মহামারীতে ৩৫০ কোটি ডলার সম্পদ বাড়লো সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ধনীর

বণিক বার্তা অনলাইন

করোনাভাইরাস মহামারীতে বিশ্ব অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থা। পুঁজিবাজারে ধস অব্যাহত। কিন্তু এর মধ্যে বাজিমাত করলো সিঙ্গাপুরের একটি ভেন্টিলেটর প্রস্তুতকারক কোম্পানি। এরই মধ্যে এ কোম্পানির তিন প্রতিষ্ঠাতার সম্পদ বেড়েছে ৭০০ কোটি ডলার। 

করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দৈনিক যখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে তখন জীবনরক্ষায় অপরিহার্য হয়ে উঠছে ভেন্টিলেটর বা কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস যন্ত্র। ফলে এ ডিভাইসের ব্যবসাও বাড়ছে অবিশ্বাস্য গতিতে। এর মধ্যে শেনঝেন মিনড্রে বায়োমেডিক্যাল ইলেকট্রনিক্স কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে ৪০ শতাংশ। 

এ কোম্পানির চেয়ারম্যান লি শিতিং সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। ব্লুমবার্গ বিলিয়নেয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী, এ বছর তার সম্পদ বেড়েছে ৩৫০ কোটি ডলার। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তার মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৫০ কোটি ডলার। ফলে এই মহামারীর মধ্যে এক লাফে তিনি বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ লাভবান ব্যক্তির মধ্যে একজন হলেন। যেখানে বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষ ধনী জেফ বেজোসের সম্পদের পরিমান বেড়েছে ৩৪০ কোটি ডলার, আর বিল গেটসের সম্পদ কমেছে ১ হাজার ৫৩০ কোটি ডলার।

করোনা প্রাদুর্ভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য খাতে যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে তাতে বিশেষ করে ভেন্টিলেটরের চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। করোনা আক্রান্ত সঙ্কটাপন্ন রোগীকে বাঁচিয়ে রাখতে এ ডিভাইসের বিকল্প নেই। ফোর্ড মোটর থেকে জেনারেল মোটরস পর্যন্ত গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও এখন ভেন্টিলেটর তৈরি করছে। 

মিনড্রে কোম্পানির বোর্ড সেক্রেটারি লি ওয়েনমেই বলেন, বিভিন্ন দেশের হাসপাতালে যে পরিমাণ ভেন্টিলেটর রয়েছে বর্তমান চাহিদা তার কমপক্ষে ১০ গুণ। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো জানিয়েছেন, এ রাজ্যে মাত্র ছয় দিনের মধ্যে সব ভেন্টিলেটর ব্যবহৃত হয়ে গেছে।

যেখানে বিশ্বব্যাপী করোনায় মৃতের সংখ্যা ৫৩ হাজারে দাঁড়িয়েছে, আক্রান্ত ছাড়িয়ে গেছে ১০ লাখ। ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ইতালি এবং স্পেন। যুক্তরাষ্ট্রেও ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি সতর্ক করে বলেছেন, এদেশে করোনায় ১ লাখ প্রাণহানি হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের দ্য সোসাইটি অব ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন আশঙ্কা করছে, যুক্তরাষ্ট্রে ৯ লাখ ৬০ হাজার রোগীর ভেন্টিলেটর সহায়তা লাগতে পারে। যেখানে দেশে এ মেশিন আছে মাত্র প্রায় ২ লাখ। করোনায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ইতালিতে। এদেশে ভেন্টিলেটরের তীব্র সঙ্কটের কারণে রোগীদের মধ্যে অগ্রাধিকার বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন চিকিৎসকরা। ফলে শুধু ভেন্টিলেটরের অভাবে অনেক বয়স্ক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।

গত মাসের শেষ নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদন পেয়েছে মিনড্রে। বিপর্যয়কালে জরুরি ভিত্তিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসার সুযোগ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। অনুমোদনের এ ত্বরিৎ প্রক্রিয়ার সুযোগে চীনা কোম্পানি দ্রুত যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ করছে বলে মনে করছেন সাইটিক সিকিউরিটিজ কোম্পানির বিশ্লেষক তিয়ান জিয়াকিয়াং।

মিনড্রের প্রতি মাসে ৩ হাজার ভেন্টিলেটর তৈরির সক্ষমতা রয়েছে। তবে চীনে এরকম আরো বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে বেইজিং ইয়নমেড কোম্পানি গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন পেয়েছে। ভেন্টিলেটর প্রস্তুতকারক আরেক কোম্পানি জিয়াংসু ইউইউয়ে মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট অ্যান্ড সাপ্লাই কোম্পানির শেনজেন সূচক বেড়েছে ৯১ শতাংশ। এতে কোম্পানির বাজারমূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫০ কোটি ডলারে।

মিনড্রের বাজার মূলধন এখন ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। কিন্তু আরেক চীনা জায়ান্ট ডাবলিনভিত্তিক মেডট্রনিক পিএলসির বাজার হিস্যার তুলনায় এটি একেবারে নগণ্য বলে মনে করছেন ব্লুমবার্গ ইন্টেলিজেন্সের বিশ্লেষক নিক্কি লু। 

মিনড্রে বলছে, ইউরোপ থেকে ক্রয়াদেশ বেড়েছে নাটকীয়ভাবে। শুধু ইতালিতেই প্রথম চালানে গেছে ১০ হাজার ভেন্টিলেটর এবং মনিটর। চীনে এ কোম্পানির ১৭টি সহযোগী প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং বিশ্বের ৩০টি দেশে তাদের কার্যক্রম রয়েছে। 

হংকংয়ের শু হ্যাং এবং চেং মিংঘের সঙ্গে ১৯৯১ সালে এ কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন বর্তমান চেয়ারম্যান লি শিতিং। লি সিঙ্গাপুরের নাগরিক। তাদের তিন জনের মোট সম্পদ বেড়েছে ৭০০ কোটি ডলার। তবে ভেন্টিলেটর ব্যবসার এ রমরমা চিরস্থায়ী নয়। ব্লুমবার্গ ইন্টেলিজেন্সের বিশ্লেষক লু বলছেন, যেহেতু অনেক দেশেই করোনার বিস্তার বাড়ছে ফলে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাসের ডিভাইস হিসেবে এটির চাহিদা বাড়বে। কিন্তু প্রাদুর্ভাব কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে নিশ্চিতভাবে চাহিদা কমে যাবে।

সূত্র: ব্লুমবার্গ

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন