করোনার প্রভাব প্রশমনে তিন মাসে প্রয়োজন ৩০ হাজার কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে রফতানি খাতের বৈশ্বিক চাহিদা অনেক কমে গেছে। সংকটে আছে অভ্যন্তরীণ চাহিদাও। অবস্থায় অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে মার্চ ২০২০ থেকে প্রথম তিন মাসে আনুমানিক ৩০ হাজার কোটি টাকা প্রাথমিক সহায়তার প্রয়োজন পড়বে বলে জানিয়েছে শিল্প খাত ব্যবসায়ীদের ১১টি সংগঠন। করোনার প্রভাব প্রশমিত করতে অর্থনীতিতে পরিমাণ নগদ অর্থের সঞ্চার করতে  সরকারের প্রতি সুপারিশ করেছে সংগঠনগুলো।

গতকাল  সংগঠনগুলোর পাঠানো সমন্বিত প্রস্তাবনায় প্রাথমিক সহায়তার আনুমানিক পরিমাণ উল্লেখ করা হয়। দেশের সেবা খাত শিল্প খাতের শ্রমিকদের মজুরি অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের ভিত্তিতে আনুমানিক হিসাব করা হয়েছে। আর্থিক পদক্ষেপের মধ্যে করের বোঝা প্রশমনের কথাও সরকার চিন্তা করতে পারে বলে সুপারিশ করেছে সংগঠনগুলো।

১১ সংগঠন হচ্ছে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই), বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন (বিইএফ), বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ), বাংলাদেশ চা সংসদ (বিসিএস), বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএমএ), বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএসএ), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএফএ), লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এলএফএমইএবি) বাংলাদেশ এগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন (বাপা)

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নভেল করোনাভাইরাসের কারণে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারীর ফলে দেশীয় শিল্প খাতে উদ্ভূত পরিস্থিতির আলোকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় যথাযথ ঊর্ধ্বতন নীতিনির্ধারণী কর্তৃপক্ষকে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের তরফ থেকে গত ২৪ মার্চ বিস্তারিত সুপারিশ পেশ করা হয়, যার আলোকে এরই মধ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এজন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক সাধুবাদ জানাই। তবে যে সুপারিশগুলোর বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি, সেগুলোও যথাযথ কর্তৃপক্ষের বিবেচনাধীন আছে বলে বিশ্বাস করে জানিয়ে সংগঠনগুলো আশা প্রকাশ করে, রফতানিমুখী শিল্প খাতের মতো দেশীয় শিল্প খাতের জন্যও প্রণোদনার বিষয়টি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিবেচনায় আনবে।

পৃথিবীর অন্যতম ঘন জনবসতিপূর্ণ জনবহুল দেশ হওয়ায় আমরা আরো উচ্চঝুঁকির মধ্যে আছি এমন তথ্য উল্লেখ করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, বিশ্ব অর্থনীতি বিরাট ধাক্কা খেয়েছে এবং অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, শিগগিরই থেকে উত্তরণ ঘটবে না। শুধু অভ্যন্তরীণ কারণেই নয়, বৈশ্বিক কারণেও আমাদের অর্থনীতি হুমকির মুখে। আমাদের ব্যবসায়ী অংশীদার দেশগুলো যেমনচীন, ইতালি, জাপান, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া ইত্যাদি ভাইরাসে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা উপলব্ধি করছি, এর প্রতিক্রিয়ায় আগামী দিনে তাদের অর্থনীতি ধীরগতিসম্পন্ন হতে যাচ্ছে।

দেশীয় বাজারেও খাদ্য, ওষুধ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ব্যতীত অন্যান্য জিনিসের চাহিদা কমে যাবে, এরই মধ্যে এমন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে জানিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চীন ব্যতীত আমাদের অন্যান্য ব্যবসা অংশীদার দেশে পরিস্থিতি সহসা খুব বেশি উন্নতি হবে না। এছাড়া পহেলা বৈশাখ রমজান মাস খুব সন্নিকটে এবং ঈদুল ফিতরও সামনেই, যে সময়ে বাস্তবিক কারণেই ব্যক্তি ব্যবসায়ী সংগঠনের জন্য অতিরিক্ত অর্থের প্রবাহ বিশেষভাবে জরুরি।

পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরিমাপযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণসহ প্রস্তাবের ওপর বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রস্তুত করার জন্য অতিসত্বর সরকার অর্থনীতিবীদ, ব্যবসায়ী নেতা, ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সমাজবিজ্ঞানী অন্যান্য বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে একটি স্বাধীন টাস্কফোর্স গঠন করার পরামর্শ দিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, টাস্কফোর্স প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের পরামর্শ দেবে।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন