অপরিশোধিত জ্বালানি তেল

চূড়ান্ত হয়নি ওপেক প্লাসের বৈশ্বিক উত্তোলন হ্রাস চুক্তি

বণিক বার্তা ডেস্ক

বাজার চাঙ্গা করতে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের উত্তোলন হ্রাসসংক্রান্ত চুক্তিতে মতানৈক্যের অভাবে সৌদি আরব রাশিয়ার মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। অনেক চড়াই-উতরাই পার করে অবশেষে দেশ দুটি সমঝোতায় পৌঁছেছে। পরিকল্পনা করেছে রেকর্ড পরিমাণ জ্বালানি তেল উত্তোলন হ্রাসের। তবে এতে বাদ সেধেছে মেক্সিকো। প্রস্তাবের মাত্র এক-চতুর্থাংশ জ্বালানি তেল উত্তোলনে সম্মতি জানিয়েছে দেশটি। ফলে ওপেক প্লাস জোটের দৈনিক গড়ে এক কোটি ব্যারেল উত্তোলন হ্রাসসংক্রান্ত চুক্তিটি এখনো চূড়ান্ত হয়ে ওঠেনি। খবর রয়টার্স। 

নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপে বৈশ্বিক পণ্যবাজার যখন ওলটপালট হয়েছে, তখন অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের অব্যাহত দরপতন রোধে করণীয় নির্ধারণে বৈঠকে বসে অর্গানাইজেশন অব পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ (ওপেক) এবং এর মিত্র দেশগুলো। গত মার্চ অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় বৈঠকে রাশিয়াকে দৈনিক গড়ে পাঁচ লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেল উত্তোলন কমিয়ে আনার প্রস্তাব দেয় সৌদি আরব। প্রস্তাবে মস্কোর আপত্তিতে কোনো চুক্তি ছাড়াই শেষ হয় বৈঠক। ঘটনার পর রাশিয়ার রফতানি বাজার টার্গেট করে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বিশেষ মূল্য ছাড়ের ঘোষণা দেয় সৌদি আরব। সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও নিতে শুরু করে দেশটি। সৌদি রুশ মূল্যযুদ্ধ শুরু হলে জ্বালানি পণ্যটির দাম আরো কমে আসে। 

এদিকে দিন দিন নভেল করোনাভাইরাস বিশ্ব মহামারীতে পরিণত হয়। সংক্রমণ ঠেকাতে দেশে দেশে লকডাউন শুরু হয়। সব ধরনের যানবাহন পরিবহন খাতের ওপর সীমাবদ্ধতা টানা হয়। শিল্প খাত স্থবির হয়ে পড়ে। ফলে জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা দ্রুত হারে নিম্নমুখী হতে শুরু করে। বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদা দৈনিক গড়ে তিন কোটি ব্যারেল কমে গিয়েছে, যা মোট বৈশ্বিক সরবরাহের ৩০ শতাংশ। একদিকে মূল্যযুদ্ধ সরবরাহ বৃদ্ধি, অন্যদিকে বৈশ্বিক চাহিদার দ্রুত পতন দুইয়ের প্রভাবে জ্বালানি তেলের দাম কমতে কমতে গত মাসে ১৮ বছরের সর্বনিম্নে নেমে যায়। 

রেকর্ড দরপতনে যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল খাত বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। খাতটির সঙ্গে জড়িত কয়েক হাজার শ্রমিক চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে পড়েন। পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আহ্বানে সৌদি আরব রাশিয়া ফের আলোচনায় বসে। গত বৃহস্পতিবার ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ওপেক প্লাস দেশগুলোর জ্বালানিমন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনায় দৈনিক গড়ে এক কোটি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন হ্রাসের পরিকল্পনা হয়। এছাড়া জোটটির বাইরে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ব্রাজিলসহ অন্য দেশগুলোকে দৈনিক গড়ে আরো ৫০ লাখ ব্যারেল কমিয়ে আনার প্রস্তাব দেয়া হয়। তবে মেক্সিকোর আপত্তিতে চুক্তিটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আলোচনায় মেক্সিকোকে দৈনিক গড়ে চার লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেল উত্তোলন হ্রাস করার প্রস্তাব দেয়া হলেও দেশটি মাত্র এক লাখ ব্যারেল কমিয়ে আনার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে।

বর্তমানে মেক্সিকোকে রাজি করানোর বিষয়ে ওপেক প্লাস দেশগুলোর মধ্যে আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে। মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ ম্যানুয়েল লোপেজ ওবরাডো বলেছেন, তিনি উত্তোলন কমালে ট্রাম্পও যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত জ্বালানি তেল উত্তোলন কমানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। 

এদিকে জ্বালানি তেলের সংকটপূর্ণ সময়ে জি২০ দেশগুলোর প্রতি সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছে সৌদি আরব। শুক্রবার ফোরামের দেশগুলোর সঙ্গে আলাপ করেছে রিয়াদ। সময় জ্বালানি পণ্যটির বাজারের স্থিতিশীলতা ফেরানোর পদক্ষেপগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ফলে ওপেক প্লাসের চুক্তি কীভাবে চূড়ান্ত করা যেতে পারে, তা অস্পষ্ট থেকে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এনার্জি সেক্রেটারি ড্যান ব্রাউইলেট জি২০ জোটের সঙ্গে কথা বলার পর বলেন, সরবরাহ কমিয়ে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজারে ভারসাম্যতা ফেরাতে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিটি দেশকে তাদের নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছে। 

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন