নভেল করোনাভাইরাস

অতিথিশূন্য দেশের সব আবাসিক হোটেল

মনজুরুল ইসলাম

নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ আতঙ্কে গত ফেব্রুয়ারি থেকেই তারকা হোটেলগুলোর বুকিং একে একে বাতিল হতে শুরু করে। এরপর গত মাসে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আকাশপথে ফ্লাইট চলাচল পর্যায়ক্রমে বন্ধ হতে থাকায় হোটেলগুলোতে যারা অবস্থান করছিলেন, তারাও ছেড়ে চলে যান। যদিও কর্মচারীদের বেতনভাতা, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল পানির বিল ঠিকই বহন করে যেতে হচ্ছে হোটেলগুলোকে। অবস্থায় বন্ধ হওয়া ঠেকাতে সরকারের সহায়তা চাচ্ছে তারা।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের মাধ্যমে সরকারের কাছে সহায়তা চেয়ে চিঠি দিয়েছে তারকা হোটেল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশন (বিহা) চিঠিতে অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ তহবিল থেকে অনুদান প্রদানের আবেদন জানিয়ে অর্থমন্ত্রী এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন পর্যটনমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেছে বিহা।

এছাড়া হোটেল তথা পর্যটন শিল্পকে রক্ষায় সংগঠনটি তাদের অন্তর্ভুক্ত হোটেলগুলোর শ্রমিক কর্মচারীদের ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত বেতন বাবদ প্রতি মাসে প্রত্যেক কর্মচারীকে ৫০ হাজার টাকা আর্থিক অনুদান প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া হোটেলগুলোর মাসিক বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল পানির বিল ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত মওকুফ শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার ওপর আয়কর মওকুফের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে।

প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট এইচএম হাকিম আলী বণিক বার্তাকে বলেন, অতিথি না থাকায় হোটেলগুলোর বর্তমান অবস্থা চরম সংকটময়। এরই মধ্যে কিছু হোটেল অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন হয়েছে। কোনো কোনো হোটেলের অকুপেন্সির হার - শতাংশ। অবস্থা চলতে থাকলে হোটেলগুলোর পক্ষে কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হবে না।

বিহার তথ্য বলছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি-জুন সময়ে প্রাক্কলন অনুযায়ী সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত অন্যগুলো মিলিয়ে ৫০০ হোটেলের প্রায় হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হতে পারে। শিল্পের সঙ্গে পাঁচ লাখের বেশি জনবল প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে জড়িত। বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এক লাখের বেশি স্থায়ী-অস্থায়ী শ্রমিক কর্মচারী চাকরিচ্যুত কিংবা মাসিক বেতন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে দেশে পাঁচ তারকা হোটেল রয়েছে ১৭টি। এর মধ্যে ১০টির অবস্থান রাজধানী ঢাকায়, যেগুলোর কক্ষ সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। এর মধ্যে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ২৭৭টি, ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকায় ২২৬, র্যাডিসন ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে ২০৫, ওয়েস্টিনে (ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেড) ২৩৫, লা মেরিডিয়ান ঢাকায় ৩১৭, রেনেসাঁ হোটেল ঢাকায় ২১১, ফোর পয়েন্টসে ১৪২ হোটেল আমারিতে ১৩৪টি অতিথি কক্ষ রয়েছে।

জানা গেছে, সাধারণত বছরের প্রথম কয়েক মাস তারকা হোটেলগুলোর ব্যবসার পিক সিজন ধরা হয়। সময় ব্যবসায়িক কারণে বাংলাদেশে আসা-যাওয়া করেন প্রচুর বিদেশী। এছাড়া বিদেশী পর্যটকদের আনাগোনাও সময়টাতে থাকে তুলনামূলক বেশি। চাহিদা বেশি থাকায় বছরের সময় রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেলগুলোয় কক্ষ খালি পাওয়াও বেশ কঠিন। আগাম বুকিং দেয়া থাকে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। চলতি বছরও সময়টায় আগাম বুকিং দেয়া ছিল হোটেলগুলোর সিংহভাগ কক্ষের। কিন্তু নভেল করোনাভাইরাসের কারণে গত ফেব্রুয়ারি থেকে অতিথি নেই তারকা হোটেলগুলোয়।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতিথি আগমন ছাড়াও তারকা হোটেলের রাজস্ব আয়ের আরেকটি বড় উৎস হলো ভেন্যু হিসেবে দেশীয় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মেলা-প্রদর্শনী আয়োজন। কভিড-১৯ আতঙ্কে যা সবই এখন বন্ধ। আগামী কয়েক মাসেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। অবস্থায় বড় ধরনের লোকসান হবে দেশের সব তারকা হোটেলের।

অন্যদিকে বছরের সময়টায় ব্যবসায়িক কারণে যেসব বিদেশী বাংলাদেশ ভ্রমণ করে থাকেন, তাদের বড় একটি অংশ পোশাক খাতের ক্রেতা। কারখানাগুলোয় গ্রীষ্মের পোশাকের অর্ডার দিতে সময় বাংলাদেশে যাতায়াত থাকে তাদের। কিন্তু বছরের পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। পোশাক খাতে এখন পিপিই তৈরির যেসব অর্ডার আসছে, সেগুলোও অনলাইন মাধ্যমে হচ্ছে। আর আগামী জুলাই পর্যন্ত বিদেশী পর্যটকেরও আসার সম্ভাবনা নেই।

প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে পর্যটন খাতে বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে ট্যুরিজম এডুকেটরস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ। তারা বলছে, নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে এখন পর্যন্ত ট্যুরিজম হসপিটালিটি সেক্টরে সার্বিক ক্ষতির পরিমাণ আড়াই থেকে হাজার কোটি টাকারও বেশি। এরই পরিপ্র্রেক্ষিতে সরকার কর্তৃক ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের একটি অংশ ট্যুরিজমের জন্য আলাদা করার প্রয়োজন আছে। এক্ষেত্রে তারকা হোটেল বড় রিসোর্টগুলোকে বড় শিল্প; ছোট মাঝারি হোটেল এবং বড় রেস্টুরেন্টগুলোকে মাঝারি শিল্প এবং ট্যুর অপারেটর ট্রাভেল এজেন্টগুলোকে ক্ষুদ্র শিল্প হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন