৩ হাজার হাজতির সাময়িক মুক্তির সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের কারাগারগুলোয় বন্দি রয়েছে ধারণক্ষমতায় কয়েক গুণ বেশি। থাকতে হয় গাদাগাদি করে। অবস্থায় প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকায় অতিরিক্ত বন্দি কমানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে বিভিন্ন মামলায় বিচারাধীন প্রায় তিন হাজার হাজতিকে সাময়িকভাবে মুক্তির প্রস্তাব করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।

নভেল করোনাভাইরাসজনিত রোগ কভিড-১৯ অতিমাত্রায় ছোঁয়াচে বলে কারাগারগুলোয় ঝুঁকির মাত্রা অত্যন্ত বেশি। চীনসহ কয়েকটি দেশের কারাগারে এর আগে ভাইরাস ছড়ানোর ঘটনা ঘটেছে। ঝুঁকি এড়াতে ইরানও এর আগে বিশেষ ব্যবস্থায় বন্দিদের সাময়িক মুক্তি দিয়েছে।

কারা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. আবরার হোসেন গতকাল বণিক বার্তাকে বলেন, জামিনযোগ্য ছোটখাটো অপরাধে যারা কারাগারে রয়েছে, রকম তিন হাজারের সামান্য বেশি হাজতির নাম প্রস্তাব আকারে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে ওই প্রস্তাব যাবে আইন মন্ত্রণালয়ে। সেখানে আপত্তি না থাকলে পাঠানো হবে আদালতে। শেষ পর্যন্ত বিচারকই সিদ্ধান্ত নেবেন, জামিন দেয়া যায় কিনা। মুক্তির বিষয়টা বিচারকদের হাতে, আমাদের হাতে নয়।

কারা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিশ্বে মহামারী আকার ধারণ করা করোনা সংক্রমণ মোকাবেলায় এরই মধে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা অবলম্বন করা হয়েছে। বন্দির সর্বোচ্চ সুরক্ষায় নেয়া হয়েছে বিশেষ উদ্যোগও। প্রত্যেক বন্দিকে করোনাভাইরাস আছে কিনা তা পরীক্ষার জন্য পাঁচটি কেন্দ্রীয় কারাগারে বসানো হয়েছে পাঁচটি থার্মাল স্ক্যানার। কিন্তু জেলা পর্যায়ের এবং নতুন নির্মিত কারাগারগুলো এখনো সুবিধার বাইরে রয়েছে। প্রাথমিকভাবে এসব কারাগারে ইনফ্রারেড থার্মোমিটার দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা মেপে বন্দিদের করোনা সংক্রমণ শনাক্তের কাজটি করা হচ্ছে। যদিও ইনফ্রারেড থার্মোমিটারের কার্যকারিতা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে বিশেষজ্ঞদের।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে কারাগারের ধারণক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি বন্দি সেখানে রয়েছে। ফলে কারাগারে থাকার স্থান সংকুলান থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই বন্দিদের নিদারুণ যন্ত্রণা পোহাতে হচ্ছে। এসব যন্ত্রণা থেকেই বন্দিরা মানসিক রোগসহ নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। দেশের কারাগারগুলোয় বন্দি ধারণক্ষমতা রয়েছে ৩৬ হাজার ৬১৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ বন্দি ৩৪ হাজার ৯৪০ নারী বন্দি হাজার ৬৭৪ জন। কিন্তু ধারণক্ষমতার বিপরীতে মোট বন্দি রয়েছে ৭৬ হাজার ৭৬৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫৭ হাজার ৬০৫ জন নারী রয়েছে হাজার ৩৪০ জন। কারাগারে বন্দিদের মধ্যে ১৮ হাজার ১০৩ জন সাজাপ্রাপ্ত বন্দি। মামলা বিচারধীন বন্দি রয়েছে ৫৮ হাজার ৫৮২ জন। মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত বন্দি রয়েছে হাজার ২৭০ জন। আর মায়ের সঙ্গে থাকা শিশুর সংখ্যা ২৭৮।

জেল কোড অনুযায়ী, কারাবন্দিরা প্রতিবার তাদের দুজন করে স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ কক্ষে গিয়ে আধঘণ্টা কথা বলতে পারে। একেক শিফটে সাক্ষাৎ কক্ষে কারাগার ভেদে হাজির হয় ৫০ থেকে ১৫০ বন্দি। তাদের বিপরীতে প্রতি বন্দির জন্য দুজন করে স্বজন সাক্ষাৎ কক্ষে যেতে পারে। সব মিলিয়ে একেক শিফটে কারা সাক্ষাৎ কক্ষে হাজির হয় কয়েকশ বন্দি তাদের স্বজনরা। কিন্তু সাক্ষাতের আগে স্বজনদের করোনা সংক্রমণ শনাক্তের কোনো উদ্যোগ এখনো নেয়া হয়নি।

বন্দিদের নিরাপত্তা দেখভালের জন্য প্রতিটি কারাগারেই দায়িত্ব পালন করেন কারারক্ষীরা। প্রতিদিন তারা নির্ধারিত সময়ে ডিউটিতে অংশ নিতে কারা অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন। তবে এখনো তাদের জন্য কোনো প্রটেকশন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। কেবল স্যানিটাইজার ব্যবহার করে এবং ইনফ্রারেড থার্মোমিটার দিয়ে তাপমাত্রা মেপে করোনা সংক্রামণ শনাক্ত করেন তারা। যদিও দেশের কারাগারগুলোয় চীনা, ভারতীয়সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের অপরাধীরাও বন্দি রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন