নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রভাবে গত মার্চ থেকে একে একে বন্ধ হয়ে গেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সব রুটের ফ্লাইট। বন্ধ হয়ে গেছে টিকিট বিক্রি, কার্গো পরিবহন, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং থেকে আসা রাজস্ব আয়। এ অবস্থায় ব্যয় সংকোচনে লিজে আনা ইঞ্জিন ও যন্ত্রাংশ ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সূত্রে জানা গেছে, নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণকালীন ও পরবর্তী সময়ের সংকট উত্তরণে ব্যয় সংকোচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বিমানের নির্বাহী পরিচালকমণ্ডলীর চলতি বছরের সপ্তম ও অষ্টম সভায় বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রকৌশল খাতের এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
ব্যয় সংকোচনে নেয়া বিমানের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ভাড়ায় আনা ইঞ্জিন ও যন্ত্রাংশ যেখান থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে সেখানে ফেরত পাঠাতে হবে। উড়োজাহাজ, প্রকৌশল সরঞ্জাম ও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সরঞ্জামের ন্যূনতম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। চাহিদা ও লোড অনুযায়ী উড়োজাহাজ স্কেলড ডাউন করা, প্রযোজ্য ন্যূনতম চার্জের মধ্যে পিবিএইচ চুক্তি, সিএসপি প্রোগ্রাম লিজ চুক্তি-মেইনটেন্যান্স রিজার্ভস প্রত্যাহার করা, বিমানের উড়োজাহাজগুলো আবশ্যিকভাবে প্রকৌশল ও ম্যাটেরিয়াল ম্যানেজমেন্ট অধিদপ্তরের ম্যানুয়াল অনুযায়ী রক্ষণাবেক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রকৌশল ও ম্যাটেরিয়াল ম্যানেজমেন্ট অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উড়োজাহাজ সংরক্ষণে পুশব্যাকের বিষয়টি নিশ্চিত করা, উড়োজাহাজের সুরক্ষার জন্য ছোট যন্ত্রাংশ সুরক্ষিত স্থানে সংরক্ষণ করা ও সর্বোপরি প্রকৌশল শাখার সব অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষ।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সূত্রে জানা গেছে, রাজস্ব আয় না থাকলেও বর্তমানে বহরে থাকা ১৮টি উড়োজাহাজের জন্য কেবল রক্ষণাবেক্ষণেই বিমানকে প্রতি মাসে খরচ করতে হচ্ছে ২৬৬ কোটি টাকা। এছাড়া প্রতি মাসে লিজে আনা ছয়টি উড়োজাহাজের জন্য ৯৮ কোটি টাকা, বোয়িং থেকে কেনা উড়োজাহাজের কিস্তি ৭০ কোটি টাকা, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন ও দেশে-বিদেশে অফিস রক্ষণাবেক্ষণে ২০৩ কোটি টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে বিমানকে।
এ প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে জানান, কভিড-১৯-এ সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় আগেই বিক্রি করা টিকিটের টাকা যাত্রীদের নগদ অর্থে পরিশোধ করা হচ্ছে। অন্যদিকে টিকিট বিক্রি, কার্গো পরিবহন ও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বাবদ কোনো আয় নেই বিমানের। গত তিন মাসেই বিমান অন্তত চারশ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে। এ অবস্থায় ব্যয় সংকোচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, বিমানের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু রাখতে ৬২৮ কোটি টাকা চেয়ে সম্প্রতি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোকাব্বির হোসেন। চিঠিতে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে বিমানের ক্ষতির কারণগুলো তুলে ধরেন তিনি। এতে বলা হয়, গত দুই মাসে ফ্লাইট বাতিলের পাশাপাশি যাত্রী না থাকার কারণে ফ্লাইটের সংখ্যা কমিয়েও আনা হয়েছে। এসব ফ্লাইটের যাত্রীদের কোনো ধরনের চার্জ না কেটেই টিকিটের টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে। ফলে বর্তমানে নগদ অর্থ না থাকায় এপ্রিল মাসে কর্মীদের বেতনসহ নানা স্থায়ী খরচ চালাতে ৬২৮ কোটি টাকা প্রয়োজন।
প্রসঙ্গত, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ফ্লাইট চলাচল বন্ধের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ১৬টি দেশ হলো বাহরাইন, ভুটান, হংকং, ভারত, কুয়েত, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, ওমান, কাতার, সৌদি আরব, শ্রীলংকা, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাজ্য। এসব দেশ থেকে কোনো ফ্লাইট বাংলাদেশে অবতরণ করতে পারবে না। একই সঙ্গে বাংলাদেশ থেকেও এসব দেশে কোনো ফ্লাইট যেতে পারবে না। আর এসব আন্তর্জাতিক রুটের অধিকাংশেই ফ্লাইট রয়েছে বিমানের।