ব্যাংকের জন্য বড় ছাড় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

সিআরআর কমলো আরো ১%

নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্যাংকিং খাতে বিনিয়োগযোগ্য তারল্য বাড়াতে নগদ জমা সংরক্ষণের হারে (সিআরআর) বড় ছাড় দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ২৩ এপ্রিল তফসিলি ব্যাংকগুলোর সিআরআর দশমিক ৫০ শতাংশ কমানো হয়েছিল। এবার সিআরআর আরো ১ শতাংশ কমিয়ে ৪ শতাংশের ঘরে নামিয়ে আনা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি বিভাগ থেকে বৃহস্পতিবার নতুন এ নির্দেশনা জারি করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ি, ১৫ এপ্রিল থেকে ব্যাংকগুলোর দ্বিসাপ্তাহিক নগদ জমা সংরক্ষণের গড় হার হবে ৪ শতাংশ, যা বর্তমানে ৫ শতাংশ। একইভাবে ১৫ এপ্রিল থেকে ব্যাংকগুলোর দৈনিক ভিত্তিতে নগদ জমা সংরক্ষণ করতে হবে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ হারে। বর্তমানে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে দৈনিক ভিত্তিতে সিআরআর হিসেবে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ হারে নগদ জমা সংরক্ষণ করতে হয়।

নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের শিল্পখাতকে সুরক্ষা দিতে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ৫০ হাজার  কোটি টাকার চলতি মূলধন ঋণ জোগান দিতেই সিআরআর কমানো হয়েছে। দেশের সব তফসিলি ব্যাংককে  মোট তলবি ও মেয়াদি দায়ের (আমানতের) একটি অংশ বাংলাদেশ ব্যাংকে সংরক্ষণ করতে হয়। এর মধ্যে যে অংশ নগদে রাখতে হয়ে সেটিই সিআরআর।

বর্তমানে দেশের ব্যাংকগুলোতে প্রায় ১১ লাখ কোটি টাকার আমানত রয়েছে। ১ এপ্রিলের আগে ব্যাংকগুলোকে এ আমানতের ৫ দশমিক ৫ শতাংশ বাংলাদেশ ব্যাংকে সিআরআর হিসেবে জমা রাখা হতো। কিন্তু এরই মধ্যে সিআরআর দশমিক ৫০ শতাংশ কমানো হয়। নতুন করে আরো ১ শতাংশ কমানোর ফলে ব্যাংকগুলোর মোট সিআরআর কমেছে ১ দশমিক ৫০ শতাংশ। সে হিসেবে দেশের ব্যাংকগুলোর হাতে প্রায় ১৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকার তারল্য যোগ হলো। এ অর্থ পরিমান অর্থ ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ বা ঋণ হিসেবে গ্রাহকদের মাঝে বিতরনের সুযোগ উন্মুক্ত হলো।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বর্তমানে দেশের সব তফসিলি ব্যাংকে তাদের মোট তলবি ও মেয়াদি দায়ের নূন্যতম ৫ শতাংশ দ্বি-সাপ্তাহিক গড় ভিত্তিতে এবং ন্যূনতম ৪ দশমিক ৫ শতাংশ দৈনিক ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে নগদ জমা রাখতে হয়। নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ায় বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক সম্প্রতি ঘোষিত বিভিন্ন আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে মুদ্রাবাজারে প্রয়োজনীয় তারল্য সরবরাহ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এজন্য আগামী ১৫ এপ্রিল থেকে নগদ জমার হার (সিআরআর) দ্বি-সাপ্তাহিক গড় ভিত্তিতে ন্যূনতম ৪ শতাংশ ও দৈনিক ভিত্তিতে ন্যূনতম ৩ দশমিক ৫ শতাংশ হবে। 

নভেল করোনাভাইরাসের ধাক্কায় নড়বড়ে হয়ে গেছে বৈশ্বিক অর্থনীতির ভিত। এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা কিংবা আফ্রিকার সব দেশের অর্থনীতিরই এখন টালমাটাল অবস্থা। এ অবস্থায় নীতি সুদহারে কাটছাঁটসহ নাগরিকদের আর্থিক সুরক্ষা দিতে বিপুল অর্থ নিয়ে এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন দেশের সরকার। নাগরিকদের জন্য এখন পর্যন্ত অন্তত ১০ ট্রিলিয়ন ডলারের তহবিলের ঘোষণা এসেছে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে। বাংলাদেশ সরকারও এরই মধ্যে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা দিয়েছে। তবে এর মধ্যে সরকারের কোষাগার থেকে নগদ অর্থ দেয়া হয়েছে মাত্র ৫ হাজার কোটি টাকা। এ অর্থ দেশের রফতানিমুখি শিল্পের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য ২ শতাংশ সুদে ঋণ হিসেবে দেয়া হচ্ছে। তবে দেশের বড় শিল্প, সেবা প্রতিষ্ঠান ও এসএমইদের জন্য ৫০ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনের ঘোষণা এসেছে। এ অর্থে দেশের ব্যাংকগুলো থেকে ৯ শতাংশ সুদে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ঋণ বিতরণ করা হবে, যার অর্ধেক সুদ পরিশোধ করবে সরকার।

প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত পাঁচটি প্যাকেজের প্রণোদনা বাস্তবায়নের একের পর এক নীতি সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই মধ্যে নীতি সুদহার  (রেপো) ৬ শতাংশ থেকে নামিয়ে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। রফতানি উন্নয়ন তহবিলের আকার সাড়ে ৩ বিলিয়ন থেকে বাড়িয়ে ৫ বিলিয়নে উর্ন্নিত করা হয়েছে। কমানো হয়েছে এ তহবিলের সুদহারও। একই সঙ্গে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া গ্রাহকদের জন্যও বেশকিছু নীতি সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঘোষণা দিয়েছে, আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত ঋণের অর্থ পরিশোধ না করলেও কোনো ঋণগ্রহীতাকে খেলাপি করা হবে না। একই সঙ্গে রফতানির অর্থ দেশে আনা ও আমদানি দায় পরিশোধের মেয়াদ ৬০ দিন করে বাড়ানো হয়েছে। ১৮০ দিন বাড়ানো হয়েছে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসির আওতায় স্বল্পমেয়াদি সাপ্লায়ার্স ও বায়ার্স ক্রেডিটের মেয়াদ। রফতানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে নেয়া ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে ৯০ দিন। চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এসব সুযোগ-সুবিধা কার্যকর থাকবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গ্রাহকরা টাকা জমা না দিলে স্বাভাবিকভাবেই তারল্য সংকটে পড়বে ব্যাংকগুলো। এ অবস্থায় বাজারে তারল্যের জোগান দিতে ব্যাংকের হাতে থাকা অতিরিক্ত সরকারি সিকিউরিটিজ কিনে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে সহজে বিনিময়যোগ্য সম্পদ (এসএলআর) সংরক্ষণের পর অতিরিক্ত সরকারি সিকিউরিটিজ থাকলে তা প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বাজারমূল্যে বিক্রি করতে বলা হয়েছে। এছাড়া এসএলআর সংরক্ষণের হারও কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন