নভেল করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে ভেঙে পড়ছে বহুবিস্তৃত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক খাত। পর্যটন, বিমান পরিবহন, গাড়ি নির্মাণসহ উৎপাদনমুখী এমন কোনো খাত নেই যেখানে এ ভাইরাসের সংক্রমণের থাবা পড়েনি। লোকসান অভিমুখে ধাবিত হচ্ছে বিশ্বের অধিকাংশ কোম্পানি। কিন্তু এর উল্টো চিত্র দেখা গেছে চীনের একটি চিকিৎসা সরঞ্জাম তৈরির কোম্পানির ক্ষেত্রে। খবর ব্লুমবার্গ
বিশ্বব্যাপী কভিড-১৯ রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসায় অতি প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে ভেন্টিলেটর। আর দুনিয়াজুড়ে এ ভেন্টিলেটর নিয়ে শুরু হয়েছে হাহাকার, লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে চাহিদা। ঠিক এ সুযোগই কাজে লাগিয়েছে চীনের কোম্পানি শেনঝেন মিনড্রে বায়োমেডিকেল ইলেকট্রনিকস কোম্পানি। ভেন্টিলেটর তৈরি করে কোম্পানিটির তিন প্রতিষ্ঠাতা সম্মিলিতভাবে তাদের পকেটে পুরেছেন ৭৩০ কোটি ডলার। এর মধ্যে চেয়ারম্যান লি শিটিং একাই তার সম্পদে যুক্ত করেছেন ৩৭০ কোটি ডলার। ফলে সব মিলিয়ে এ বছর তার মোট সম্পদের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৭০ কোটি ডলারে।
এদিকে শেনঝেন মিনড্রে বায়োমেডিকেল ইলেকট্রনিকস কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে ৪১ শতাংশ। এর
মূলে রয়েছে ভেন্টিলেটর তৈরি ও বিক্রর চাহিদায় উল্লম্ফন। কভিড-১৯ রোগে আক্রান্তদের শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে সারা বিশ্বের হাসপাতালে যন্ত্রটির চাহিদা এখন তুঙ্গে। বৈশ্বিক মহামারী নভেল করোনাভাইরাসের প্রেক্ষাপটে ভেন্টিলেটরের ঘাটতি দিন দিন প্রকট হয়ে উঠছে। বিশেষ করে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের বাঁচিয়ে রাখতে এ চিকিৎসাযন্ত্রটির বিকল্প নেই বললেই চলে। এ অবস্থায় ভেন্টিলেটর তৈরিতে এগিয়ে এসেছে অন্য শিল্প খাতের উৎপাদকরাও। এরই মধ্যে যন্ত্রটি তৈরি শুরু করেছে ফোর্ড ও জেনারেল মোটরসের মতো গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।
মিনড্রের বোর্ড সচিব লি ওয়েনমেই জানান, বর্তমান বাস্তবতায় বিশ্বে ভেন্টিলেটরের চাহিদা বেড়েছে আগের চেয়ে অন্তত ১০ গুণ। হাসপাতালগুলোয় যন্ত্রটির অভাবে রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে হুহু করে বাড়ছে কভিড-১৯-এ আক্রান্তের সংখ্যা। আর কিছুদিনের মধ্যেই সেখানকার হাসপাতালগুলোয় ভেন্টিলেটরের সরবরাহ শেষ হয়ে যাবে বলে জানিয়েয়েছন গভর্নর এন্ড্রু কুয়োমো।
দ্য সোসাইটি অব ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিনের হিসাব অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৯ লাখ ৬০ হাজার রোগীর ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন হবে। কিন্তু বর্তমানে দেশটির ভেন্টিলেটরের সরবরাহ রয়েছে মাত্র দুই লাখের মতো। ইতালিতে এরই মধ্যে ভেন্টিলেটরের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
এ অবস্থায় গত মাসেও যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে মিনড্রের ভেন্টিলেটরের অনুমোদন ছিল না। কিন্তু সংকট বিবেচনায় দেশটির ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এসব ভেন্টিলেটর ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। ফলে ব্যবসার জন্য ভাগ্য খুলে গেছে মিনড্রের। তবে মাসে তিন হাজার ভেন্টিলেটর উৎপাদনকারী মিনড্রেই শুধু চীনে এ যন্ত্রটি তৈরি করছে না। পাশাপাশি বেইজিং এয়নমেড কোম্পানিও এ বিষয়ে গত মাসে এফডিএর অনুমোদন পেয়েছে। একইভাবে ভেন্টিলেটর উৎপাদনকারী আরেক কোম্পানি জিয়াংসু ইয়ুইয়ুয়ে মেডিকেল ইকুইপমেন্ট অ্যান্ড সাপ্লাই কোম্পানির এ বছর শেয়ারদর বেড়েছে ৯৮ শতাংশ, যা প্রতিষ্ঠানটির বাজারমূল্য নিয়ে গেছে ৫৭০ কোটি ডলারে।
চলতি সপ্তাহে বিশেষ করে ইউরোপ থেকে ভেন্টিলেটরের ক্রয়াদেশ আশ্চর্যজনকভাবে বেড়েছে বলে জানিয়েছে মিনড্রে। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে প্রায় ১০ হাজার ভেন্টিলেটর ও মনিটর কিনছে ইতালি।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভেন্টিলেটর ব্যবসার এ রমরমা অবস্থা চিরকাল স্থায়ী হবে না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শ্বসন-সহায়ক যন্ত্রটির চাহিদা হয়তো বাড়বে, কিন্তু তা নিশ্চয়ই বর্তমান সংকটকালের মতো তীব্র হবে না। নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রশমিত হলে ভেন্টিলেটরের বিক্রি অবশ্যই কমে যাবে।