বিজিএমইএ-বিকেএমইএর ঘোষণা

১৪ এপ্রিল পর্যন্ত সব পোশাক কারখানা বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক

নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার যৌথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বিজিএমইএ-বিকেএমইএ। গতকাল কারখানা সচল বা বন্ধের বিষয়ে বিজিএমইএ বিকেএমইএর যৌথ আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

সংগঠন দুটির পক্ষ থেকে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট সবার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে, মহামারী নভেল করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকারের ছুটির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিজিএমইএ বিকেএমইএর সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো, যাদের জরুরি রফতানি কার্যাদেশ রয়েছে যেসব প্রতিষ্ঠান পিপিই, মাস্ক ইত্যাদি তৈরি করছে, সেসব প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনে খোলা রাখতে পারবে। তবে সেক্ষেত্রে নিজ নিজ অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ/বিকেএমইএ), কল-কারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং শিল্প পুলিশকে অবহিত করতে হবে। এছাড়া ১৬ এপ্রিলের মধ্যে শ্রমিক-কর্মচারীদের মার্চের বেতন পরিশোধ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।

গতকাল দেশের শিল্প অধ্যুষিত ছয়টি অঞ্চল আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, ময়মনসিংহ এলাকায় মোট ৮৪৬ শিল্প-কারখানা সচল ছিল। যার মধ্যে বিজিএমইএ বিকেএমইএ সদস্য পোশাক কারখানা ১৭৬টি। শিল্প পুলিশ সূত্রে তথ্য জানা গেছে।

আশুলিয়া এলাকায় বিজিএমইএ-বিকেএমইএ সদস্য পোশাক কারখানা আছে মোট ৫০৬টি। যার মধ্যে বন্ধ ছিল ৪৬৭টি। হিসাবে গতকাল পোশাক কারখানা খোলা ছিল ৩৯টি। গাজীপুরে বিজিএমইএ-বিকেএমইএ সদস্য পোশাক কারখানা আছে ৯৬৮টি। এর মধ্যে বন্ধ ছিল ৮৭২টি। হিসাবে গতকাল খোলা ছিল এমন পোশাক কারখানা ৯৬টি। চট্টগ্রামে বিজিএমইএ-বিকেএমইএ সদস্য পোশাক কারখানা আছে মোট ৪০৮টি। এর মধ্যে বন্ধ ছিল ৩৮৫টি। হিসাবে খোলা ছিল এমন পোশাক কারখানার সংখ্যা ২৩। নারায়ণগঞ্জ এলাকায় পোশাক কারখানা আছে ১ হাজার ৪৬টি। এর মধ্যে বন্ধ ছিল হাজার ৩৯টি। হিসাবে খোলা থাকা পোশাক কারখানার সংখ্যা ৭। ময়মনসিংহে মোট পোশাক কারখানা সংখ্যা ৫০, যার মধ্যে বন্ধ ছিল ৪১টি। এই কারখানাগুলোর সবই বিজিএমইএর সদস্য। গতকাল ওই এলাকায় খোলা থাকা পোশাক কারখানার সংখ্যা ৯। খুলনায় পোশাক কারখানা আছে পাঁচটি। কারখানাগুলোর সবই বিজিএমইএর সদস্য। এর মধ্যে গতকাল বন্ধ ছিল চারটি।

দেশের ছয়টি শিল্প এলাকায় বস্ত্র, পোশাক, চামড়া, ওষুধ, ফার্নিচার, মোবাইল সংযোজন, সিরামিকসহ সব খাত মিলিয়ে মোট শিল্প-কারখানা আছে হাজার ৬০২টি। যার মধ্যে গতকাল বন্ধ ছিল হাজার ৭৫৬টি। হিসাবেই খোলা কারখানার সংখ্যা ৮৪৬। এই ছয় এলাকার শিল্প-কারখানাগুলোয় কাজ করেন ৩০ লাখের বেশি শ্রমিক।

সরকার শিল্প মালিকদের সংগঠন দুই পক্ষ থেকেই বলা হয়েছিল যেসব কারখানায় আন্তর্জাতিক ক্রয়াদেশ আছে এবং যেসব কারখানা পিপিই তৈরি করছে এমন কারখানাগুলো কভিড-১৯ সংক্রমণ ঠেকাতে শ্রমিকের স্বাস্থ্য সুরক্ষার সর্বোচ্চ নিশ্চিত করা সাপেক্ষে কারখানা সচল রাখবে। গত এপ্রিল গভীর রাতে পোশাক শিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ বিকেএমইএর পক্ষ থেকে কভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ১১ এপ্রিল পর্যন্ত কারখানা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানানো হয়।

জানা গেছে, গতকাল দেশের প্রায় সব পোশাক কারখানার মানবসম্পদ বিভাগ থেকে শ্রমিকদের একটি বার্তা দেয়া হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, সব স্টাফ/শ্রমিকদের জানানো যাচ্ছে যে আগামীকাল এপ্রিল নিজ ভোটার আইডি কার্ডের একটি  ফটোকপি, দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, অফিস আইডি নাম্বার এবং মোবাইল নাম্বার স্বাক্ষর দিয়ে কাগজ জমা দিতে হবে, সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা না দিলে তাহার জন্য পরবর্তীতে অফিসের বেতন একাউন্টে কোনো সমস্যা হলে অফিস কর্তৃপক্ষ দায়ী নহে। উপরিউক্ত কাগজপত্রের সাথে নমিনির এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি এবং ভোটার আইডি/জন্মসনদের ফটোকপি জমা দিতে হবে।

এদিকে বণিক বার্তার গাজীপুর প্রতিনিধি গতকাল জানান, ঝুঁকি নিয়েই গাজীপুরের সব খাত মিলিয়ে পৌনে তিন শতাধিক মিল-কারখানা সোমবার খোলা ছিল। সরকারি নির্দেশ অমান্য করে কিছুসংখ্যক লোকজন ঘর থেকে রাস্তায় বের হচ্ছে। নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে জেলার বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কের ১৪টি পয়েন্টে সোমবার বসানো হয়েছে চেকপোস্ট।  সড়কগুলোতে গণপরিবহন চলাচল না করলেও পণ্যবাহী কাভার্ড ভ্যান ট্রাক চলাচল করেছে। তবে এদিন নানা অজুহাতে কিছুসংখ্যক প্রাইভেটকার, অ্যাম্বুলেন্স, পিকআপ, মোটরসাইকেল, অটোরিকশা রিকশাকে চলাচল করতে দেখা গেছে। এদিকে জনসমাগম ঠেকাতে জেলার বিভিন্ন সড়ক এবং বাজার নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকানগুলো নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।

গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশের ইন্টেলিজেন্স শাখার ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মো. ইসলাম হোসেন জানান, নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী গাজীপুরের বিভিন্ন কারখানা ছুটি ঘোষণা করে বন্ধ রাখা হয়। তবে সোমবার পর্যন্ত জেলার ২৭৭টি কারখানায় উৎপাদন অব্যাহত ছিল। কারখানা কর্তৃপক্ষ নিজ দায়িত্বে তাদের এসব কারখানা খোলা রেখেছে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন