পুলিশের বাধায় ক্ষোভ অস্বস্তি ও আতঙ্কে ব্যাংকাররা

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাধারণ ছুটির মধ্যে ব্যাংকিং সেবা সচল রাখা নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন ব্যাংকাররা। কর্মক্ষেত্রে যেতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধা গণপরিবহন বন্ধ থাকাকে দায়ী করছেন তারা। নিয়ে ব্যাংকারদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। একই সঙ্গে নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থেকে অস্বস্তি আতঙ্ক বাড়ছে ব্যাংকারদের।

ব্যাংকারদের অভিযোগ, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সত্ত্বেও তাদের কর্মক্ষেত্রে যেতে হচ্ছে। কিন্তু রাস্তায় কোনো গণপরিবহন নেই। ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হলে সেটিও পুলিশ আটকে দিচ্ছে। গত কয়েক দিনে নিয়ে পুলিশের সঙ্গে ব্যাংকারদের বাগিবতণ্ডার ঘটনাও ঘটেছে। অনেক ক্ষেত্রে পুলিশি হয়রানির শিকার হতে হয়েছে তাদের।

পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছানোয় গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন বরাবর চিঠি দিয়েছেন গভর্নর ফজলে কবির। এছাড়া পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) চিঠি দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) চিঠিটি আজ আইজিপির দপ্তরে পাঠানো হবে বলে সংশ্লিষ্টরা বণিক বার্তাকে নিশ্চিত করেছেন। পাশাপাশি অর্থ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ব্যাংককেও বিষয়ে চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবিবি।

বিষয়ে এবিবির সাবেক চেয়ারম্যান মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, পরিবার নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ব্যাংকাররা কর্মক্ষেত্রে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মেনেই ব্যাংকগুলো ব্যাংকিং সেবা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গত কয়েক দিন ব্যাংকারদের সঙ্গে যে আচরণ করেছেন, সেটি দুঃখজনক। আমরা মনে করছি, তথ্যের ঘাটতি থাকার কারণেই এমনটি হচ্ছে। পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে চলে যাওয়ায় এবিবি থেকে আইজিপিকে চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আশা করছি, এতে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে।

বিশ্বব্যাপী তাণ্ডব চালানো নভেল করোনাভাইরাসে নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে শতাধিক দেশে। কারফিউ আর লকডাউনে গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৩০০ কোটি মানুষ। তার পরও নিয়মিত কর্মক্ষেত্রে যেতে হচ্ছে বিশেষ শ্রেণী-পেশার মানুষকে। সীমিত পরিসরে হলেও অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্য বিশ্বের সব দেশেই ব্যাংকিং সেবা চালু রয়েছে। মৃত্যু উপত্যকা ইতালি স্পেনেও বন্ধ হয়নি ব্যাংকিং সেবা। যদিও দেশ দুটির ব্যাংকিং খাত পুরোপুরি প্রযুক্তিনির্ভর। নগদ টাকা বহন, পণ্য ক্রয়, ব্যাংকে জমা কিংবা উত্তোলনের চেয়ে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন অনেক বেশি জনপ্রিয় ইতালি স্পেনে। ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায়ও বহুগুণ পিছিয়ে আছে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত। এখনো দেশের লেনদেনের সিংহভাগই নগদে হয়।

নভেল করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের অফিস-আদালতে ছুটি চলছে। যানবাহন চলাচল বন্ধ রেখে সবাইকে যার যার বাড়িতে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে ছুটির মধ্যেও জরুরি সেবাগুলো চালু রাখার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে ব্যাংকের লেনদেন সীমিত আকারে চালু রাখা হয়েছে। ছুটি শুরুর পর ব্যাংকগুলোয় সকাল ১০টা থেকে দুপর ১২টা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে। এছাড়া ব্যাংক খোলা রাখা হয়েছে বেলা দেড়টা পর্যন্ত। আজ থেকে ব্যাংকিং লেনদেন কার্যক্রমের পরিসর বাড়ানো হয়েছে। ব্যাংকগুলোয় লেনদেন হবে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত। এছাড়া বেলা ৩টা পর্যন্ত ব্যাংক খোলা থাকবে।

বাস্তবতার নিরিখেই সাধারণ ছুটিতে ব্যাংকিং লেনদেন সচল রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই সীমিত পরিসরে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার সময় ব্যাংকারদের বিড়ম্বনার বিষয়ে আমরা শুনেছি। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে।

তবে ছুটির মধ্যে ব্যাংক খোলা রাখার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করছেন সাধারণ ব্যাংকাররা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাংকারদের একাধিক গ্রুপ নিয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরছেন তারা। গ্রুপগুলোয় পুলিশ কর্তৃক ব্যাংকারদের ব্যক্তিগত গাড়ি আটকে দেয়া, চলাচলে বাধা সৃষ্টির বিষয়েও নিজেদের তিক্ত অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হচ্ছে। পুলিশের সঙ্গে বাগিবতণ্ডার একাধিক ভিডিওচিত্রও প্রকাশ করছেন তারা।

গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন বরাবর দেয়া চিঠিতে গভর্নর ফজলে কবির বলেন, নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির মধ্যেও সরকারের নির্দেশনা জনগণের আর্থিক চাহিদা মেটানো, বেতন-ভাতা পরিশোধ, অভ্যন্তরীণ অত্যাবশ্যকীয় বৈদেশিক ব্যবসা-বাণিজ্য চালু রাখা, লেনদেন সুবিধা প্রধান, দেশব্যাপী জ্বালানি তেল সুলভ মূল্যে খাদ্য বিতরণসংক্রান্ত সরকারি কার্যক্রম অব্যাহত রাখার উদ্দেশ্যে ব্যাংকিং লেনদেন বজায় রাখা তথা অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখার প্রয়াসে সীমিত আকারে ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু রাখা হয়েছে। লক্ষ্যে পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত থেকে এপ্রিল প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত দেশের সব তফসিলি ব্যাংক সীমিত পরিসরে ব্যাংকগুলো খোলা থাকবে। অবস্থায় সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির দিনগুলোয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ দেশের বিভিন্ন তফসিলি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নজি নিজ প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে কর্মস্থল বাসস্থানে যাতায়াতের ক্ষেত্রে তারা তাদের বহনকারী বাহন যাতে কোনো প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে না হয়, সে লক্ষ্যে দায়িত্বরত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করছি।

বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা বলেন, যেসব মানুষ জরুরি কাজে রাস্তায় বের হচ্ছে, তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য আমরা পুলিশ সদস্যদের নির্দেশনা দিয়েছি। কেউ যদি যথাযথ কারণ প্রমাণ দেখিয়ে নিজের পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে, তাহলে পুলিশ তাকে বাধা দেবে না।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন