কভিড-১৯

বিশ্বব্যাপী আক্রান্তের সংখ্যা ১০ লাখের কাছাকাছি

বণিক বার্তা ডেস্ক

নভেল করোনাভাইরাস ডিজিজ বা কভিড-১৯- বিশ্বব্যাপী সংক্রমিতের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখের কাছাকাছি পৌঁছেছে। যার অর্ধেকের বেশি ইউরোপে। আর মৃতের সংখ্যাও ৫০ হাজারের কাছাকাছি। যেখানে অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে এগিয়ে ইউরোপ। মরণঘাতী ভাইরাসটি ইউরোপের মধ্যে ইতালি, স্পেন ফ্রান্সে সবচেয়ে বিধ্বংসী রূপ নিয়েছে। এর মধ্যে স্পেনে প্রতিদিনই মৃতের সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় বাড়ছে। গতকাল দেশটির মৃতের তালিকায় নতুন করে আরো প্রায় এক হাজার ব্যক্তি যুক্ত হয়েছেন। খবর এএফপি।

গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহানে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হলেও এটি এখন বিশ্বের প্রতিটি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে ইউরোপে। বিশ্বব্যাপী ভাইরাসটির সংক্রমিত মৃতের আপডেট তথ্য প্রকাশ করছে যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সিস্টেমস সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং। প্রতিষ্ঠানটির দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল রাত পৌনে ৯টা পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী সংক্রমিতের সংখ্যা দাঁড়ায় লাখ ৫৬ হাজার ৫৮৮ জনে। আর ভাইরাসটি সংক্রমিত হয়ে মৃতের সংখ্যা ছিল ৪৮ হাজার ৫৮৩ জনে। যার মধ্যে প্রায় ৩৪ হাজার ইউরোপের বাসিন্দা।

এর মধ্যে কয়েক সপ্তাহ ধরে মৃতের সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধির তালিকায় রয়েছে স্পেন। দেশটিতে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিয়ে গতকাল পর্যন্ত দেশটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার জনে। আর দেশটিতে সংক্রমিতের সংখ্যা লাখ ১০ হাজার ছাড়িয়েছে।

অন্যদিকে ইউরোপের মধ্যে সংক্রমিতের তালিকায় শীর্ষে মৃতের তালিকায় বিশ্বে শীর্ষে থাকা ইতালিতে গতকাল পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার ১৫৫ জনে। আর সংক্রমিত হয়েছেন লাখ ১০ হাজারের বেশি। দেশটিতে মৃত সংক্রমিতের সংখ্যা এখন কমে এলেও ফ্রান্স, ব্রিটেনসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশে প্রতিদিনই সংখ্যা বাড়ছে।

এর মধ্যে গতকাল রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ফ্রান্সে মৃতের সংখ্যা ছিল হাজার ৩২। আর সংক্রমিতের সংখ্যা ছিল ৫৭ হাজার ৭৮০। আর ব্রিটেনে সংক্রমিত মৃতের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৩৪ হাজার ১৬৬ হাজার ৯৯১। এছাড়া বেলজিয়াম জার্মানিতেও সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। আর ইউরোপের বাইরে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরান। দেশটিতে গতকাল পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা হাজার ১৬০। আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান টেড্রোস অ্যাডহ্যানম মনে করেন সংক্রমিতের সংখ্যা যেভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, তাতে করে একদিনের মধ্যে এটি ১০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে।

এদিকে ভাইরাসটির সংক্রমণ ঠেকাতে বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষকে লকডাউন করে রাখা হয়েছে। এতে করে শিল্প-কারখানা থেকে শুরু করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। যা বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর বড় ধরনের চাপ তৈরি করছে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত সংক্রমিতের তালিকায় শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্রে গত এক সপ্তাহে নতুন করে আরো সাড়ে ৬৬ লাখ মানুষ বেকার ভাতার জন্য আবেদন করেছে।  অর্থাৎ দেশটির বেকারত্বের তালিকায় নতুন করে সংখ্যাটা যুক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে সরকার। একই অবস্থা মরণঘাতী ভাইরাসটির হটস্পট তালিকায় অন্যতম শীর্ষে থাকা স্পেনেও। দেশটিতে গেল মাসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে মানুষ চাকরি হারিয়েছে।

মরণঘাতী ভাইরাসটি অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশ থেকে শুরু করে ভঙ্গুর অর্থনীতির দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপরও বড় ধরনের চাপ তৈরি করেছে। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সামনে থেকে কাজ করা চিকিৎসক, নার্স স্বাস্থ্যকর্মীরা আরো বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। এদেরই একজন নার্স ইস্টার পিসসিনিনি। ইতালির উত্তরাঞ্চলীয় বার্গামোর একটি হাসপাতালে কর্মরত ২৭ বছর বয়সী নার্স বলেন, প্রতিদিন সকালে কাজ শুরুর আগে আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি, যেন সবকিছু ঠিক হয়ে যায়। আমি সত্যি আমার নিজের জন্য চিন্তা করি না। কারণ আমি অনেক নিরাপত্তার মধ্যে থাকি। আমি চাই, আমার রোগী যেন সুস্থ হয়ে যায়।

এদিকে ভাইরাসটিতে আগে বয়স্ক মানুষেরা আক্রান্ত মারা গেলেও ধীরে ধীরে এটি সব বয়সী যেকোনো অবস্থায় থাকা ব্যক্তির শরীরে দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে ফ্রান্সে ১৬ বছর বয়সী, বেলজিয়ামে ১২ বছর বয়সী এবং ব্রিটেনে ১৩ বছর বয়সী একজন করে তরুণ মারা গেছে। যাদের সবাই শারীরিকভাবে সুস্থ ছিল বলে জানিয়েছে তাদের পরিবার।

এর চেয়ে ভয়াবহ তথ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রে ছয় সপ্তাহ বয়সী এক শিশু ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছে। যেটিকে ভবিষ্যতের জন্য বড় ধরনের অশনিসংকেত হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। অবস্থায় আসন্ন দিনগুলোতে ভাইরাসটি মোকাবেলায় আরো কঠোর পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সামনে আরো ভয়াবহ দিন অপেক্ষা করছে বলে সতর্ক করে ট্রাম্প বলেন, চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মার্কিনরা ভয় পাবে না, হতাশও হবে না।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন