মহামারী আর দৈন্যের শঙ্কায় নববর্ষ এল আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই

বণিক বার্তা ডেস্ক

মহামারী আর অভাবের শঙ্কার মধ্যে বিদায় নিল পুরনো বছর। চৈত্রসংক্রান্তির রাত পেরিয়ে আজ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সূচনা হবে বঙ্গাব্দ ১৪২৭-এর। নতুন বছরের ঝড়ো হাওয়া পুরনো দিনের হতাশা-দুর্দশার পাশাপাশি মহামারীর চলমান আতঙ্ক আর দৈন্যের শঙ্কা উড়িয়ে নিয়ে যাবে, এমনটাই প্রত্যাশা দেশবাসীর। 

কৃষিকাজ খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য বাংলা সন গণনার শুরু মোগল সম্রাট আকবরের সময়ে। হিজরি চান্দ্রবর্ষ বাংলা সৌরবর্ষের ওপর ভিত্তি করে প্রবর্তিত হয় নতুন বাংলা বছর। ১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথমদিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে, পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলা বর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে সংযোগ ঘটেছে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও।

পাকিস্তান শাসনামলে শোষণের নিষ্পেষণের মধ্যে বাঙালিয়ানা বাঙালিত্বের প্রতীক হয়ে ওঠে বর্ষবরণ। ষাটের দশকের শেষ দিকে তাতে বিশেষ মাত্রা যোগ করে রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজন। স্বাধীনতার পর বর্ষবরণ উৎসব হয়ে ওঠে অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীক। ১৯৮৯ সালে আয়োজন রূপ নেয় স্বৈরাচারবিরোধী সংঘবদ্ধতায়। ওই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা, যা ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কোর বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা পায়।

আজ সকালে ভোরের প্রথম আলো রাঙিয়ে     দেবে নতুন স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর সম্ভাবনাকে। স্বাভাবিকভাবেই সে স্বপ্ন, নভেল করোনাভাইরাসমুক্ত নতুন বিশ্ব, নতুন বাংলাদেশ। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বাঙালি করোনা মহামারী থেকে সহসা মুক্তির প্রত্যাশা নিয়েই আজ প্রথমবারের মতো নতুন বছরকে বরণ করে নেবে তেমন কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই।

কথা ছিল, আজ পহেলা বৈশাখের বর্ণিল উৎসবে মেতে উঠবে দেশ। রমনার বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নববর্ষকে বরণ করে নেয়া হবে। দেশের বিভিন্ন স্থানে আয়োজিত হওয়ার কথা ছিল মেলাসহ ঐতিহ্যবাহী নানা অনুষ্ঠান। কিন্তু নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে এর কোনোটিই এবার আয়োজিত হবে না। 

কভিড-১৯-এর প্রকোপ ঠেকাতে এবার পহেলা বৈশাখের সমাগমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। সারা দেশে গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি চলছে। এবার তাই নববর্ষ আসছে কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই। রমনার বটমূলে হচ্ছে না ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। তবে সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন বেতারে নববর্ষের বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করা হবে। এদিকে আজ বাংলা নববর্ষের দিন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দির বা উপাসনালয়ে না গিয়ে নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করে আনুষ্ঠানিকতা পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে। মহামারী পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন