দুর্যোগকালে এক সমবায় সমিতির মহৎ উদ্যোগ

রুহিনা ফেরদৌস

কিছু বন্ধু আর শুভানুধ্যায়ী মিলে বছর তিনেক আগে গড়ে তোলেন গ্রেটার ইউনিটি ফর রিয়্যালিটি নামে একটি সমবায় সমিতি। মূলত সদস্যদের অর্থনৈতিকভাব স্বাবলম্বী করে তোলা এবং বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। এর ধারাবাহিকতায় বাগেরহাটে ভূমি বুক ক্যাফে অ্যান্ড গেস্ট হাউজ, কৃষি খামার এবং আইটি খাতে বিনিয়োগ করেন তারা।

এর মধ্যে নভেল করোনাভাইরাসের হানায় যখন গোটা বিশ্বের অস্থিরতার ঢেউ দেশেও আঘাত করলো তখন এই সমিতির সদস্যরা আর হাত গুটিয়ে বসে থাকলেন না। ২৭ মার্চ সমিতির পূর্ব নির্ধারিত এজিএম স্থগিত করে ১৪ তারিখেই করণীয় ঠিক করতে নেমে পড়েন সদস্যরা। 

১৮ মার্চ সিদ্ধান্ত নিয়ে পরের দিনই শুরু হয় মাস্ক তৈরির কাজ। বাগেরহাটের যে বুক ক্যাফে অ্যান্ড গেস্ট হাউজে দৈনিক খদ্দেরদের খাবার পরিবেশন করা হতো রাতারাতি সেটি হলে গেল মাস্ক তৈরির কারখানা। উৎপাদনমূল্যে মাস্ক বিক্রির পাশাপাশি সদর উপজেলার প্রতিটি গ্রামে মাইকিং করে জনসচেতনতা তৈরির কাজেও নেমে পড়েন এ সমিতির এক দল স্বেচ্ছাসেবী। তাদের উদ্যোগেই বাজারে মাস্কের দাম কমে যায় এবং দিন দুয়েক পরে আরো কিছু সংগঠন এ কাজে এগিয়ে আসে। বাগেরহাটে মাস্কের সঙ্কট শেষ হয়ে যায়।

এ পর্যন্ত করেই থেমে যাননি এ স্বেচ্ছাসেবীরা। সারাদেশে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের (পিপিই) সঙ্কটের মুখে চিকিৎসকরা যখন অসহায়ত্ব প্রকাশ করছেন, তখন ২১ মার্চ স্থানীয় চিকিৎসক এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন মেনে পিপিই গাউন তৈরি শুরু করেন তারা। সরকারি হাসপাতাল থেকে শুরু করে বাগেরহাটের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রতিটি চিকিৎসক এখন পিপিই সুরক্ষার অধীনে। তাদের উদ্যোগের পরে সরকারের পক্ষ থেকে এবং ব্যক্তি উদ্যোগেও চিকিৎসকদের পিপিই বিতরণ করা হয়। 

এদিকে ২২ মার্চ এই সংগঠনের তিনজন সদস্য করোনার প্রাদুর্ভাব শেষ না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তারা তিনটি ধাপে কাজ সাজিয়েছেন: ১৮ থেকে ৩০ মার্চ সুরক্ষাকাল, ৩১ মার্চ থেকে ১০ এপ্রিল খাদ্য সঙ্কট মোকাবেলা এবং ১০ এপ্রিল থেকে পরবর্তী সময়ের অজানা ভয়াবহতা সামাল দিতে সম্মুখ সমরের জন্য প্রস্তুত থাকা। 

সমিতির পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ

এ সমবায় সমিতি এখন পর্যন্ত ১৭ হাজারের বেশি মাস্ক, ৩০০ এর বেশি পিপিই বিনামূল্যে অথবা উৎপাদনমূল্যে বিতরণ করেছে। এখন তারা মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন খাবারের প্যাকেট।

সরকারি ত্রাণ বিতরণ শুরুর আগে থেকেই তারা বাগেরহাটের অন্তত ২০ হাজার দিনমজুর এবং শ্রমজীবী মানুষের কাছে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে এরই মধ্যে এক হাজার মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে দিয়েছেন। তহবিলের জোগান সাপেক্ষে এই ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন সমিতির সদস্যরা।

    করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরবেন না এই ত্রয়ী-এমনই প্রত্যয় তাদের।

প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক মুশফিকুর রহমান টুকু বলেন, আমরা শুধু নিজের জন্য বাঁচবো নাকি আমার বেঁচে থাকায় শক্তি পাবে অন্য কেউ- এই প্রশ্নের ফায়সালা করেই আমরা মাঠে নেমেছি এবং থাকবো শেষ পর্যন্ত।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন