নভেল করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) সংক্রমণের চতুর্থ ধাপে চলে এসেছে বাংলাদেশ। সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করেছে স্থানীয় পর্যায়ে। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত রোগী। সারা দেশে আক্রান্তদের চিকিৎসায় আইসোলেশন শয্যা, ডাক্তার, নার্স, মাঠকর্মী, সহযোগী স্টাফদের সমন্বয়ে ১ হাজার ৩৮৭ জনের মেডিকেল টিম গঠন করেছে সরকার। যদিও আইসোলেশন শয্যা ও মেডিকেল টিমের কর্মীর সংখ্যায় সবচেয়ে পিছিয়ে আছে ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগ। পিছিয়ে থাকা বিভাগের তালিকায় আছে রংপুর বিভাগও।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে দেশে এখন পর্যন্ত ৬ হাজার ৩১৪টি আইসোলেশন শয্যা প্রস্তুত আছে। সবচেয়ে বেশি আইসোলেশন শয্যা আছে চট্টগ্রাম বিভাগে, ১ হাজার ১৪৯টি। এরপর ঢাকা বিভাগে ১ হাজার ৮৫, সিলেটে ৯০৪, খুলনায় ৮৯৭, রাজশাহীতে ৭৯৪, বরিশালে ৫৭৭, রংপুরে ৫০০ ও ময়মনসিংহ বিভাগে প্রস্তুত আছে ৪০৮টি আইসোলেশন শয্যা।
একইভাবে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে মেডিকেল টিমও প্রস্তুত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আইসোলেশন শয্যায় পিছিয়ে থাকার পাশাপাশি মেডিকেল টিমেও বেশ পিছিয়ে আছে দেশের দুই গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ ময়মনসিংহ ও বরিশাল। বরিশালে করোনা রোগীদের জন্য ডাক্তার আছেন ৩৬ জন। ময়মনসিংহ বিভাগে এ সংখ্যা ২৩। অন্য বিভাগগুলোর মধ্যে চট্টগ্রামে ১২৬, ঢাকায় ১০৭, খুলনায় ৬৬, রাজশাহীতে ৭০, রংপুরে ৬১ ও সিলেট বিভাগে আছেন ৭৮ জন ডাক্তার।
করোনা চিকিৎসায় বিভাগভিত্তিক মেডিকেল টিমে সবচেয়ে কম নার্স আছেন ময়মনসিংহে, মাত্র ১৫ জন। বরিশাল বিভাগে নার্সের সংখ্যা ২৪। তালিকায় সবার ওপরে আছে চট্টগ্রাম বিভাগ। এ বিভাগে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করে তোলা নার্সের সংখ্যা ৯৬। একইভাবে ঢাকায় ৮৪, খুলনায় ৬৭, রাজশাহীতে ২৬, রংপুরে ৪৮ ও সিলেট বিভাগে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৮২ জন নার্সকে।
করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য সবচেয়ে কম মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আছে বরিশাল ও সিলেটে। ময়মনসিংহ বিভাগেও সংখ্যাটি কম। করোনা মেডিকেল টিমে বরিশাল বিভাগে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আছেন সাতজন। একইভাবে সিলেটে ৮, রাজশাহীতে ১০, ময়মনসিংহে ১৩, রংপুর ও ঢাকায় ১৬, খুলনায় ২৩ ও চট্টগ্রাম বিভাগে ২৬ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্টকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
মেডিকেল টিমে ২২৩ জন সহযোগী স্টাফকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বরিশাল বিভাগে সহযোগী স্টাফ আছেন মাত্র ১২ জন। ময়মনসিংহে এ সংখ্যা ১৪। এর বাইরে চট্টগ্রামে ৫৩, ঢাকায় ২৮, খুলনায় ৩৯, রাজশাহীতে ২১, রংপুরে ৩৩ ও সিলেট বিভাগের মেডিকেল টিমে রাখা হয়েছে ২৩ জন মেডিকেল স্টাফ।
এর বাইরে ৩ হাজার ৮৫ জন চিকিৎসক ও ১ হাজার ৫৪ জন নার্সকে প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কভিড-১৯ চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা, হাসপাতাল সংক্রমণ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
বর্তমানে ঢাকার নয়টি ও ঢাকার বাইরে আরো আট হাসপাতালে নভেল করোনাভাইরাস পরীক্ষার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ঢাকার হাসপাতালগুলো হলো আর্মড ফোর্সেস ইনস্টিটিউট অব প্যাথলজি, বিএসএমএমইউ, ঢাকা শিশু হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, আইসিডিডিআর,বি, আইদেশী, আইপিএইচ, আইইডিসিআর ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন।
ঢাকার বাইরে বিআইটিআইডি, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ, রংপুর মেডিকেল কলেজ, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ, খুলনা মেডিকেল কলেজ ও শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজে নভেল করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা করা হচ্ছে।
আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, আমিনবাজার ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল, বাংলাদেশ রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতাল, জিঞ্জিরা ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল, মহানগর জেনারেল হাসপাতাল, সাজিদা ফাউন্ডেশন হাসপাতাল, মিরপুর মেটার্নিটি হাসপাতাল, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল, কামরাঙ্গীরচর ৩১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল এবং জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে। উল্লিখিত হাসপাতালগুলোর সবকয়টিই রাজধানী ঢাকার। এর বাইরে বিভাগীয় পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতেও করোনা রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এছাড়া ঢাকার বাইরে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য ছয়টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রস্তুত রাখার কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক সানিয়া তহমিনা। করোনা চিকিৎসায় ৬৯টি বেসরকারি হাসপাতাল প্রস্তুত রাখার কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।