করোনা-পরবর্তী প্রভাব

বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তারল্য সুবিধা চেয়েছে বিএলএফসিএ

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনাভাইরাস-পরবর্তী পরিস্থিতিতে আমানতকারী গ্রাহকদের সহায়তার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তারল্য সুবিধা চেয়েছে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ইকুইটির বিপরীতে তারল্য সুবিধা চেয়েছে। সম্প্রতি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলএফসিএ) নির্বাহী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরই মধ্যে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

গভর্নরের কাছে পাঠানো চিঠিতে বিএলএফসিএ জানিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা তাদের সদস্যদের কিছু বিষয় মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সরকারের নির্দেশনা মেন চলা এবং ঋণ শ্রেণীকরণ নীতিমালা শিথিল করা। প্রতিনিয়ত ঋণগ্রহীতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে তাদের কী পরিমাণ ক্ষতি হতে পারে সেটি জানার চেষ্টা করা এবং তাদের কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্নভাবে চালু রাখার জন্য কী ধরনের সহায়তা প্রয়োজন সেটি নিরূপণ করা। ঋণ আদায়ের হার কমার পাশাপাশি আমানত উঠিয়ে নেয়ার প্রবণতার কারণে প্রতিটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে নিয়মিতভাবে তাদের তারল্য পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে হবে, যাতে কী পরিমাণ তারল্য ঘাটতি হতে পারে সেটি বোঝা যায়। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী ঘাটতি মোকাবেলায় সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নিতে হবে। তাছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণ জনগণের অর্থ কিংবা সুদ প্রদান বন্ধ করতে পারবে না।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুই বছর ধরে চরম তারল্য সংকটে রয়েছে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, চলমান পরিস্থিতির কারণে সেটি আরো তীব্র হবে। এজন্য তাদের জরুরি ভিত্তিতে তারল্য সহায়তা প্রয়োজন। প্রত্যেক আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে তাদের ইকুইটির বিপরীতে একটি বিশেষ উত্তোলন সীমা (স্পেশাল ড্রয়িং লিমিট) দিতে হবে। সাধারণ মানুষকে অর্থ পরিশোধের বিপরীতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উত্তোলন সীমার মধ্যে তারল্য সুবিধা নিতে পারবে। সুবিধা বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। বিশেষ উত্তোলন সীমার সুদের হার হবে প্রচলিত নীতি সুদহারের সমান। আগামী বছরের জুন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে নেয়া অর্থের বিপরীতে কোনো কিস্তি দিতে হবে না। আগামী বছরের জুনের পর থেকে ২০টি যান্মাষিক কিস্তিতে ১০ বছরের মধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থ ফেরত দিয়ে দেবে। বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হিসাব খেলাপি থাকবে না তারাই তহবিলের সুবিধা পাবে। যদি কোনো প্রতিষ্ঠান  অর্থ ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সে প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বাজেয়াপ্ত বিক্রি করে অর্থ আদায় করবে।

তাছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিতে হবে যাতে তারা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে থাকা কল মানি, ট্রেজারি লাইন, এফডিআর কিংবা মেয়াদি ঋণ বছরের জুন পর্যন্ত উঠিয়ে না নেয়। এক্ষেত্রে এসব তহবিলের সুদের হার হবে সর্বোচ্চ শতাংশ।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পাক্ষিক ভিত্তিতে সিআরআর সংরক্ষণের বিদ্যমান হার দশমিক শতাংশ থেকে কমিয়ে শতাংশ এবং দৈনিক ভিত্তিতে সংরক্ষিত এসএলআরে বিদ্যমান হার দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে দশমিক ৭৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে বিএলএফসিএ।

জানতে চাইলে বিএলএফসিএর প্রেসিডেন্ট আইপিডিসি ফিন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মমিনুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, করোনাভাইরাস-পরবর্তী সময়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের পাশে দাঁড়াতে হবে। ব্যবসার জন্য তাদের নতুন তহবিলের প্রয়োজন হবে। আমানতকারীদের একটি অংশ আমানতের অর্থ উঠিয়ে নেবে। ফলে সময় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বাড়তি তারল্যের প্রয়োজন হবে। এজন্য আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ইকুইটির বিপরীতে তারল্য সুবিধা চেয়েছি।

বর্তমানে দেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩৫টি। এর মধ্যে সম্প্রতি একটি প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স পেয়েছে, তবে কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন