রুবেলা ভ্যাকসিন আবিষ্কারকের নতুন লড়াই

বণিক বার্তা ডেস্ক

১৯৬৪ সালে উইস্টার ইনস্টিটিউট ল্যাবরেটরিতে রুবেলার ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেন স্ট্যানলি প্লটকিন, যা এখন বিশ্বজুড়ে ভাইরাসটির প্রতিরোধে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এরপর তিনি আরো ব্যাপকভাবে কাজ করেছেন অন্যান্য ভ্যাকসিনের আবিষ্কার প্রয়োগ নিয়ে, যার মাঝে আছে অ্যানথ্রাক্স, পোলিও র্যাবিস। পাশাপাশি তিনি রোটাভাইরাসের উদ্ভাবকদের একজন, যেটি শৈশবের ভ্যাকসিন শিডিউলের অন্তর্ভুক্ত। ৮৭ বছর বয়সী প্লটকিন এখন ফিলাডেলফিয়ার বাইরে বসবাস করছেন। তিনি ভ্যাকসিন কোম্পানিগুলোকে পরামর্শ দেয়ার কাজ করে থাকেন। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি ছয়টি কোম্পানিকে নভেল করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছেন। রুবেলা ভ্যাকসিন এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কারের সম্ভাবনা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন সায়েন্স ম্যাগাজিনের সঙ্গে। তার চুম্বক অংশ এখানে তুলে ধরা হলো

যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বজুড়ে আপনি আরো একটি মহামারীর ভয়াবহতা দেখছেন। এটা নিয়ে কিছু বলুন।


তখনকার ভাইরাসটির সংক্রমণ খুব ব্যাপক ছিল। পার্থক্য হচ্ছে সেই রোগটিতে প্রাথমিকভাবে কেবল গর্ভবতী মহিলারা আক্রান্ত হতো। বর্তমান পরিস্থিতির মতো অতটা আতঙ্কজাগানিয়া ছিল না। যদিও তাদের স্বামীরা বেশ উদ্বিগ্ন ছিলেন। অর্থাৎ ভয়টা ছিল মূলত যারা গর্ভবতী কিংবা গর্ভ ধারণ করতে চান তাদের জন্য। আমার হিসাব মতে, ফিলাডেলফিয়ার সব গর্ভাবস্থার শতাংশ আক্রান্ত হয়েছিল। 

১৯৬৯ সালে ভ্যাকসিন আবিষ্কারের আগে রুবেলা চক্রাকারে আসত। প্রতি চার থেকে ছয় বছর পরপর এর প্রাদুর্ভাব দেখা যেত। নভেল করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেও কি আমরা রকম কিছু আশা করতে পারি?

এটা কঠিন প্রশ্ন। আমার কাছে এর সত্যিকারের কোনো উত্তর নেই। আমরা কেবল আশা করতে পারি। আশা শব্দটিকে আন্ডারলাইন করেই বলতে চাই, নভেল করোনাভাইরাস এমন অবস্থায় থাকবে না যে বারবার হানা দেবে। এটা মনে রেখে যে একই ধরনের আরো করোনাভাইরাস কয়েক বছর আগে দেখা গিয়েছিল, যা এখনো দেখা যায় এবং সৌভাগ্যবশত তার সংক্রমণের মাত্রা হালকা। তবে তারা চলে যাচ্ছে না। করোনাভাইরাস সম্পর্কেও আমরা জানি না। যে কারণে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমাদের ভ্যাকসিন তৈরি করতে হবে। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যদি আগামী শীতে এটা ফিরে আসে, তবে আমাদের কাছে যেন ভ্যাকসিন থাকে।

৬০-এর দশকের মাঝামাঝিতে রুবেলার ভ্যাকসিন তৈরির জন্য যে প্রতিযোগিতা ছিল, তা আজকের তুলনায় কতটা ভিন্ন?

সে সময় ভ্যাকসিন (রুবেলা) আবিষ্কারের জন্য তীব্র প্রচেষ্টা প্রতিযোগিতা ছিল। কিন্তু মনে রাখা দরকার, সে সময় অনেক বেশি বড় বড় ভ্যাকসিন কোম্পানি ছিল না। এখন ভারতীয় চীনা কোম্পানিও রয়েছে। তখন হাতে গোনা কয়েকটি প্রধান ভ্যাকসিন কোম্পানি ছিল।

আপনার তৈরি ভ্যাকসিন অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে উচ্চমানসম্পন্ন ছিল, যা অনেক বেশি অ্যান্টিবডি উৎপাদন করত এবং যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও ছিল কম। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই রাজনৈতিক কারণে এটির সরকারি অনুমোদন পেতে লেগে যায় ১০ বছর। রাজনীতি কি ভ্যাকসিন আবিষ্কারের লড়াইয়ে আক্রমণ চালায়?

এর উত্তর হ্যাঁ বলতেই হবে। 

রুবেলার ভ্যাকসিন তৈরির কাহিনী আজকের নভেল করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির প্রতিযোগিতাকে কী ধরনের সতর্কতামূলক বার্তা দেয়?

ভ্যাকসিন তৈরির জন্য কমপক্ষে ৪০টি কোম্পানি এবং বায়োটেক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে আছে। এখন এমন একটিকে বাছাই করা উচিত যারা মানসম্পন্ন। তবে কেবল একটি নয়, একের অধিক অ্যান্টিকরোনাভাইরাস থাকার সুবিধা আছে। কারণ একজনকে লাখ লাখ ডোজ তৈরি করতে হবে। একজনের পক্ষে অনেক বেশি উৎপাদন করা অসম্ভব। যদি একের অধিক ভ্যাকসিন থাকে, তবে তা অনেক ভালো। কোনো জটিলতা না থাকলে একটির বেশি ভ্যাকসিন থাকতে পারে। 

ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো যে ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে, সে সম্পর্কে আপনি কি আমাদের একটু বিস্তারিত বলবেন? আর এটা ৬০-এর দশক থেকে কতটা ভিন্ন?

আমাদের বিভিন্ন ধরনের ভ্যাকসিন তৈরির প্রার্থী রয়েছে : আরএনএ ভ্যাকসিন, ডিএনএ ভ্যাকসিন, সিঙ্গেল প্রোটিন ভ্যাকসিন, মাল্টিপল প্রোটিন ভ্যাকসিন। এখন একাধিক ভ্যাকসিন থাকার অর্থ হচ্ছে নিরাপত্তা কার্যক্রমতা দুটোই পাওয়া যাবে। তাই যেটা ভালো ব্যাপার তা হচ্ছে, অনেক পথ ব্যবহার করে একই লক্ষ্যে পৌঁছানো। 

টেকনোলজির পাশাপাশি আমাদের আর কোনো সুবিধা আছে, যা ৬০-এর দশকে ছিল না?

দ্য কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ারেডনেস (সিইপিআই) বিভিন্ন ধরনের ভ্যাকসিন (নভেল করোনাভাইরাস) আবিষ্কারের জন্য অর্থ সহযোগিতা দিয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে। অর্থনৈতিকভাবে তারা ছয়টি প্রজেক্টে বর্তমানে সহযোগিতা দিচ্ছে। ধরনের সাহায্য ৬০-এর দশকে প্রয়োজন ছিল। সৌভাগ্যবশত তা এখন পাওয়া যাচ্ছে। তাই কেবল বাণিজ্যিক কোম্পানিগুলো ভ্যাকসিন তৈরি করছে এমন নয়। 

রুবেলা নিয়ে কথা বললে বলতে হয়, ভ্যাকসিন মার্কেটে আনার আগে সময় লেগেছিল পাঁচ বছর। কিন্তু বর্তমানে যে ধরনের জরুরি অবস্থা চলছে, তাতে আপনার এত দেরি করার সুযোগ নেই। তাই আমাদের আগামী বছরের মধ্যে ভ্যাকসিন আবিষ্কারের প্রত্যাশা রাখতে হবে। আমি মনে করি, এটা অর্জন করা সম্ভব। আর এটাই অনেক বড় পার্থক্য। চিন্তাগত দিক থেকেও আমরা এখন আগের চেয়ে প্রস্তুত। কেবল তা- নয়, জরুরি অবস্থা মোকাবেলার জন্যও আমরা আগের চেয়ে বেশি প্রস্তুত, যা ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জন্য ইতিবাচক বিষয়। 

সায়েন্স ম্যাগাজিন

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন