রাজনৈতিক ইস্যুকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনিজুয়েলার ওপর চলছে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে দেশটির জ্বালানি তেল খাত। কমতে শুরু করেছে জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলন। এ ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ সপ্তাহে ভেনিজুয়েলার অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন কমে গত পাঁচ মাসের সর্বনিম্নে নেমেছে। খবর রয়টার্স।
দেশটির জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ সপ্তাহে ভেনিজুয়েলার কূপগুলো থেকে প্রতিদিন গড়ে ৬ লাখ ৭০ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন করা হয়েছে। দেশটিতে জ্বালানি পণ্যটির দৈনিক উত্তোলনের এ পরিমাণ গত পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
ভেনিজুয়েলার সবচেয়ে বড় অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলনকারী অঞ্চল অরিনোকো অয়েল বেল্ট। মার্চের প্রায় পুরোটাজুড়ে এ অঞ্চল থেকে দৈনিক গড়ে ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৯৩০ ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন করা হয়েছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জ্বালানি তেল কোম্পানি পিডিভিএসএ সম্প্রতি এ তথ্য জানিয়েছে। জানুয়ারিতে এ অঞ্চলে দৈনিক গড়ে পাঁচ লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেল উত্তোলন করা হয়েছিল।
এছাড়া একই সময়ে পশ্চিম জুলিয়া অঞ্চলের কূপগুলো থেকে দৈনিক গড়ে ১ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অয়েল ফিল্ড থেকে দৈনিক গড়ে ১ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন করা হয়েছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অয়েল ফিল্ডে কর্মরত কয়েকজন কর্মী জানিয়েছে, মার্চের শুরুর দিকে অয়েল ফিল্ডটির একটি প্রধান জ্বালানি তেল উত্তোলনকারী স্টেশনে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এর জের ধরে এখান থেকে দৈনিক গড়ে ৪০ হাজার ব্যারেলের মতো জ্বালানি তেল উত্তোলন কমে গেছে। তবে এ বিষয়ে পিডিভিএসএ বা ভেনিজুয়েলার জ্বালানি তেলমন্ত্রীর পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য দেয়া হয়নি।
মার্চে অর্গানাইজেশন অব পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ বা ওপেকের কাছে পেশ করা প্রতিবেদনে ভেনিজুয়েলা জানিয়েছে, ২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশটিতে দৈনিক গড়ে সর্বনিম্ন ৮ লাখ ৬৫ হাজার ব্যারেল থেকে সর্বোচ্চ ৯ লাখ ১২ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, রাজনৈতিক বিষয়কে কেন্দ্র করে ২০১৭ সালে ভেনিজুয়েলার ওপর প্রথমবারের মতো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। গত বছরের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্র দেশটির সরকারি জ্বালানি তেল কোম্পানিকে এ নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত করে। অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ভেনিজুয়েলার প্রধান রফতানি পণ্য। সমাজতান্ত্রিক দেশটির অর্থনীতির মূল ভিত্তি এ খাত। ফলে এ খাতের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার জেরে ভেনিজুয়েলার অর্থনৈতিক সংকট আরো জোরালো হয়।
এদিকে গত আগস্টে এ ব্যাপারে কড়া নির্দেশ দেয় ওয়াশিংটন এবং ভেনিজুয়েলার সঙ্গে বাণিজ্য চলমান রাখায় কিউবা ও চীনের রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়। এ বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারী কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। ফলে ভারত, রাশিয়া ও চীনসহ বিশ্বের শীর্ষ জ্বালানি তেল আমদানিকারী দেশগুলো ধীরে ধীরে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করে ভেনিজুয়েলা থেকে। এতে দেশটির জ্বালানি তেল রফতানিতে ধস নামে। হুমকিতে পড়ে যায় সামগ্রিক অর্থনীতি।
এর মধ্যে চলতি বছরের শুরু থেকেই সমগ্র বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপ। জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদায় পড়েছে মন্দার ছাপ। অন্যদিকে গত মাসে চুক্তি ছাড়া শেষ হয়েছে ওপেক প্লাসের সর্বশেষ বৈঠক। মতানৈক্যের জেরে পণ্যটির মূল্যযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে সৌদি আরব ও রাশিয়াসহ কয়েকটি শীর্ষ উত্তোলনকারী দেশ। ফলে পণ্যটির দাম কমতে কমতে উপসাগরীয় যুদ্ধের পর থেকে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। পণ্যটির এ দরপতনে ওপেকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে পাবলিক বাজেট পেশে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে ভেনিজুয়েলাকে।
রফতানি চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে ভেনিজুয়েলার অভ্যন্তরীণ বাজারে জ্বালানি তেলের চাহিদা ব্যাপক হারে কমে গেছে। দেশটির দুর্বল অর্থনীতি এক্ষেত্রে মূল প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। ফলে উত্তোলন কমানোর পরও দেশটিতে পণ্যটির মজুদ দিন দিন বেড়েই চলেছে।