করোনা আতঙ্ক নিয়েই পেঁয়াজ তোলায় ব্যস্ত পাবনার চাষীরা

বণিক বার্তা প্রতিনিধি পাবনা

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে মরণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস। এর থাবা থেকে রক্ষা পায়নি বাংলাদেশও। করোনার বিস্তার রোধে সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। তার পরও দেশজুড়ে কাটছে না আতঙ্ক। অবস্থায় জমি থেকে পেঁয়াজ তোলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন পাবনার চাষীরা। 

কৃষকরা বলছেন, এখন মাঠ থেকে পেঁয়াজ তোলার ভরা মৌসুম। করোনাভাইরাস আতঙ্কে ঘরে বসে থাকলে সামান্য বৃষ্টিতে তা ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই কোনো উপায় না থাকায় এখনই পেঁয়াজ মাঠ থেকে তুলছেন তারা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে পাবনা জেলার ৪৯ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে সুজানগর সাঁথিয়া উপজেলায়। এর মধ্যে সাঁথিয়া উপজেলায় ১৬ হাজার ৫৭০ সুজানগরে ১৮ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। তবে অন্য উপজেলাগুলোয়ও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ তোলার ভরা মৌসুম। যে কোনো সময় বৃষ্টি শুরু হতে পারে। বৃষ্টি হলে ক্ষেতেই পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়ে যাবে। এমন একটা সময় দেশে করোনার মতো ভয়াবহ ভাইরাস দেখা দিয়েছে। কৃষকরা ভাইরাসজনিত সচেতনতা সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্বও বজায় রাখতে পারছেন না। তার পরও ভাইরাস সম্পর্কে কৃষকদের সচেতন করার চেষ্টা করছি আমরা। 

একদিকে বৃষ্টির শঙ্কা, অন্যদিকে করোনাভাইরাস আতঙ্ক। দুইয়ে মিলে উভয় সংকটে পড়েছেন চাষীরা। তাই বাধ্য হয়ে মাঠ থেকে পেঁয়াজ তুলছেন তারা। সেক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব কিংবা বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার মতো কোনো সুযোগ পাচ্ছেন না কৃষকরা। এতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে।

পাবনার ঐতিহ্যবাহী ঘুঘুদহ বিলপারের বিষ্ণুপুর গ্রামের বৃদ্ধ কৃষক আব্দুল খালেক বলেন, ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ তোলার সময় হয়ে গেছে। এখন ভরা মৌসুম। বর্তমানে বাজারে দামও ভালো। বৃষ্টি হলে পেঁয়াজ ঘরে রাখা যাবে না, দামও কম হবে। তাই করোনাভাইরাসের ভয়ে বসে থাকলে তো চলবে না। ফসল ঘরে তোলার পর করোনাভাইরাস নিয়ে ভাবা যাবে। 

সরজমিন আতাইকুলা থানার তৈলকুপী গ্রামের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকরা তাদের পরিবারের সদস্যসহ শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে পেঁয়াজ তুলছেন। কোনো কোনো জমিতে চার থেকে সাতজন শ্রমিক একসঙ্গে কাজ করছেন। তারা মাস্ক কিংবা গ্লাভস ছাড়াই কাজ করছেন। ফসলের মাঠেই খাওয়া-দাওয়া সারছেন সাবান ছাড়াই হাত ধুয়ে। শুধু পেঁয়াজ তোলার কাজ নয়, রসুন, গম ধানের জমিতেও দলবেঁধে কৃষি শ্রমিকদের কাজ করতে দেখা গেছে। 

মাঠে সপরিবারে পেঁয়াজ তোলায় ব্যস্ত দেখা গেল কৃষক গহের আলীকে। তিনি জানান, করোনাভাইরাসের জন্য বসে থাকলে পেঁয়াজ আর ঘরে উঠবে না, বৃষ্টি হলে সব শেষ হয়ে যাবে। বাজারে দামও পাওয়া যাবে না।

বেশ কয়েকজন কৃষকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একসঙ্গে -১০ জন নারী গোল হয়ে বসে পেঁয়াজের মাথা কাটছেন। পাবনার সব মাঠ আর কৃষকের বাড়িতেই এখন একই চিত্র।

পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (খামার বাড়ি) উপপরিচালক মো. আজহার আলী জানান, মাঠপর্যায়ে কৃষকদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করে করোনাভাইরাসের বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে। উপজেলা ইউনিয়নভিত্তিক কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে করোনাসংক্রান্ত ধারণা দিচ্ছেন। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মাঠ পর্যায়ে কর্মরত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কৃষকের পাশে থেকে পরামর্শ দিতে বলা হয়েছে। বিষয়টি নিয়মিত মনিটর করা হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন