ত্রাণের অপব্যবহার বরদাশত করা হবে না: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

ত্রাণ বিতরণে কোনো ধরনের অপব্যবহার বরদাশত করা হবে না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ত্রাণের অপব্যবহার আমরা বরদাশত করব না। ত্রাণ দেয়া নিয়ে কোনো সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। এর সঙ্গে যে- জড়িত, তার বিরুদ্ধে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি, ব্যবস্থা নেব। সেটা আমার দলেরই হোক বা অন্য দলেরই হোক, আমরা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। গতকাল করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ কল্যাণ তহবিলে অনুদান গ্রহণকালে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা।

প্রত্যেক মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিতে সরকারের নেয়া ব্যবস্থার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গরিব মানুষের জন্য আমরা যে সহায়তা দেব, কেউ এর অপব্যবহার করবে, এটা আমরা বরদাশত করব না। কয়েকটা জায়গায় সমস্যা পেয়েছি, তা খুব বেশি না। আমরা যদি তুলনা করি, আমাদের ৬৮ হাজারের মতো নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছেন বিভিন্ন এলাকায়। চার হাজারের ওপর ইউনিয়ন, এরপর উপজেলা রয়েছে। সব হিসাব করে দেখা গেল, হয়তো পাঁচ-সাত জায়গায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমরা তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাও নিয়েছি।

মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে একটা শ্রেণী শুধু সরকারের সমালোচনা করে যাচ্ছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা দেখতে পাচ্ছি, অনেকে অনেক কথা বলে বেড়াচ্ছেন, অনেক দল-মত, সুশীল সমাজ বা অনেকেই। তারা কিন্তু মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসছেন না। সমালোচনা করতেই ব্যস্ত। তারা কিন্তু একটা মানুষকেও একটি পয়সা দিয়ে সাহায্য করছেন না। মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন না। কিন্তু তাদের কথাটা বিক্রি করেই যাচ্ছেন। ধরনের লোক থাকবেই, সব সমাজেই থাকে। তারা কথা বেচেই যাবেন, এটাই তাদের প্রফেশন। এটাই তারা করে যাচ্ছেন। এত কথা না বলে কয়েকটা মানুষকে সাহায্য করেন। দুঃখের সময় মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ান। মানুষকে নিজে কতটুকু দিলেন সে হিসাবটা করুন।

সরকার দায়িত্বের বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন আছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আমাদের দায়িত্ববোধ সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন এবং সেটা আমরা কার্যকর করে যাচ্ছি। চিকিৎসাসেবা দিয়ে

যাচ্ছি। চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিটি সদস্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। সমগ্র বাংলাদেশব্যাপী আমাদের যে নেতাকর্মী তাদেরও আমরা নির্দেশ দিয়েছি। তারাও মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। সরকারিভাবে যা দেয়া হচ্ছে, তার পাশাপাশি বেসরকারিভাবে যে যতটুকু পারছেন সাহায্য করে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, সাধারণ মানুষকে যেমন বিনা মূল্যে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছি, তেমনি ১০ টাকা কেজি মূল্যে ওএমএসের মাধ্যমে চাল সরবরাহের ব্যবস্থা করেছি। যারা তালিকার বাইরে রয়েছেন, তাদের জন্য আমরা কার্ড তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি। প্রতিটি মানুষ যেন সহায়তা পায়, সেটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। যাতে প্রত্যেকের ঘরে ত্রাণ সহযোগিতাটা পৌঁছে যায়। রাতে বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। যাতে করে কেউ ভিড় না করে। একসঙ্গে জমা না হয়। নতুন করে কেউ যাতে সংক্রমিত না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

ত্রাণ সহযোগিতায় এগিয়ে আসা ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানকে আন্তরিক ধন্যবাদ দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রশাসনের মাধ্যমে সমন্বিতভাবে ত্রাণ বিতরণের পরামর্শ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, এক জায়গায় জড়ো হওয়া বা ভিড় করে ত্রাণ বিতরণ করবেন না। এর ফলে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে। যারা সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন তারা সরকার, প্রশাসন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় ত্রাণটা বিতরণ করেন, যাতে লোক সমাগম না হয়। প্রত্যেকটি এলাকায় কমিটি করে দিয়েছি, স্বেচ্ছাসেবকরা রয়েছেন। তাদের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ করলে সবাই পাবে। কেউ বাদ যাবে না।

তিনি বলেন, আজকের যে দুঃসময়, সেটা একদিন কেটে যাবে বাংলাদেশ আবারো এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশ জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবেই ইনশাআল্লাহ আমরা গড়ে তুলব।

করোনা পরিস্থিতিতে ক্ষতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নভেল করোনাভাইরাস আসার পর অর্থনৈতিক গতিধারা কিছুটা শ্লথ হয়ে গেছে। শুধু বাংলাদেশ না, বিশ্বব্যাপীই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। নভেল করোনাভাইরাসে সমগ্র বিশ্ব বলতে গেলে স্থবির হয়ে আছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে, মানুষকে সুরক্ষিত করতে হবে, পরিবারকে সুরক্ষিত করতে হবে। সে কারণে আহ্বান জানিয়েছি পরিবার নিয়ে একসঙ্গে থাকুন সেটা ঠিক আছে, কিন্তু বাইরের লোকের সঙ্গে না মেশার বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। যেখানে লোক সমাগম সেখানে না যাওয়া, নিজেকে সুরক্ষিত করা নিজেকে সুরক্ষিত করার সঙ্গে সঙ্গে অপরকেও সুরক্ষিত করা। সেই দায়িত্ব সবাইকে পালন করতে হবে। আমি জানি এটাতে অনেকের কষ্ট হচ্ছে।

গতকাল ৩৩টি ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অনুদান হিসেবে নগদ অর্থ পিপিই প্রদান করেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তার পক্ষে মুখ্য সচিব . আহমদ কায়কাউস এসব অনুদান গ্রহণ করেন। সময় ভিডিও কনফারেন্সে গণভবন প্রান্ত থেকে সংযুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। 

আর্থিক অনুদান প্রদানকারী ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছেযুব ক্রীড়া মন্ত্রণালয়; পরিবেশ, বন জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়; গৃহায়ন গণপূর্ত মন্ত্রণালয়; স্থানীয় সরকার বিভাগ; পল্লী উন্নয়ন সমবায় বিভাগ; ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল); ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; বিইউপি; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটি; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়; কাশেম ট্রাস্টের চেয়ারম্যান এমএ কাশেম; সংসদ সদস্য জিল্লুল হাকিম; বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন; বিসিএস কর অ্যাসোসিয়েশন; ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স (আইইবি); ঢাকা ক্লাব; বিএসআরএম গ্রুপ; সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড; উত্তরা গ্রুপ, টেক্সকোটেক; হামদর্দ ফাউন্ডেশন; গান বাংলা; শাওমি টেকনোলজিস বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড; ইস্পাহানি টি লিমিটেড; সিদ্ধেশ্বরী বালিকা বিদ্যালয়; আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশন; চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স; আইডিইবি; ইইডি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি।

এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ কল্যাণ তহবিলে পিপিই অনুদান প্রদান করে ওলিলা গ্লাস ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড জাহাঙ্গীর আলম সরকার। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় এর আগেও কয়েকটি ধাপে বিভিন্ন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ কল্যাণ তহবিলে অনুদান প্রদান করেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন