নৃত্যশিল্পী ওয়ার্দা রিহাব। আগামী মে মাস পর্যন্ত তার প্রায় ২০-২২টি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের কথা ছিল। কিন্তু নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সেগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে এ নৃত্যশিল্পী অন্যদের মতোই ঘরে বসে রয়েছেন। সময়টা ছেলের সঙ্গে বেশ কাটিয়ে দিচ্ছেন। পাশাপাশি নিজস্ব ওয়েবসাইট আর ইউটিউব চ্যানেলে বিভিন্ন কাজ করছেন। এসব কাজ এবং বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে টকিজের সঙ্গে কথা হয় ওয়ার্দার। আলাপ করেছেন রাইসা জান্নাত
নৃত্যের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছি
সম্প্রতি নভেল করোনাভাইরাসকে বিষয়বস্তু ধরে একটি নৃত্যের ভিডিও শেয়ার করেছি। এর মূল বিষয় ছিল ‘আতঙ্ক নয়, সচেতনতা’। আমরা প্রতিদিন আতঙ্ক নিয়ে ঘুম থেকে উঠি। বিভিন্ন সংবাদ পড়ি, দেখি। সবখানেই থাকে নানা আতঙ্কের খবর। আমরা সবাই এখন একটা দম বন্ধ করা পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি। সেই ভাবনা থেকে এ কম্পোজিশনটা করা। ভিডিওটিতে কভিড-১৯-এর লক্ষণসহ এটি প্রতিকারে সচেতনতামূলক কাজের বিষয়গুলো নৃত্যের মাধ্যমে তুলে ধরেছি। ভিডিওটি অনেকেই ভালোভাবে নিয়েছে। ভালো সাড়া পাচ্ছি। আমরা শিল্পীরা বাসায় বসে যতটুকু পারি সচেতনতামূলক কাজগুলো করার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি নিজেরা সচেতন থাকছি। এ মুহূর্তে এর থেকে বেশি কিছু করার নেই। কারণ এখন ঘরে থাকাটাই আমাদের বড় দায়িত্ব। ঘরে থেকে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করে যতটুকু সতর্ক করা যায়, সেটাই করছি।
প্রকৃতি আমাদের একটা সময় দিয়েছে
প্রতিদিন সংবাদ দেখে আমরা মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ছি। এ অবসাদ-বিষাদ আমাদের গ্রাস করে নিচ্ছে। তবে বিষয়টিকে একটু ইতিবাচকভাবে দেখার সুযোগ রয়েছে। প্রকৃতির ওপর আমরা মানুষরা অনেক অত্যাচার করেছি। বলা যায়, প্রকৃতি আমাদের ওপর প্রতিশোধ নিচ্ছে। কিন্তু প্রকৃতি এর মধ্য দিয়ে আমাদের একটা সুযোগ দিয়েছে। যে সুযোগটাকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে। নিজেদের সুস্থ রাখতে হবে। সময় দিতে হবে। ভালো চিন্তার পাশাপাশি বই পড়তে হবে। নিয়মিত শরীরচর্চা করা। যার যে বিষয়ে আগ্রহ যেমন নৃত্য কিংবা গান, তার সেদিকে সময় দেয়া উচিত।
সৃষ্টিকতা
কিংবা নিজেদের চেষ্টায়, যে কারণেই হোক না কেন এ পরিস্থিতি থেকে যদি আমরা মুক্তি পাই, তাহলে ভবিষ্যতে যেন আমরা প্রকৃতির সঙ্গে অত্যাচার না করি। এ ইতিবাচক দিকগুলো নিয়ে দিনগুলো শুরু করা উচিত। আমরা অনেকেই এখনো সুস্থ আছি। এটা একটি বড় ব্যাপার। তাই প্রতিটি দিনকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো প্রয়োজন।
অসচ্ছল শিল্পীদের পাশে দাঁড়াতে হবে
আমার
কাছে মনে হয়, এ সময়ে অসুস্থতার বাইরেও শিল্পীরা একটি বড় ধরনের আর্থিক সংকটে পড়বেন। এখন সব অনুষ্ঠান, ক্লাস, প্রতিষ্ঠান বন্ধ। কাজেই অসচ্ছল শিল্পীদের অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেবে। নিজেদের গণ্ডির ভেতরে থেকেই তাদের পাশে আমাদের দাঁড়াতে হবে। পরিচিত শিল্পী, তাদের পরিবার সম্পর্কে জেনে তাদের সাহায্য করা যেতে পারে।
আমি
একজন সচ্ছল নৃত্যশিল্পী। আশা করছি এ সময়টা হয়তো আমি পার করতে পারব। কিন্তু যারা অসচ্ছল শিল্পী আছেন, যাদের আয়ের উৎস বেশি নয়। তাদের জন্য খুব দুশ্চিন্তা হয়। তারা কীভাবে এ সংকট মুহূর্ত পার করবেন? আমি অপেক্ষা করছি। এপ্রিলের পর আমার নিজস্ব জায়গা থেকে তাদের সাহায্য করার চেষ্টা করব।
করোনাপরবর্তী পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে
কেবল
আমরা নই, পুরো বিশ্বই এখন লকডাউন অবস্থায় রয়েছে। কাজেই এ পরিস্থিতি আমাদের মেনে নিতেই হবে। সচেতন থাকতে হবে। যেহেতু এখনো নভেল করোনাভাইরাস প্রতিকারে কোনো চিকিৎসা বের হয়নি। ফলে আমাদের নিজেদের সচেতন হতে হবে, যা কিছু মেনে চলার কথা, সেগুলো মেনে চলতে হবে।
সরকারের
পাশাপাশি অন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নানাভাবে সহযোগিতা করছে। আমার মনে হয়, আমাদের মূল সংকট শুরু হবে এপ্রিলের পর। তখন মৃত্যুর সংখ্যা আরো বেশি গণনা শুরু হবে। অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেবে। পারিবারিকভাবে বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়বে অনেক মানুষ। সেই সময়টা মোকাবেলার জন্য আমাদের সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে।