শনিবার করোনায় মারা যাওয়া বৃদ্ধ

আক্রান্ত অবস্থায় গিয়েছিলেন দেওয়ানবাগীর ওরসে

নিহাল হাসনাইন

নভেল করোনাভাইরাসে (কভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে গত শনিবার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে মারা যান ৯০ বসর বয়সী এক বৃদ্ধ। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পক্ষ থেকে মৃত্যুর বিষয়টি জানানো হলেও গোপন রাখা হয় তার পরিচয়। তবে বণিক বার্তার অনুসন্ধানে জানা গেছে, মারা যাওয়া ওই ব্যক্তি শরীয়তপুরের নড়িয়া থানা এলাকার থিরোপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি দেওয়ানবাগী পীরের মুরিদ ছিলেন। অসুস্থ হওয়ার পর চিকিৎসার জন্য ঢাকায় এসে দেওয়ানবাগীর ওরসেও অংশ নিয়েছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২০ মার্চ মতিঝিলে দেওয়ানবাগীর ওরসে ২০ হাজারেরও বেশি মুরিদ অংশ নেন। সারা দেশেই দেওয়ানবাগী পীরের মুরিদ রয়েছেন। রাজধানীতে মতিঝিল, মুগদা, বাসাবো মিরপুর এলাকায় তার কয়েক হাজার মুরিদ আছেন। ঢাকার বাইরে শরীয়তপুর, জামালপুর, মাদারীপুর, নারায়ণগঞ্জেও মুরিদ রয়েছেন তার। সর্বশেষ ওরসে অংশ নিতে এসব জেলা থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ দেওয়ানবাগী পীরের দরবারে এসেছিলেন। এসব জেলায় করোনা সংক্রমণ ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কার মধ্যেই আইইডিসিআর জানায়, রাজধানীতে মিরপুর বাসাবো এলাকায় নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ ক্লাস্টার আকার ধারণ করেছে। ঢাকার বাইরে নারায়ণগঞ্জেও করোনা সংক্রমণ ক্লাস্টার আকার ধারণ করেছে। এছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে শরীয়তপুর, জামালপুর মাদারীপুরে নভেল করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ১৬ দিন অসুস্থ ছিলেন শরীয়তপুরের নড়িয়া থানা এলাকার থিরোপাড়া গ্রামের ওই বৃদ্ধ। সময়ের মধ্যে তিনি অন্তত চারটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে যান। যাত্রাপথে একবার লঞ্চ একবার অ্যাম্বুলেন্স এবং ভাড়া করা গাড়ি ব্যবহার করেন। অংশ নেন দেওয়ানবাগীর ওরসে। এছাড়া কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগে তিনি ছিলেন মিরপুর-১৩ নম্বরে তার বড় মেয়ের বাড়িতে। সেখান থেকে স্থানীয় মসজিদে নামাজ আদায় করেন। এখন তার মেয়ে, জামাই তাদের সন্তান জ্বর সর্দি-কাশিতে ভুগছেন। 

মারা যাওয়া বৃদ্ধের পরিবারের ভাষ্যমতে, তার বড় ছেলে থাকেন ইতালি। গত জানুয়ারি তিনি ঢাকায় আসেন। এর দুদিন পর চলে যান গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া থানা এলাকার থিরোপাড়া গ্রামে। এরপর সেখানে শুরু করেন বাড়ি নির্মাণের কাজ। কাজের দেখভালের জন্য তিনি বাবা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সেখানেই ছিলেন। বাড়ির ছাদ ঢালাইয়ের পর তিনি গত ১২ মার্চ চলে আসেন ঢাকায়। ওঠেন মিরপুর- নম্বরের উত্তর টোলারবাগের ১৯/জি নম্বর বাড়িতে। এটি তার শ্বশুরবাড়ি। নয়তলা ভবনের তৃতীয় তলার সি ফ্ল্যাটেই বর্তমানে রয়েছেন তিনি। ওই বাড়িতেই নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশের দ্বিতীয় মৃত্যু হয় গত ২০ মার্চ শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায়।

ইতালি থেকে ফেরার পর এখন পর্যন্ত কোনো জ্বর সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হননি দাবি করেন মারা যাওয়া বৃদ্ধের বড় ছেলে। তিনি বলেন, আমি এসেছি জানুয়ারির তারিখে। তখন থেকে পর্যন্ত আমি পুরোপুরি সুস্থ রয়েছি। শুধু বাড়ির কাজ করানোর সময় আমার এক হাতে চোট পাই। এছাড়া আমার মধ্যে কোনো ধরনের জ্বর সর্দি-কাশি নেই। তবে বাবা চিকিৎসার জন্য ঢাকায় এসে দেওয়ানবাগীর ওরসে গিয়েছিলেন এবং যখন মিরপুরে আমার বোনের বাসায় ছিলেন, সেখানকার স্থানীয় মসজিদে তিনি নামাজ আদায় করেছেন। এসব জায়গা থেকেও তিনি নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমিত হতে পারেন বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

শরীয়তপুরের নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গঠিত জেলা কমিটির ফোকাল পার্সন ওই জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব সার্বিক) মোহাম্মদ মামুন-উল-হাসান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ঢাকার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ওই বৃদ্ধের মৃত্যুর পর নড়িয়া থানা এলাকার থিরোপাড়া গ্রামের ২৪টি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৯টি বাড়ি তার স্বজনদের। এছাড়া তাকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স চালকের বাড়িসহ আশপাশের আরো পাঁচটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন