মার্কিন এয়ারলাইনস খাতে আড়াই হাজার কোটি ডলারের প্যাকেজ

বণিক বার্তা ডেস্ক

নভেল করোনাভাইরাসের কারণে ভ্রমণে বড় পতনের ফলে দেশের ১০টি বৃহৎ উড়োজাহাজ সংস্থার জন্য হাজার ৫০০ কোটি ডলার বরাদ্দ করছে যুক্তরাষ্ট্র। উদ্ধার প্যাকেজ থেকে যে উড়োজাহাজ সংস্থাগুলো অর্থ পেতে যাচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে আমেরিকান এয়ারলাইনস, ইউনাইটেড, ডেল্টা সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইনস। খবর বিবিসি। 

উদ্ধার প্যাকেজে বরাদ্দকৃত অর্থ কর্মীদের বেতনের জন্য ব্যবহার করতে হবে এবং তা স্বল্পব্যয়ী ঋণ সরাসরি অনুদানের সংমিশ্রণের মাধ্যমে সরবরাহ করা হবে। গত মাসে কংগ্রেসে পাস হওয়া ট্রিলিয়ন ডলার ত্রাণ তহবিলের অংশ হিসেবে সহায়তার পরিকল্পনা করেছিল কিন্তু চুক্তি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিল এয়ারলাইনসগুলো। 

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়ের বর্ণিত শর্ত অনুযায়ী, বেতনের জন্য প্রদত্ত তহবিলের ৩০ শতাংশ ফেরত দিতে হবে প্রধান উড়োজাহাজ সংস্থাগুলোকে। একই সঙ্গে জরুরি সহায়তা আইন পাসের সময় কংগ্রেস শর্তগুলোও অন্তর্ভুক্ত করে, যেখানে আগামী সেপ্টেম্বর নাগাদ কর্মীদের অনিচ্ছাকৃত ছুটিতে পাঠানো এবং তাদের বেতন অন্যান্য সুবিধা কমানো যাবে না। শর্তানুসারে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর নাগাদ শেয়ার পুনঃক্রয় এবং আগামী ২০২২ সালের মার্চ নাগাদ নির্বাহীদের বেতন সীমিত করা হয়েছে। 

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মানিউচিন মঙ্গলবার জানান, উড়োজাহাজ সংস্থাগুলোর সঙ্গে চুক্তিটি আমেরিকান শ্রমিকদের সহায়তা এবং উড়োজাহাজ সংস্থার কৌশলগত গুরুত্ব সুরক্ষা করবে। তিনি আরো বলেন, প্রয়োজনীয় চুক্তিগুলো চূড়ান্ত করতে এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তহবিল সরবরাহের জন্য উড়োজাহাজ সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করতে মুখিয়ে আছি।

উড়োজাহাজ সংস্থাগুলোর তহবিল নিশ্চিতের খবরে শেয়ারদরে উল্লম্ফন লক্ষ্য করা গেছে। আমেরিকান এয়ারলাইনসের শেয়ারদর বেড়েছে শতাংশ এবং ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের শেয়ারদর বেড়েছে শতাংশ। 

আমেরিকান এয়ারলাইনসের শীর্ষ কর্তা ডগ পার্কার আশা করেন, হাজার কোটি ডলারেরও বেশি অর্থ পেতে যাচ্ছে তার কোম্পানিটি। এর মধ্যে ৫৮০ কোটি ডলার পাচ্ছে কর্মীদের বেতন তহবিল হিসেবে। বেতন তহবিলের ৪১০ কোটি ডলার অনুদান হিসেবে পাচ্ছে আমেরিকান এয়ারলাইনস। সরকারের অন্যান্য কর্মসূচির মাধ্যমেও কোম্পানিটি ঋণ আবেদন করবে বলে জানান পার্কার। 

অন্য উড়োজাহাজ সংস্থাগুলোর মধ্যে সাউথওয়েস্ট পাচ্ছে ৩২০ কোটি ডলার, যার মধ্যে ২৩০ কোটি ডলারই পাবে বেতন সহায়তা হিসেবে।

উড়োজাহাজ সংস্থাগুলোর বৈশ্বিক জোট আইএটিএ বলছে, নভেল করোনাভাইরাসসংক্রান্ত জটিলতায় চলতি বছর ৩০ হাজার কোটি ডলার লোকসানের আশঙ্কা রয়েছে এয়ারলাইনসগুলোর। এছাড়া চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে আড়াই কোটি কর্মী। যুক্তরাষ্ট্রে আকাশপথে ভ্রমণ ৯৫ শতাংশ কমেছে। এতে ব্যাপক হারে ফ্লাইট বাতিল, উড়োজাহাজের বহর গ্রাউন্ডিং এবং শতকোটি ডলার লোকসানে পড়েছে উড়োজাহাজ সংস্থাগুলো। তবে কোম্পানিতে অর্থ বিনিয়োগ কিংবা শ্রমিকদের ওপর ব্যয় না করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শেয়ার পুনঃক্রয়ে অর্থ ব্যয়ের কারণে শিল্পটি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে। 

বেসরকারি কোম্পানিগুলোর বেইলআউট নিয়ে ২০০৮ সালের আর্থিক সংকট পরবর্তী সময়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, তা পুনরায় ফিরে আসতে পারে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন রাজনীতিবিদরা। 

ফ্লাইট অ্যাটেন্ডেন্টদের প্রতিনিধিত্বকারী শ্রমিক ইউনিয়ন অ্যাসোসিয়েশন অব ফ্লাইট অ্যাটেন্ডেন্টস বা সিডব্লিউএ ইন্টারন্যাশনাল জানায়, তারা আশা করেছিল আড়াই হাজার কোটি ডলারের পুরোটাই বেতন সহায়তায় প্রদান করা হবে। তবে এয়ারলাইনসগুলো যে হোয়াইট হাউজের সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছেছে, তাকেও স্বাগত জানায় ইউনিয়ন। 

সিডব্লিউ ইন্টারন্যাশনালের প্রেসিডেন্ট সারা নেলসন বলেন, অন্তত আগামী সেপ্টেম্বর নাগাদ প্রায় ১০ লাখের মতো কর্মী তাদের বেতন-ভাতা অন্যান্য সুবিধা পাচ্ছে তা প্রায় নিশ্চিত। এটি একটি অভূতপূর্ব সাফল্য এবং প্রকৃত অর্থেই কর্মীবান্ধব প্রণোদনা প্যাকেজ। 

এপ্রিলের শুরুতে এয়ারলাইনসগুলোর শর্তহীন বেইলআউটের বিরুদ্ধে একটি খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করেছিল ২৫০টি শ্রমিক ইউনিয়ন পরিবেশবাদী গ্রুপ।

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন