কভিড-১৯ রোগীদের বাঁচাতে সাশ্রয়ী ভেন্টিলেটর নির্মাণে মরিয়া ভারত

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ফলে সৃষ্ট কভিড-১৯ রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা দিয়েছে ভেন্টিলেটর। হাসপাতালগুলোতে ভেন্টিলেটর সরবরাহ করতে সংগ্রাম করতে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে ভারতকে। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হিসেবে ভারতের সামনে চ্যালেঞ্জ আরো বেশি। হাজারো মানুষের প্রাণ বাঁচাতে ভারতের হাসপাতালগুলোতে সাশ্রয়ী ভেন্টিলেটর সরবরাহ করতে মরিয়া প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কিছু প্রতিষ্ঠান। এমন একটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে নোকা রোবোটিকস। পশ্চিম ভারতের শহর পুনেতে আট হাজার বর্গফুট বা ৭৪৩ বর্গমিটারের একটি কারখানায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির নবীন প্রকৌশলীরা। ভারতের শীর্ষ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করা ওই প্রকৌশলীরা এমন একটি স্টার্টআপের কর্মী, যা আড়াই বছর ধরে পানিবিহীন রোবট পরিবেশবান্ধব সৌরবিদ্যুৎ প্লান্ট তৈরি করে আসছিল। গত বছর নোকা রোবটিক্সের আয় হয়েছিল ২৭ লাখ রুপি বা ৩৬ হাজার ডলার। ওই কোম্পানিতে কাজ করা মেকানিক্যাল, ইলেকট্রনিক অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারদের গড় বয়স ২৬ বছর। 

ভারতের কাছে আনুমানিক ৪৮ হাজার ভেন্টিলেটর রয়েছে এবং এটা কেউ জানে না এর মধ্যে কতগুলো আসলে সচল রয়েছে। তবে এটা অনুমান করা যায়, সচল ভেন্টিলেটরগুলোর সবগুলোই অন্যান্য রোগে আক্রান্তদের জন্য ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) ব্যবহূত হচ্ছে।

কভিড-১৯- আক্রান্ত প্রতি ছয়জনের একজন মারাত্মক অসুস্থ হন, যাদের তীব্র শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ভারতের হাসপাতালগুলোর চিকিৎসকদেরও এই তিক্ত সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে, কাদের চিকিৎসা দিতে হবে কাদের দেয়া যাচ্ছে না। 

মূলত আমদানি কম্পোনেন্ট থেকে বর্তমানে ভেন্টিলেটর নির্মাণ করে যাচ্ছে অন্তত দুটি কোম্পানি। প্রতিটি ভেন্টিলেটরের দাম পড়ছে দেড় লাখ রুপি বা হাজার ৯৮৭ ডলার। এজিভিএ হেলথকেয়ার নামে একটি কোম্পানি এক মাসের মধ্যে ২০ হাজার ভেন্টিলেটর নির্মাণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে চীনের কাছে ১০ হাজার ভেন্টিলেটরের ক্রয়াদেশ পাঠিয়েছে ভারত, যা দেশটির সম্ভাব্য প্রয়োজনের কেবল ভগ্নাংশ পূরণে সক্ষম। 

নোকা রোবটিক্স যে ইনভেসিভ ভেন্টিলেটর তৈরি করতে যাচ্ছে, তা কিনতে ব্যয় হবে ৫০ হাজার রুপি বা ৬৬২ ডলার। কাজ শুরুর পাঁচদিনের মাথাতেই তিনটি প্রোটোটাইপ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে স্টার্টআপটির

সাত প্রকৌশলীর দলটি। ওই প্রোটোটাইপগুলো কৃত্রিম ফুসফুসে পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। অনুমোদন পেলে আগামী এপ্রিলের মধ্যে ওই যন্ত্রগুলো প্রস্তুত হবে এবং রোগীদের পরীক্ষায় ব্যবহূত হবে। বেঙ্গালুরুর জয়াদেবা ইনস্টিটিউট অব কার্ডিওভাসকুলার সায়েন্সেস অ্যান্ড রিসার্চের একজন কার্ডিওলজিস্ট এবং প্রকল্পটির গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা ডক্টর দীপক পদ্মামানবান বলেন, যন্ত্রটি অবশ্যই কাজ করবে বলে আশা রাখি। কৃত্রিম ফুসফুসের ওপর সিমিউলেশন করা হয়েছে এবং সেগুলো ঠিকমতো কাজ করেছে বলে মনে হয়েছে।

কম খরচে দেশীয় ভেন্টিলেটর নির্মাণের প্রচেষ্টা অবশ্যই আশাবাদী ঘটনা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার কানপুরভিত্তিক ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (আইআইটি) অধ্যাপক অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, মহামারীটি আমাদের এমনভাবে একত্রিত করেছে, যা আগে কখনো কল্পনাও করতে পারিনি। ইন্টারনেটে চিকিৎসা পণ্যসংক্রান্ত বিভিন্ন ওপেন সোর্স থেকে কীভাবে ভেন্টিলেটর নির্মাণ করা যায়, বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছেন তরুণ প্রকৌশলীরা। অনুমতি পাওয়ার পর প্রথম প্রোটোটাইপ তৈরিতে ওই প্রকৌশলীদের মাত্র ঘণ্টা সময় লেগেছে। বিবিসি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন