কভিড-১৯-এর প্রভাব

ভারতের অর্থনৈতিক সংকোচন দীর্ঘস্থায়ী হবে না: ইউবিএস

বণিক বার্তা ডেস্ক

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণে পুরো বিশ্বের মতো ক্ষতির মুখে পড়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারতের অর্থনীতি। কভিড-১৯- দেশটির অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রায় স্থবির করে ফেলেছে, ঝুঁকি দেখা দিয়েছে সংকোচনের। তবে  ইউনিয়ন ব্যাংক অব সুইজারল্যান্ড (ইউবিএস) বলছে, নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশে আন্তর্জাতিকভাবে লকডাউনসহ যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তাতে ভারতের অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিলেও তা খুব বেশি দীর্ঘস্থায়ী হবে না। খবর বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।

ইউবিএসের ভারতের প্রধান অর্থনীতিবিদ তানভী গুপ্ত জৈন বলেন, ভারতের অর্থনীতিতে সম্ভাব্য মন্দা নির্ভর করছে লকডাউন কত দীর্ঘস্থায়ী হবে তার ওপর। একই সঙ্গে নিরাপদ অবস্থানে ফিরে আসতে যেসব অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ করা হয়েছে, সেগুলোও সম্ভাব্য মন্দার ভাগ্য নির্ধারণ করবে। তবে আশঙ্কার কথা হলো, ভারত অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের ওপর নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রেড জোনে আছে। চীনে বর্তমান নিষেধাজ্ঞা ভারতের তুলনায় অনেকটাই শিথিল। বিশেষ করে ভারতে লকডাউন পরিস্থিতি চলমান থাকবে মধ্য এপ্রিল পর্যন্ত। এমনকি সীমাবদ্ধ যোগাযোগের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হতে পারে জুন পর্যন্ত। এমন হলে দেশটির সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা আরো দীর্ঘস্থায়ী হবে। 

বিষয়ে তানভী গুপ্ত জৈন বলেন, পরিস্থিতি মধ্য মের দিকে স্বাভাবিক হলে ভারতের আর্থিক ক্ষতি তুলনামূলক কম হবে। ভারতের অর্থনীতিতে যে সংকোচন দেখা দিয়েছে, তা- বেশিদিন স্থায়ী হবে না। ফলে ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশটির জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধি হতে পারে শতাংশ। তবে আশঙ্কার কথা, নভেল করোনাভাইরাসের কারণে চার-পাঁচ সপ্তাহের লকডাউন এবং সাত-আট সপ্তাহের সীমাবদ্ধ যোগাযোগের কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের স্থবিরতা সেপ্টেম্বর পর্যন্তও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। এরপর হয়তো ধীরে ধীরে ভারতের অর্থনীতিসহ সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকবে। ফলে ১৯৮০ অর্থবছরের পর প্রথম হয়তো দেশটিকে ঋণাত্মক জিডিপিও প্রত্যক্ষ করতে হতে পারে।

জৈন আরো বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে বছরওয়ারি ভারতের অর্থনৈতিক সংকোচন হতে পারে ঋণাত্মক শূন্য দশমিক শতাংশ। তাছাড়া ব্যাপক হারে চাকরি হারানো এবং আয় কমে যাওয়ার কারণে দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যয়েও পতন হবে। ফলে আগে থেকেই কমে যাওয়া উপার্জন এবং সংকটে থাকা অর্থনীতির কারণে ভারতের পারিবারিক মূলধনেও চাপ সৃষ্টি করবে। জৈনের মতে, ভারতের মোট গৃহস্থালি ব্যয়ের ৩০ শতাংশই সেবা খাতকেন্দ্রিক। কিন্তু লকডাউন নিয়ন্ত্রিত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে সেবা খাতের চাহিদায়ও পতন দেখা দেবে। ফলে সার্বিকভাবে চলমান পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ ব্যয় একেবারেই কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে সব দিক বিবেচনায় বেসরকারি খাত হয়তো নতুন করে বিনিয়োগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। ফলে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে একা সরকারি খাতকেই ভারী জোয়াল টেনে যেতে হবে। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরেও ভারতের বেসরকারি খাতের মোট সক্ষমতার মাত্র ৬৯ শতাংশ ব্যবহূত হয়েছে। এর মানে হলো বৈশ্বিক মহামারী নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আগেই দেশটির কোম্পানিগুলো সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও অলস বসে ছিল। ফলে চাহিদা কমে যাওয়ার বর্তমান প্রেক্ষাপটে নতুন করে বিনিয়োগ তাদের জন্য আরো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া লকডাউনের কারণে শ্রমিকদের ফিরে যাওয়াও শিল্প খাতের উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

এদিকে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (আরবিআই) সাবেক গভর্নর রঘুরাম রাজন বলেন, নভেল করোনাভাইরাস প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতার পর ভারতের অর্থনীতি সবচেয়ে বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি ২০০৮-০৯ অর্থবছরের বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের চেয়েও মারাত্মক। কারণ তার মতে, অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও শ্রমিকরা বাইরে কাজে যেতে পারতেন। কিন্তু এখন সে উপায়ও নেই। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন