নভেল করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশের অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব উত্তরণের জন্য নতুন চারটিসহ মোট পাঁচটি প্যাকেজে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার আর্থিক প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আর্থিক প্রণোদনার প্যাকেজ ঘোষণা করেন। এতে করোনার সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, একটি মৃত্যুও আমাদের কাম্য নয়।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষের রয়েছে আশ্চর্য এক সহনশীল ক্ষমতা ও ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা। ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে যে জাতি মাত্র নয় মাসে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে, সে জাতিকে কোনো কিছুই দাবিয়ে রাখতে পারবে না।
প্রাণঘাতী এ ভাইরাস মোকাবেলায় সরকার গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এর আগে রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করার জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার একটি আপত্কালীন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলাম। সেটিসহ মোট আর্থিক সহায়তা প্যাকেজের পরিমাণ হবে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা, যা জিডিপির প্রায় ২ দশমিক ৫২ শতাংশ।
সারা পৃথিবীতে নভেল করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব উত্তরণে আর্থিক সহায়তার প্যাকেজ ও সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধিসহ চারটি কার্যক্রম নিয়ে কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাত্ক্ষণিক, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি—তিন পর্যায়ে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চারটি কার্যক্রম নিয়ে এ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে সরকার।
প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত চারটি কার্যক্রম
সরকারি ব্যয় বাড়ানো: সরকরি ব্যয়ের ক্ষেত্রে ‘কর্মসৃজনকে’ মূলত প্রাধান্য দেয়া হবে। বিদেশ ভ্রমণ ও বিলাসী ব্যয় নিরুৎসাহিত করা হবে। আমাদের ঋণের স্থিতি-জিডিপির অনুপাত অত্যন্ত কম (৩৪%) বিধায় অধিকতর সরকারি ব্যয় সামষ্টিক অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করবে না।
আর্থিক সহায়তার প্যাকেজ: ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্প সুদে কতিপয় ঋণ সুবিধা প্রবর্তন করা হবে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুজ্জীবিত করা, শ্রমিক-কর্মচারীদের কাজে বহাল রাখা ও উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখাই হলো আর্থিক সহায়তা প্যাকেজের মূল উদ্দেশ্য।
সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি: দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী জনগণ, দিনমজুর ও অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত জনসাধারণের মৌলিক চাহিদা পূরণে বিদ্যমান সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বাড়ানো হবে। এর আওতায় উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমগুলো হলো বিনা মূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি, লক্ষ্যভিত্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ, ‘বয়স্ক ভাতা’ এবং ‘বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলাদের জন্য ভাতা’ কর্মসূচির আওতা সর্বাধিক দারিদ্র্যপ্রবণ ১০০টি উপজেলায় শতভাগে উন্নীত করা এবং জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গৃহীত অন্যতম কার্যক্রম গৃহহীন মানুষের জন্য গৃহনির্মাণ কর্মসূচি দ্রুত বাস্তবায়ন করা ইত্যাদি।
মুদ্রা সরবরাহ বাড়ানো: অর্থনীতির বিরূপ প্রভাব উত্তরণে মুদ্রা সরবরাহ বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে সিআরআর ও রেপোর হার কমিয়ে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধির ব্যবস্থা নিয়েছে, যা আগামীতেও প্রয়োজন অনুযায়ী অব্যাহত থাকবে। তবে এক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্য থাকবে যেন মুদ্রা সরবরাহজনিত কারণে মুদ্রাস্ফীতি না ঘটে।
আর্থিক সহায়তার প্যাকেজে যা রয়েছে
প্যাকেজ-১: ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা প্রদান: ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্পসুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল প্রদানের লক্ষ্যে ৩০ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণ সুবিধা প্রণয়ন করা হবে। ব্যাংক-ক্লায়েন্ট রিলেশনসের ভিত্তিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সংশ্লিষ্ট শিল্প বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বাবদ ঋণ দেবে। এ ঋণ সুবিধার সুদহার হবে ৯ শতাংশ। প্রদত্ত ঋণের সুদের অর্ধেক অর্থাৎ সাড়ে ৪ শতাংশ ঋণগ্রহীতা শিল্প বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিশোধ করবে এবং অবশিষ্ট সাড়ে ৪ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দেবে।
প্যাকেজ-২: ক্ষুদ্র (কুটির শিল্পসহ) ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা প্রদান: ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্প সুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল প্রদানের লক্ষ্যে ২০ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণ সুবিধা প্রণয়ন করা হবে। ব্যাংক-ক্লায়েন্ট রিলেশনসের ভিত্তিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বাবদ ঋণ দেবে। এ ঋণ সুবিধার সুদহার হবে ৯ শতাংশ। প্রদত্ত ঋণের ৪ শতাংশ সুদ ঋণগ্রহীতা শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিশোধ করবে এবং অবশিষ্ট ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দেবে।
প্যাকেজ-৩: বাংলাদেশ ব্যাংক প্রবর্তিত ইডিএফের সুবিধা বাড়ানো: ব্যাক-টু-ব্যাক এলসির আওতায় কাঁচামাল আমদানি সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইডিএফের বর্তমান আকার সাড়ে ৩ বিলিয়ন থেকে ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হবে। ফলে দেড় বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অতিরিক্ত ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা ইডিএফ তহবিলে যুক্ত হবে। ইডিএফের বর্তমান সুদহার লাইবর প্লাস ১ দশমিক ৫ শতাংশ (যা প্রকৃত পক্ষে ২ দশমিক ৭৩%) থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হবে।
প্যাকেজ-৪: প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রিফিন্যান্স স্কিম নামে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ হাজার কোটি টাকার একটি নতুন ঋণ সুবিধা চালু করবে। এ ঋণ সুবিধার সুদহার হবে ৭ শতাংশ।
প্যাকেজ-৫: এর আগে রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করার জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার একটি আপত্কালীন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
সারা বিশ্বে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে এসব প্যাকেজ ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আশা করি, পূর্বে ও আজকে ঘোষিত আর্থিক সহায়তার প্যাকেজগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন হলে আমাদের অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়াবে এবং আমরা কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কাছাকাছি পৌঁছতে পারব ইনশাআল্লাহ।’ সবাইকে দেশী পণ্য উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সম্ভাব্য এ বৈশ্বিক ও দেশীয় অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণের জন্য রফতানি খাতের পাশাপাশি দেশী পণ্যের প্রতি আমাদের বিশেষ নজর দিতে হবে। এক্ষেত্রে আমি সবাইকে দেশী পণ্য উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নভেল করোনাভাইরাসের দ্রুত বিস্তার, স্বাস্থ্য পরিষেবার ওপর সৃষ্ট বিপুল চাপ এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে নজিরবিহীন লকডাউন ও যোগাযোগ স্থবিরতা বিশ্ব অর্থনীতির ওপর এরই মধ্যে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। শিল্পোৎপাদন, রফতানি বাণিজ্য, সেবা খাত বিশেষত পর্যটন, এভিয়েশন ও হসপিটালিটি খাত, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ, কর্মসংস্থান ইত্যাদি ক্ষেত্রে ধস নেমেছে। শুধু সরবরাহ ক্ষেত্রেই নয়, চাহিদার ক্ষেত্রেও ভোগ ও বিনিয়োগ চাহিদা কমতে শুরু করেছে। আইএমএফ এরই মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা শুরু হয়েছে মর্মে ঘোষণা করেছে। পুঁজিবাজারে বিশ্বব্যাপী গত কয়েক সপ্তাহে ২৮-৩৪ শতাংশ দরপতন ঘটেছে। ওইসিডির হিসাবমতে মন্দা প্রলম্বিত হলে বিশ্বপ্রবৃদ্ধি দেড় শতাংশে নেমে আসবে।
তিনি বলেন, নভেল করোনাভাইরাসের ফলে বিশ্বব্যাপী বিপুল জনগোষ্ঠী কর্মহীন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মন্দা দীর্ঘস্থায়ী হলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব এই প্রথম এমন মহামন্দা পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বব্যাপী নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর কী ধরনের বা কতটুকু নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, তা এখনো নির্দিষ্ট করে বলার সময় আসেনি। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব তুলে ধরছি। আমদানি ব্যয় ও রফতানি আয়ের পরিমাণ গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৫ শতাংশ কমেছে। অর্থবছর শেষে এ হ্রাসের পরিমাণ আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। চলমান মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা ও ব্যাংক সুদহার হ্রাসের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন বিলম্বের কারণে বেসরকারি বিনিয়োগ প্রত্যাশিত মাত্রায় অর্জিত না হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সার্ভিস সেক্টর বিশেষত হোটেল-রেস্টুরেন্ট, পরিবহন ও এভিয়েশন সেক্টরের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের ওপরও বিরূপ প্রভাব পড়েছে। বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের চাহিদা কমার কারণে এর মূল্য ৫০ শতাংশের অধিক কমেছে, যার বিরূপ প্রভাব পড়বে প্রবাসী আয়ের ওপর। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ৩ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন ডলার হবে বলে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক প্রাক্কলন করেছে। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে মনে হচ্ছে, এ ক্ষতির পরিমাণ আরো বেশি হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘ ছুটি বা কার্যত লকডাউনের ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন বন্ধ এবং পরিবহন সেবা ব্যাহত হওয়ায় স্বল্প আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস ও সরবরাহ চেইনে সমস্যা হতে পারে। চলতি অর্থবছরের রাজস্ব সংগ্রহের পরিমাণ বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম হবে। ফলে অর্থবছর শেষে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিন বছর ধরে ধারাবাহিক ৭ শতাংশের অধিক হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রধান চালিকাশক্তি ছিল শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং সহায়ক রাজস্ব ও মুদ্রানীতি। সামষ্টিক চলকগুলোর নেতিবাচক প্রভাবের ফলে জিডিপির প্রবৃদ্ধি কমতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে সময়মতো ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে আল্লাহর রহমতে এখনো আমাদের এখানে ব্যাপক সংক্রমণ ঘটেনি এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। গত বছর ডিসেম্বরের শেষে চীনে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়ার পর পরই আমরা বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা ও আইইডিসিআর যৌথভাবে কাজ শুরু করে। আইইডিসিআরে কন্ট্রোল রুম খোলা হয় এবং রোগটি মোকাবেলায় প্রস্তুতি শুরু করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পৃথক কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী জানান, ভাইরাসসহ সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে আমাদের পূর্বাভিজ্ঞতা ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসরণ করে ‘ন্যাশনাল প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যান্ড রেসপন্স প্ল্যান ফর কভিড-১৯, বাংলাদেশ’ প্রণয়ন করা হয়েছে। পরিকল্পনার আওতায় তিন স্তরবিশিষ্ট কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের মাধ্যমে যেন ভাইরাস না ছড়ায়, সেজন্য বিদেশে গমন ও বিদেশ থেকে আগমন নিরুৎসাহিত করা; দেশের মধ্যে ভাইরাস সংক্রমিত ব্যক্তির আগমন ঘটলে দ্রুত শনাক্তকরণ ও এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে ভাইরাসের বিস্তার রোধ এবং চিহ্নিত আক্রান্ত ও অসুস্থ ব্যক্তিদের দ্রুত পৃথক করে যথাযথ চিকিৎসা প্রদান।
গত জানুয়ারিতেই এ তিন স্তরের কার্যক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয় বলে জানান তিনি। গত ২৬ মার্চ থেকে ১৭ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে যারা মারা গেছে, তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে শেখ হাসিনা বলেন, একটি মৃত্যুও আমাদের কাম্য নয়। করোনায় আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছে, প্রধানমন্ত্রী তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার কাছে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন তথ্য এসেছে। অনেক খুবই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। বিশেষ করে ছোট ছোট ব্যবসায়ী যেমন—আমাদের কৃষি, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতিসহ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, পোলট্রি, ডেইরিসহ বিভিন্ন ব্যবসায় যারা নিয়েজিত, তারা সবাই সমস্যায় পড়ে গেছেন। তারা তাদের ঋণ নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। তাদের এ দুশ্চিন্তা দূর কারার জন্য আমরা এ ব্যবস্থা নিয়েছি। আশা করি তাদের আর সমস্যা হবে না। কেউ কষ্ট করুক, এটা আমি চাই না। সবার কষ্ট লাঘব করাই আমাদের দায়িত্ব। সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা এ প্যাকেজ ঘোষণা করেছি। এর সুফলটা সবাই পাবেন। আমি আশা করি সবাই সততার সঙ্গে কাজ করবেন। এ সুযোগ নিয়ে কেউ যেন কোনো দুর্নীতি, অনিয়ম বা অপব্যবহার না করেন। কেউ এ ধরনের অপব্যবহার করবেন না। আমরা যদি সঠিকভাবে কাজ করতে পারি, তাহলে কোনো সেকশনের মানুষই অসুবিধায় পড়বে না।