পোলট্রি শিল্পে বিপর্যয়ের শঙ্কা

খাদ্যসহায়তায় মুরগি-ডিম সংযোজন ও অন্য সমর্থনমূলক পদক্ষেপ নেয়া হোক

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশে পোলট্রি শিল্প বা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হাঁস-মুরগি পালনের চর্চা বেড়েছে লক্ষণীয় মাত্রায়। নতুন নতুন বিনিয়োগের সুবাদে বছরে ১০-২০ শতাংশ হারে শিল্পের প্রবৃদ্ধি ঘটছে। এটা যেমন জাতীয় অর্থনীতির বৃদ্ধিতে সহায়ক, তেমনি মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণেও এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু হঠাৎ করে বিপর্যয়ের ছায়া নেমে এসেছে শিল্পে। এখন সারা দেশে চলছে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সাধারণ ছুটি। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না মানুষ, বাজারেও যাচ্ছে কম। ফলে ভোক্তা পর্যায়ে কমেছে পোলট্রি মুরগি ডিমের চাহিদা। আবার বড় মুরগি বিক্রি না হওয়ায় নতুন করে একদিনের বাচ্চা কিনছেন না খামারিরা, এতে নিরুৎসাহিত হচ্ছে বাচ্চা উৎপাদনও; যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে পুরো শিল্পে। অবস্থায় মুরগি ডিম উৎপাদনের গড় ব্যয়ের সঙ্গে বিক্রয়মূল্যের বড় ধরনের ব্যবধান সৃষ্টি হয়েছে। বিক্রি করে উৎপাদন খরচই উঠছে না সারা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা পোলট্রি হ্যাচারিগুলোর এবং খাতের ব্যবসায়ীদের। পরিস্থিতি দীর্ঘতর হলে বড় ধরনের লোকসানে পড়বে পোলট্রি শিল্প। কাজেই শিল্প বাঁচাতে সরকারের সহায়তামূলক পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।

পোলট্রি মুরগি ডিমের চাহিদা হ্রাসের ক্ষেত্রে শুধু যে সাধারণ ছুটি হাটবাজারে মানুষের সীমিত চলাচল ভূমিকা রেখেছে তা নয়, বরং বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া আতঙ্ক। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের খবর ছড়াচ্ছে নেট দুনিয়ায়, যার অধিকাংশই ভিত্তিহীন। নেহাতই গুজব। কিন্তু সেই গুজবই বিশ্বাস করছে সাধারণ মানুষ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ কেউ ছড়িয়েছে, ব্রয়লার মুরগি ডিম থেকে করোনাভাইরাস ছড়াচ্ছে। কিছু ভুয়া ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। যা দেখে সাধারণ মানুষ অযথা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। নিজে আতঙ্কিত হয়ে অন্যদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করছে গুজব শেয়ার করে। ফলে অনেকেই কিনছে না মুরগি ডিম। এতে ভাটা পড়েছে দৈনন্দিন চাহিদায়। অবস্থা থেকে উত্তরণে মানুষকে সঠিক তথ্য জানাতে হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ, করোনার প্রাদুর্ভাবকালীন সংকটে শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে মানুষের পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা খাদ্যতালিকার প্রথমে প্রাণিজ আমিষ তথা মাছ, মাংস ডিম রাখার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। তুলনামূলক কম দাম হওয়ায় আমাদের নিম্ন আয়ের মানুষ সহজেই ব্রয়লার মুরগি ডিম কিনতে এবং পরিভোগ করতে পারে। কিন্তু সেটি করতে হলে পোলট্রি পণ্য ঘিরে মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া অযথা ভীতি দূর করতে হবে। মানুষের কাছে সঠিক তথ্যটি তুলে ধরতে হবে। সংবাদমাধ্যমে -বিষয়ক প্রচার-প্রচারণা বাড়াতে হবে। প্রত্যেকের হাতে এখন মোবাইল রয়েছে। প্রয়োজনে মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে সচেতনতা বাড়ানো যেতে পারে।

চলমান সাধারণ ছুটিতে সব শ্রেণীর মানুষকে ঘরে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ফলে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন দিনমজুররা। খেটে খাওয়া মানুষ কাজ করতে না পারায় পরিবারের অন্ন জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন। সংগত কারণে সরকার নিম্নবিত্তদের দুঃখ-দুর্দশা বিবেচনায় খাদ্যসহায়তা কর্মসূচি জোরদার করেছে। তবে সেই কর্মসূচিতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে থাকছে চাল, ডাল, আলু তেল। পোলট্রি খাতের বিপর্যয়ের মুহূর্তে সরকার কর্তৃক ঘোষিত খাদ্যসহায়তা কার্যক্রমে ডিম, দুধ মুরগির মাংস অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। সংশ্লিষ্টদের অনেকেই পরামর্শ দিচ্ছেন। এতে পোলট্রি শিল্প যেমন উপকৃত হবে, তেমনি সাধারণ মানুষের প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগানোও সহজতর হবে। সুতরাং এটি আমলে নেয়া দরকার। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন, সংস্থা সমাজের উচ্চবিত্তরা নিম্নবিত্তদের ক্ষুধা নিবারণে এগিয়ে এসেছে। তারাও তাদের খাদ্যসহায়তায় পোলট্রি আইটেমগুলো সংযোজন করতে পারে বৈকি।

এরই মধ্যে যেসব পোলট্রি হ্যাচারির মালিক খামারি লোকসানে পড়েছেন, তাদের আর্থিক প্রণোদনা দেয়া চাই। ক্ষতিগ্রস্তদের ব্যাংকঋণের সুদ মওকুফ কিংবা কিস্তি স্থগিতকরণের ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে করোনা সংকটকালীন বিপর্যয়ের শঙ্কায় পড়া পোলট্রি শিল্পকে বাঁচাতে নানা আশ্বাসের কথা সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে। শুধু আশ্বাস নয়, দৃশ্যমান সমর্থনমূলক পদক্ষেপই পারে বিকাশমান পোলট্রি শিল্পের প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন