যুক্তরাজ্যে দারিদ্র্যের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে নভেল করোনাভাইরাস

বণিক বার্তা ডেস্ক

নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে চাহিদা সরবরাহ সংকটের কারণে উৎপাদন খাতে ধস নেমেছে। স্থবির হয়ে পড়েছে আকাশসেবা, পর্যটন আতিথেয়তা শিল্পের মতো সেবা খাতগুলো। তৈরি হয়েছে জিডিপি সংকোচনের আশঙ্কা। মোট কথা, অর্থনীতির প্রায় সব সূচকই এখন পতনমুখী। এটি পুরো বিশ্বেরই চিত্র। ভূ-অর্থনৈতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য দেশ অঞ্চলের মতো যুক্তরাজ্যের ম্যানুফ্যাকচারিং সেবা খাতও রীতিমতো ধুঁকছে। করপোরেট খাতে ব্যয় সংকোচন নীতির কারণে কর্মসংস্থান হারাচ্ছে লাখ লাখ মানুষ। আর এতে দেশটিতে দারিদ্র্য বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে। খবর এএফপি বিবিসি।

যুক্তরাজ্যের সরকারি নথি বলছে, দেশটিতে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছেন কোটি ৪০ লাখের বেশি মানুষ, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ। ব্রিটেনের প্রায় ৪২ লাখ বা ৩০ শতাংশ শিশু দরিদ্র। এর সঙ্গে লকডাউন পরিস্থিতিতে লাখ লাখ ব্রিটিশ কর্মসংস্থান হারানোর কারণে দেশটিতে দারিদ্র্য সমস্যা আরো প্রকট হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ব্রিটেনে কর্মসংস্থানহীনতার সংকট কতটা বেড়েছে, তা একটি পরিসংখ্যানেই পরিষ্কার হয়। গত ১৫ দিনে দেশটিতে রাষ্ট্রীয় সহায়তার জন্য আবেদন করেছেন কর্মহীন প্রায় ১০ লাখ মানুষ। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে উল্লিখিত সময়সীমায় গড় আবেদনের তুলনায় সংখ্যা প্রায় ১০ গুণ। সম্প্রতি যুক্তরাজ্য সরকারের অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকস (ওএনএস) জানিয়েছে, স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপ হিসেবে কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা করছে এক-চতুর্থাংশের বেশি ব্রিটিশ কোম্পানি।

কোনো দেশের অর্থনীতি সম্প্রসারণ না সংকুচিত হচ্ছে, তা বোঝাতে অন্যতম নির্দেশক বিবেচনা করা হয় পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্সকে (পিএমআই) আইএইচএস মার্কিট এবং চার্টার্ড ইনস্টিটিউট অব প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড সাপ্লাইয়ের (সিআইপিএস) তথ্য অনুযায়ী, মার্চে যুক্তরাজ্যের পিএমআই দাঁড়িয়েছে ৩৬ পয়েন্টে। ফেব্রুয়ারিতে সূচক ছিল ৫৩ পয়েন্ট। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে দেশটির পিএমআই কমেছে ১৭ পয়েন্ট। উল্লেখ্য, পিএমআই ৫০ পয়েন্টের কম থাকলে তা অর্থনীতির সংকোচন নির্দেশ করে। হিসেবে ফেব্রুয়ারিতে ব্রিটেনের অর্থনীতি সম্প্রসারণের পথে থাকলেও করোনার প্রকোপ বাড়ার পর থেকেই তা সংকুচিত হচ্ছে।

তবে পিএমআই যে অর্থনৈতিক সংকটের বাস্তব চিত্র পুরোপুরি তুলে ধরতে পারছে, তা নয়। লন্ডনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের অর্থনীতিবিদ অ্যান্ড্রু উইশার্টের মতে, পিএমআইয়ের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সংকটের বাস্তব চিত্র প্রতিফলিত হচ্ছে না। তিনি বলেন, এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে অর্থনীতিতে ১৫ শতাংশ সংকোচনের আশঙ্কা করছি আমরা, যা আর্থিক মহামন্দার সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। বিশ্বের প্রতিটি দেশই জনজীবনের সুরক্ষার বিষয়টিকে বেশি অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে। অবস্থায় অর্থনীতির প্রকৃত ক্ষতি ভাষায় প্রকাশ করাটা আসলেই কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে বৈশ্বিক মন্দা এখন প্রায় অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু এর স্থায়িত্ব ভয়াবহতা সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়।

করোনা মহামারীর কারণে অর্থনৈতিক দৈন্য তো রয়েছেই, এর পাশাপাশি আরেকটি বিষয় নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। চাইল্ড পভার্টি অ্যাকশন গ্রুপ ইউকের পরিচালক লুসিয়া ম্যাকগিহান বলেছেন, করোনা পরিস্থিতিতে বন্ধ থাকা স্কুলগুলোর বেশির ভাগই শিশুদের জন্য ইন্টারনেটের মাধ্যমে পাঠদানের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু যারা মহামারী শুরুর আগে থেকেই দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছেন, তাদের অনেকেরই ইন্টারনেট অথবা কম্পিউটার নেই। ফলে তাদের সন্তানরা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সুতরাং বলা যায়, নভেল করোনাভাইরাসের কারণে আমাদের দেশে শিশু দারিদ্র্যের সমস্যাটি আরো প্রকট হচ্ছে। 

জোসেফ রাউনট্রি ফাউন্ডেশনের প্রধান অর্থনীতিবিদ ডেভ ইনেস বলেছেন, অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা বলতে পারি, বড় ধরনের মন্দা আসছে আর তা থেকে সহসা উত্তরণ সহজ হবে না। আমরা জানি, মন্দার আঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দরিদ্র দারিদ্র্যের ঝুঁকিতে থাকা মানুষগুলোই।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন