সাড়ে চার কোটি টন ছাড়িয়েছে ইউক্রেনের শস্য রফতানি

বণিক বার্তা ডেস্ক

ইউক্রেনকে বলা হয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউর শস্যভাণ্ডার। আন্তর্জাতিক শস্য রফতানি বাণিজ্যে দেশটির অবস্থান বেশ দৃঢ়। বিদায়ী মৌসুমে রেকর্ড শস্য রফতানির পর এবারো একই পথে হাঁটছে দেশটি। খাতসংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, চলতি ২০১৯-২০ মৌসুমে শস্য রফতানিতে আগের মৌসুমের রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে ইউক্রেন। এরই মধ্যে চলতি মৌসুমের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) ইউক্রেনের শস্য রফতানি বেড়ে সাড়ে চার কোটি টন ছাড়িয়ে গেছে। খবর ওয়ার্ল্ডগ্রেইনডটকম রয়টার্স। 

ইউক্রেনে প্রতি বছরের জুলাই থেকে শস্য মৌসুম শুরু হয়। শেষ হয় পরের বছরের জুনে। চলতি মৌসুমের শুরু থেকেই দেশটির খাদ্যশস্য রফতানিতে চাঙ্গা ভাব বজায় রয়েছে। ইউক্রেনের অর্থনীতি, বাণিজ্য কৃষি উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমের প্রথম নয় মাসে দেশটি থেকে সব মিলিয়ে কোটি ৬০ লাখ টন শস্য আন্তর্জাতিক বাজারে রফতানি হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে দেশটি রফতানি করেছিল কোটি ৭৬ লাখ টন শস্য। সেই হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে দেশটি থেকে খাদ্যশস্য রফতানি ৮৪ লাখ টন বেড়েছে। 

সময়ের মধ্যে ইউক্রেন থেকে সবচেয়ে বেশি রফতানি হয়েছে ভুট্টা। খাদ্যপণ্যটির রফতানিকারক দেশের বৈশ্বিক শীর্ষ তালিকায় ইউক্রেনের অবস্থান চতুর্থ। ২০১৯-২০ মৌসুমের প্রথম নয় মাসে দেশটি থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে কোটি ৩৩ লাখ টন ভুট্টা রফতানি হয়েছে। 

এছাড়া চাঙ্গা ভাব বজায় রয়েছে দেশটির গম রফতানিতেও। ইউক্রেন বিশ্বের পঞ্চম শীর্ষ গম রফতানিকারক দেশ। চলতি মৌসুমের প্রথম নয় মাসে দেশটি কোটি ৭৯ লাখ টন গম রফতানি করেছে। একই সময়ে দেশটি থেকে যব রফতানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৩ লাখ টনে।

ইউক্রেন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ খাদ্যশস্য উৎপাদনকারী দেশ। অভ্যন্তরীণ চাহিদার তুলনায় দেশটি অনেক বেশি শস্য উৎপাদন করে, যা আন্তর্জাতিক বাজারে রফতানি করে থাকে। তবে নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপ দেশটির শস্যবাজারেও লেগেছে। মহামারীর প্রভাবে বাড়ছে খাদ্য সংকটের ভয়। ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে অনেক দেশ সম্প্রতি শস্য রফতানি সাময়িকভাবে বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। শস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও পরিস্থিতি ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ বাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছে। দেশটিতে হঠাৎ বাড়তে শুরু করেছে খাদ্যশস্যের দাম।

খাদ্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দাম নিয়ন্ত্রণে গত সপ্তাহে ইউক্রেনের বেকার মিলাররা শস্য সংশ্লিষ্ট পণ্যের রফতানি সীমিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির অর্থমন্ত্রী জানান, সাময়িকভাবে গম রফতানি কমিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেছে ইউক্রেন সরকার। 

দেশটির প্রধান ব্যবসায়ী ইউনিয়ন ইউক্রেন গ্রেইন অ্যাসোসিয়েশন (ইউজিএ) জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি চলতি সপ্তাহে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে গম রফতানি কমিয়ে আনার বিষয়ে একমত হয়েছে। ২০১৯-২০ মৌসুমে সর্বোচ্চ কোটি লাখ টন গম রফতানির পরিকল্পনা রয়েছে দেশটির। এরই মধ্যে দেশটি কোটি ৭৯ লাখ টন গম রফতানি করে ফেলেছে।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে ইউক্রেনে রেকর্ড শস্য উৎপাদন হয়েছিল। গত বছর দেশটিতে খাদ্যশস্যের সামগ্রিক উৎপাদন দাঁড়িয়েছিল কোটি ৫১ লাখ টনে। ২০১৮ সালে দেশটির শস্য উৎপাদনের পরিমাণ ছিল কোটি টন। অনুকূল আবহাওয়া বিরাজ করায় চলতি বছরও ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। 

এদিকে উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চলতি মৌসুমে দেশটি থেকে শস্য রফতানিও চাঙ্গা থাকতে পারে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। ইউক্রেনের কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী তারাস ভায়মোতেসকি সম্প্রতি জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমে দেশটি থেকে সব মিলিয়ে কোটি ২০ লাখ টন থেকে কোটি ৫০ লাখ টন শস্য রফতানি হতে পারে। এর মধ্যে গম রফতানির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে কোটি ৯০ লাখ টন থেকে কোটি টনের মধ্যে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন