ভেঙে পড়ছে বৈশ্বিক খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহ শৃঙ্খল

বণিক বার্তা ডেস্ক

পশ্চিম ভারতের উর্বর জেলা সাতারার কৃষকরা তাদের গবাদি পশুকে বর্তমানে এমন খাদ্য সরবরাহ করছেন, যা অন্য সময়ে কেউ চিন্তাও করেনি। কেউ কেউ তাদের মহিষের সামনে ঢেলে দিচ্ছেন আইসবার্গ লেটুস। কেউ আবার তাদের গরুকে খাওয়াচ্ছেন দামি স্ট্রবেরি। এমন নয় যে কৃষকরা তাদের গবাদি পশুর জন্য বিশেষ ভোজের আয়োজন করেছেন। তারা এমন করতে বাধ্য হচ্ছেন মূলত ভেঙে পড়া বাজার ব্যবস্থার কারণে। এর মধ্য দিয়ে পচে যাওয়ার বিপরীতে ফসলগুলো অন্তত কারো পেটে তো যাচ্ছে! খবর রয়টার্স।

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধে ভারতে চলছে লকডাউন। ভাইরাস প্রতিরোধী পদক্ষেপের কারণে কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে দেশটির পরিবহন ব্যবস্থা। ফলে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত শস্য ফসল ভোক্তা পর্যায়ে সরবরাহ করতে পারছেন না। শুধু ভারতই নয়, বিশ্বের বহু দেশ এখন লকডাউন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পদক্ষেপ ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর হলেও অকল্পনীয় বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে কৃষি খাত খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খলের ওপর। সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে সামগ্রিকভাবে খাদ্য সংকট মূল্যবৃদ্ধি দেখা দেবে।

বিশ্বজুড়েই কোটি কোটি কৃষিশ্রমিক এখন মাঠে কাজ করতে পারছেন না। বন্ধ রয়েছে ফসল রোপণ উত্তোলন প্রক্রিয়া। কৃষিসহ বিভিন্ন পণ্য স্থানান্তরে কাজ করছেন খুব স্বল্পসংখ্যক ট্রাকচালক। অন্যদিকে গ্রাউন্ডেড উড়োজাহাজের মিছিলে আকাশপথেও কমে গেছে সদ্য উত্পন্ন কৃষিপণ্যের পরিবহন এবং একই সঙ্গে দেখা দিয়েছে খাদ্য সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় কনটেইনারের সংকট।

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় এরই মধ্যে মেক্সিকান অভিবাসী শ্রমিকের সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে ক্ষেতেই ফসল পচে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন অঞ্চলের তরমুজ ব্লুবেরি উৎপাদকরা। একইভাবে প্রয়োজনীয় শ্রমিক সংকটের কারণে আবাদ নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন ইউরোপের সবজি খামারিরা। 

খাদ্য উৎপাদন সরবরাহ খাতের টালমাটাল অবস্থা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নভেল করোনাভাইরাসের সীমাহীন নেতিবাচক প্রভাবের সক্ষমতাই প্রমাণ করছে। বৈশ্বিক মহামারী বিশ্বব্যাপী উল্টে দিয়েছে অধিকাংশ অতিজরুরি ব্যবসা খাত ভোক্তা বাজারের চিত্র। এখন পর্যন্ত চাল গমের মতো প্রধান খাদ্যশস্যের সরবরাহে প্রভাব সীমিত আকারে হলেও ফসল উৎপাদন এর সরবরাহ শৃঙ্খলে সংকট তীব্রতর হচ্ছে।

সাতারা জেলার দারেওয়াদি গ্রামের কৃষক অনিল সালুনখে বর্তমানে তার উৎপাদিত স্ট্রবেরি গরুকে খাওয়াচ্ছেন। কারণ, সাধারণত যে পর্যটকরা তার স্ট্রবেরির প্রধান ভোক্তা, লকডাউন পরিস্থিতিতে তারা বের হচ্ছেন না। একইভাবে স্থানীয় ফল বিক্রেতারাও এখন ঘরে বন্দি। সালুনখে বলেন, লকডাউনের কারণে কেউ এখন স্ট্রবেরি কিনতে চাচ্ছে না। পরিস্থিতিতে এমনকি তিনি স্ট্রবেরিগুলো বিনা মূল্যে দেয়ার জন্যও ভোক্তা পাচ্ছেন না।

জাতিসংঘের খাদ্য কৃষি সংস্থার (এফএও) জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ আব্দুল রেজা আব্বাসাইন বলেন, নভেল করোনাভাইরাসের কারণে ফসল রোপণ সংগ্রহের ক্ষেত্রে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, বৃহৎ জনসংখ্যার দরিদ্র দেশগুলোর ওপর তার প্রভাব পড়বে সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে কৃষিনির্ভর ভারতের মতো দেশ অধিক ঝুঁকিতে রয়েছে। 

উল্লেখ্য, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২৫ মার্চ ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেন। এর পরই দেশটির শ্রমিকদের মধ্যে কর্মস্থল থেকে নিজ নিজ গ্রামে ফেরার জন্য হুলস্থুল বেধে যায়। পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় দীর্ঘ পথ হেঁটে বাড়ি ফিরতে শুরু করেন শ্রমিকরা। সময় তাদের সঙ্গে না ছিল টাকা, না ছিল খাবার।

এদিকে ইউরোপে স্পেনে অভিবাসী শ্রমিকদের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। অবস্থায় ব্লুবেরি মৌসুমে উৎপাদন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন দেশটির খামারিরা। একইভাবে ইতালির কৃষি খাতে আগামী দুই মাসে প্রায় দুই লাখ মৌসুমি শ্রমিকের প্রয়োজন হবে। অবস্থায় ফল সবজি উত্তোলনে দেশটির সরকারকে রাষ্ট্রীয় সুবিধা ঘোষণা করতে হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিষয়ে এফএওর আব্বাসাইন বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি একেবারেই অভাবনীয়। একদিকে শ্রমিক নেই, অন্যদিকে পণ্য সরবরাহের জন্য নেই ট্রাক, এমনকি খাদ্য ক্রয়ের জন্য মানুষের পকেটে টাকাও নেই।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন