২০২০-২১ মৌসুম

রেকর্ড ছাড়াতে পারে বৈশ্বিক শস্য উৎপাদন

বণিক বার্তা ডেস্ক

শস্য উৎপাদনের চলতি মৌসুম শেষের পথে। নভেল করোনাভাইরাসের জেরে বৈশ্বিক খাদ্যশস্য উৎপাদন নিয়ে আগামী মৌসুমের প্রতিবেদন প্রকাশে খানিকটা বিলম্ব করেছিল ইন্টারন্যাশনাল গ্রেইন কাউন্সিল (আইজিসি) মহামারীটির সম্ভাব্য অগ্রগতি স্থিতিকাল সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণার জন্য অপেক্ষা করছিল প্রতিষ্ঠানটি। তবে দ্বিধা কাটিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির ২০২০-২১ মৌমুমের জন্য শস্যের বৈশ্বিক উৎপাদনসংক্রান্ত প্রথম সম্পূর্ণ প্রাক্কলন প্রতিবেদন। এতে জানানো হয়েছে, ২০২০-২১ মৌসুমে বিশ্বজুড়ে খাদ্যশস্য উৎপাদন রেকর্ড ছাড়াতে পারে। রয়টার্স ওয়ার্ল্ডগ্রেইনডটকম। 

আইজিসির পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২০-২১ মৌসুমে বিশ্বজুড়ে খাদ্যশস্যের সম্মিলিত উৎপাদন দাঁড়াতে পারে ২২২ কোটি টনে, চলতি মৌসুমের তুলনায় যা শতাংশ বেশি। 

প্রতিষ্ঠানটির মাসভিত্তিক সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, নভেল করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বা অঞ্চলের পরিবহন চলাচলে সীমাবদ্ধতা টানা হয়েছে। এতে শস্যের বীজ সারের মতো কৃষিকাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন উপকরণের সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তবে সব বাধা ডিঙিয়ে খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক উৎপাদনে চাঙ্গা ভাব বজায় থাকতে পারে। 

এদিকে উৎপাদন রেকর্ড বাড়লেও আগামী মৌসুমে খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক মজুদে নিম্নমুখী প্রবণতা বজায় থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আইজিসি। শস্যের বৈশ্বিক চাহিদা ব্যবহার বৃদ্ধি এর পেছনে মূল প্রভাবক হিসেবে কাজ করতে পারে। এমনকি মোট উৎপাদনকে ছাড়িয়ে যেতে পারে শস্যের বৈশ্বিক ব্যবহার। 

আইজিসির পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২০-২১ মৌসুমে খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক ব্যবহার বেড়ে ২২৩ কোটি টন ছাড়িয়ে যেতে পারে। চলতি মৌসুমে যার পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ২১৯ কোটি টন। সে হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে আগামী মৌসুমে খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক ব্যবহার বাড়তে পারে চার কোটি টন। 

প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, মহামারীর প্রকোপে কয়েকটি খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক চাহিদায় স্বল্পমেয়াদে তীব্র উত্থান দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে চাল গমজাতীয় খাদ্যপণ্যের বাজারে। তবে নির্দিষ্ট না হলেও নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দুর্বল হয়ে পড়তে পারে তা এখন প্রমাণিত, যা দীর্ঘমেয়াদে খাদ্যশস্যের বৈশিক ব্যবহার কমিয়ে আনতে পারে। এছাড়া শিল্পপণ্য উৎপাদনে খাদ্যশস্যের ব্যবহার বৃদ্ধি বৈশ্বিক মজুদে বাড়তি চাপ তৈরি করতে পারে। যেমন, ভুট্টা আখের মতো কৃষিপণ্য থেকে খাদ্যপণ্যের পরিবর্তে ইথানল উৎপাদনে ঝুঁকছে খাতসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো।

আইজিসির মতে, ২০২০-২১ মৌসুমে ভুট্টার বৈশ্বিক উৎপাদন বেড়ে ১১৬ কোটি টনে উন্নীত হতে পারে। চলতি মৌসুমে বিশ্বজুড়ে মোট ১১২ কোটি টন ভুট্টা উৎপাদন হতে পারে। অর্থাৎ চলতি মৌসুমের তুলনায় আগামী মৌসুমে খাদ্যপণ্যটির বৈশ্বিক উৎপাদন চার কোটি টন বাড়তে পারে। তবে পণ্যটির বৈশ্বিক ব্যবহার ১১৭ কোটি টনের নিচে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে, যা চলতি মৌসুমের তুলনায় অপরিবর্তিত। 

একই পরিস্থিতি বজায় থাকতে পারে গমের ক্ষেত্রেও। আইজিসি জানিয়েছে, আগামী মৌসুমে বিশ্বজুড়ে ৭৬ কোটি ৮০ লাখ টন গম উৎপাদন হতে পারে। চলতি মৌসুমে পণ্যটির উৎপাদন দাঁড়াতে পারে ৭৬ কোটি ৩০ হাজার টন। খাদ্যপণ্যটির বৈশ্বিক ব্যবহার বেড়ে ৭৬ কোটি টন ছাড়াতে পারে।

তবে ২০২০-২১ মৌসুমে গমের বৈশ্বিক মজুদ বেড়ে যাবৎকালের সর্বোচ্চে উঠতে পারে। এর পেছনে মূল ভূমিকা রাখতে পারে ভারত চীন। উভয় দেশেই গমের রেকর্ড উৎপাদনের পূর্বাভাস দিয়েছে আইজিসি। 

এদিকে বড় ধরনের উল্লম্ফন দেখা দিতে পারে সয়াবিনের বৈশ্বিক উৎপাদনে। তথ্যমতে, আগামী মৌসুমে বিশ্বজুড়ে মোট ৩৬ কোটি ৬০ হাজার টন সয়াবিন উৎপাদন হতে পারে। চলতি মৌসুমে পণ্যটির উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ৩৪ কোটি ১০ হাজার টন। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে কৃষিপণ্যটির বৈশ্বিক উৎপাদন বাড়তে পারে কোটি ৫০ হাজার টন। পণ্যটির বৈশ্বিক উৎপাদন বাড়াতে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের রেকর্ড উৎপাদন। চাহিদা বৃদ্ধি সত্ত্বেও পণ্যটির বৈশ্বিক মজুদ বাড়তে পারে। এর পেছনে পণ্যটির সরবরাহ পরিবহন সংকটকে দায়ী করেছে আইজিসি।

চাঙ্গা ভাব বজায় থাকতে পারে চালের বৈশ্বিক উৎপাদনেও। আইজিসির পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২০-২১ মৌসুমে বিশ্বজুড়ে মোট ৫৯ কোটি ৯০ লাখ টন চাল উৎপাদন হতে পারে। চলতি মৌসুমে খাদ্যপণ্যটির উৎপাদন প্রাক্কলন ধরা হয়েছে ৪৯ কোটি ৯০ লাখ টন। শীর্ষ রফতানিকারক দেশগুলোতে চালের আবাদ বৃদ্ধি এক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রাখতে পারে। 

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন