দেউলিয়াত্ব এড়াতে সরকারের সহায়তা চায় দেশী এয়ারলাইনস

মনজুরুল ইসলাম

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গত মার্চ থেকে একে একে বন্ধ হয়ে গেছে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আকাশপথে ফ্লাইট চলাচল। বন্ধ রয়েছে অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইটও। ফ্লাইট না চললেও উড়োজাহাজের কিস্তি পরিশোধ, বৈমানিক গ্রাউন্ড স্টাফদের বেতনসহ দেশে দেশের বাইরে থাকা কার্যালয়গুলোর উচ্চপরিচালন ব্যয় ঠিকই বহন করে যেতে হচ্ছে এয়ারলাইনসগুলোকে। অবস্থায় দেউলিয়া হওয়ার হাত থেকে বাঁচতে সরকারের সহায়তা চাইছে দেশী এয়ারলাইনসগুলো।

বেসামরিক বিমান পরিবহন পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে এয়ারলাইনসগুলোকে দেউলিয়ার হাত থেকে বাঁচাতে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান চেয়ে সম্প্রতি চিঠি দিয়েছে বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলোর পক্ষে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস। চিঠিতে বলা হয়েছে, সব উড়োজাহাজ হেলিকপ্টারের যাবতীয় নেভিগেশন, ল্যান্ডিং পার্কিং চার্জ পাঁচ বছরের জন্য মওকুফ করা; প্রণোদনাস্বরূপ এভিয়েশন শিল্পকে আগামী ১০ বছরের জন্য বিবিধ আয়কর ভ্যাট অব্যাহতি প্রদান; অভ্যন্তরীণ আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক হারে জ্বালানি মূল্য ধার্যকরণ; যন্ত্রাংশ আমদানি পর্যায়ে আগাম কর অব্যাহতি, বকেয়া পরিশোধের ক্ষেত্রে লেট ফি অন্যান্য দেশের মতো বার্ষিক - শতাংশ হারে ধার্য করা; বাংলাদেশী এয়ারলাইনস আন্তর্জাতিক রুটে চলাচল করলেও তাদের উড়োজাহাজগুলোর ল্যান্ডিং, পার্কিং নেভিগেশন চার্জ অভ্যন্তরীণ রুটের হারে ধার্য করা।

এর আগে গত মার্চে নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে বাংলাদেশের এভিয়েশন খাতের ঝুঁকি নিরসনের কর্মপন্থা নিরূপণের জন্য জরুরি সাধারণ সভা করে এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এওএবি) সভায় এওএবি সদস্যরা বলেন, বিশ্বব্যাপী নভেল করোনাভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করায় এয়ারলাইনস তথা এভিয়েশন খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক স্বনামধন্য এয়ারলাইনস দেউলিয়া ঘোষণার দ্বারপ্রান্তে। খাত সুরক্ষা দেয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশ সরাসরি আর্থিক সহায়তা ঘোষণা করেছে।

পরবর্তী সময়ে সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দেয় এওএবি। প্রস্তাবে এওএবি জানায়, সংকটকালে সিভিল এভিয়েশন চার্জ, যন্ত্রাংশ আমদানিতে অগ্রিম কর জ্বালানির ওপর আরোপিত কর বাতিল করা প্রয়োজন। পাশাপাশি অন্তত দুই প্রান্তিকে ব্যাংক পাওনা সুদবিহীনভাবে ডেফার্ড পেমেন্টের ব্যবস্থা করা এবং দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ হিসেবে আসন্ন বাজেট প্রস্তাবনায় বিশদ দাবি তুলে ধরার কথা বলা হয়েছে।

প্রসঙ্গে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বণিক বার্তাকে বলেন, ফ্লাইট বন্ধ হওয়ায় দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির মধ্যে পড়েছে এয়ারলাইনসগুলো। অবস্থায় সরকারের সহায়তা না পেলে একে একে দেশী এয়ারলাইনসগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। এতে বহু কর্মী চাকরি হারাবেন। পাশাপাশি বিদেশী এয়ারলাইনসের দখলে চলে যাবে দেশের এভিয়েশন খাত। এতে দেশ যেমন রাজস্ব হারাবে, তেমনি উচ্চমূল্যে টিকিট কাটতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে প্রবাসী বাংলাদেশীরা। তিনি বলেন, ফ্লাইট বন্ধ হলেও ব্যাংকের কিস্তি, উড়োজাহাজের রক্ষণাবেক্ষণ, বিভিন্ন কর, সিভিল এভিয়েশনের নানা চার্জ, বিদেশের কার্যালয়ের খরচ কর্মীদের বেতন ঠিকই পরিশোধ করতে হচ্ছে। অবস্থায় সরকারের সহায়তা না পেলে বন্ধের ঝুঁকিতে পড়বে এয়ারলাইনসগুলো।

এদিকে এপ্রিল দেশের পর্যটন খাতে নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে আর্থিক ক্ষতির হিসাব করে বেসামরিক বিমান পরিবহন পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীর কাছে চিঠি দিয়েছে প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশনের (পাটা) গ্লোবাল এক্সিকিউটিভ বোর্ড মেম্বার বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের চেয়ারম্যান শাহীদ হামিদ। চিঠিতে ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত আর্থিক ব্যবসা হারানোর চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে এভিয়েশন খাতে বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলো ব্যবসা হারাবে ৬০০ কোটি টাকার এবং খাতে চাকরি হারানোর আশঙ্কা রয়েছে দুই হাজারজনের। এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হারাবে ট্রাভেল এজেন্টরা, চাকরি হারাতে পারেন ১৫ হাজার।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন