজার ৫৭০টি কম্বাইন হারভেস্টার রিপার মেশিনের চাহিদা আসে। কিন্তু প্রথম ধাপে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়ার কারণে মাত্র হাজার ২০৩টি এবং আরো ১০০ কোটি টাকার বরাদ্দ পাওয়া সাপেক্ষে দ্বিতীয় ধাপেও একইসংখ্যক যন্ত্র দেবে কৃষি মন্ত্রণালয়। ফলে দুই ধাপে মিলে চাহিদার অর্ধেক কৃষিযন্ত্রও পাচ্ছেন না কৃষক। 

জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে ধান কাটাসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রমের জন্য যন্ত্রের চাহিদা নিরূপণ করে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এজন্য প্রায় হাজার ৬২৯টি কম্বাইন হারভেস্টার হাজার ৯৪১টি রিপারের চাহিদা আসে। সারা দেশের কৃষক পর্যায় থেকে কৃষিযন্ত্রের ধরনের চাহিদা আসতে পারে সেটি বিবেচনায় নিয়ে আগে থেকেই অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বরাদ্দ চেয়েছিল কৃষি মন্ত্রণালয়। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় প্রথম ধাপে মাত্র ১০০ কোটি টাকা অনুমোদন করে। পর্যাপ্ত অর্থ না পেয়ে বরাদ্দকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কৃষি মন্ত্রণালয়। সে লক্ষ্যে সারা দেশে ৮০৩টি কম্বাইন হারভেস্টার ৪০০টি রিপার মেশিন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কৃষি মন্ত্রণালয়, যা চাহিদার মাত্র ২২ শতাংশ। তবে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরো ১০০ কোটি টাকা অনুমোদন করেছেন কৃষি যান্ত্রিকীকরণ খাতে। ফলে সেটি হলে আরো ২২ শতাংশ চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। সব মিলিয়ে চাহিদার প্রায় ৪৪ শতাংশ মেটানো সম্ভব হবে। তবে চলতি বোরো মৌসুমে যাতে কোনো ধরনের সংকট তৈরি না হয়, বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী। 

কৃষিমন্ত্রী . মো. আবদুর রাজ্জাক বিষয়ে বলেন, নভেল করোনাভাইরাসজনিত পরিস্থিতিতে কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখা, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ এবং কৃষিপণ্যের বাজারজাত বিপণনে গুরুত্ব দিয়ে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। নভেল করোনাভাইরাসের কারণে বোরো ধান কাটার শ্রমিকের সংকটের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কৃষি যান্ত্রিকীকরণে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপের ১০০ কোটি টাকার মাধ্যমে কম্বাইন হারভেস্টার রিপারসহ বিভিন্ন কৃষি যন্ত্রপাতি কৃষকের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। পরবর্তী সময়ে অবশিষ্ট ১০০ কোটি টাকা দিয়ে সমপরিমাণ কৃষি যন্ত্রপাতি অচিরেই কৃষকের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে। হাওড়ের কার্যক্রম নির্বিঘ্ন করতে জরুরি ভিত্তিতে নতুন ১৮০টি কম্বাইন হারভেস্টার ১৩৭টি রিপার সরবরাহের বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া মাঠ পর্যায়ের সব কৃষি কর্মকর্তার ছুটি বাতিল করে কৃষকের সঙ্গে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, চলতি মৌসুমে প্রায় ৪৫ লাখ হেক্টর জমিতে প্রায় কোটি লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এরই মধ্যে হাওড় অঞ্চলে ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে দেশের প্রায় ২৬টি জেলায় বিভিন্ন মাত্রায় কৃষি শ্রমিকের সংকট দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি জেলা কৃষি শ্রমিকের তীব্র সংকট রয়েছে। আবার উদ্বৃত্ত অঞ্চলগুলো থেকে পর্যাপ্ত শ্রমিক আসতে পারছে না। তবে কৃষি মন্ত্রণালয় শ্রমিক সংকট মেটাতে তালিকা তৈরি করছে। তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠাচ্ছে স্থানীয় পর্যায়ের কৃষি অফিস। এছাড়া নতুন যন্ত্রের চাহিদা মেটানো হচ্ছে। পাশাপাশি যেসব অঞ্চলে আংশিক সচল যন্ত্র রয়েছে, সেগুলোকে দ্রুত মেরামত করা হচ্ছে। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) খামার যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শেখ মো. নাজিম উদ্দিন প্রসঙ্গে বলেন, স্বাভাবিক শ্রমিক সংকট বিবেচনায় নিয়েই সারা দেশ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি যন্ত্রের চাহিদা এসেছে। অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় চাহিদা চলে আসে। কিন্তু বর্তমান করোনা পরিস্থিতি যুক্ত হওয়ার কারণে যন্ত্রের চাহিদা আরো বেড়েছে। আবার এসব যন্ত্র কৃষকের কাছে সময়মতো বিশেষ করে কাটার আগেই পৌঁছাতে হবে। বোরো মৌসুম শেষ হয়ে গেলে তখন দীর্ঘ সময়ের জন্য চাহিদা শূন্যে থাকবে।

জানা গেছে, হাওড় অঞ্চলে ধান কাটা শুরু হলেও শ্রমিকের অভাবে স্বল্পসংখ্যক শ্রমিক মাঠে কাজ করছেন। আবার ধান কাটার সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে নানাবিধ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তাই অনেক ক্ষেত্রেই নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। সেক্ষেত্রে কৃষিযন্ত্র অনেকটাই নিরাপদ। তাই কৃষিযন্ত্রের বরাদ্দ আরো বাড়ানো প্রয়োজন। এতে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি মোকাবেলা করেই দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল বণিক বার্তাকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বোরো ধানের জন্য যন্ত্র শ্রমিকের প্রয়োজনীয়তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আগের বরাদ্দকৃত অর্থের মাধ্যমে যন্ত্র কৃষক পর্যায়ে ছাড়করণ করা হয়েছে। নতুন করে আরো ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। সেটির এখনো জিও হয়নি। জিও হলেই আমরা দ্রুত কৃষকের কাছে মেশিন পৌঁছে দেব। বেসরকারি পর্যায়ে মেশিন বিপণনকারীদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। যন্ত্র শ্রমিকের যৌথ প্রয়াসেই এবারের বোরো মৌসুমের ধান কাটা সম্ভব হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ভালোভাবেই ধান কৃষকরা ঘরে তুলতে পারবেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন