করোনাকালে মানসিক স্বাস্থ্যও গুরুত্বপূর্ণ

বণিক বার্তা ডেস্ক

নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি কি একজন মানুষের একমাত্র ভীতি? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আক্রান্ত হওয়ার বাইরেও একজন মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর এর বহুমুখী প্রভাব পড়ছে। এর মধ্য দিয়ে মানসিক চাপ উদ্বেগে মানুষের ভোগান্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে সৃষ্ট মানসিক পীড়ন মানুষকে কোনো অংশে কম ভোগান্তিতে ফেলছে না।

নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্ত না হলেও মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে ইচ্ছা করলেই মুক্ত থাকতে পারছে না মানুষ। বৈশ্বিক মহামারী আকার ধারণ করা কভিড-১৯ রোগের বিস্তারবিষয়ক খবর পাওয়ার মধ্য দিয়ে মানুষের মধ্যে হতাশা উদ্বেগ বেড়ে যাচ্ছে।

নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তারের ফলে সৃষ্ট উদ্বিগ্নতা শুধু কয়েকজন ব্যক্তিবিশেষের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়। দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনায় মারাত্মক উদ্বিগ্ন। ভাইরাসটি যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়ার পর ২৯ শতাংশ মানুষের আবেগ অনুভূতির ওপর প্রভাব পড়েছে। এর পাশাপাশি ২২ শতাংশ মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা খুবই খারাপ। দেশটির জনমত জরিপ প্রতিষ্ঠান অ্যাক্সিওসের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি বৈশ্বিক বিপণন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইপসোসের সভাপতি ক্লিফ ইয়াং বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতি এসব সমস্যাকে আরো বাড়িয়ে তুলবে। স্কুল বন্ধ, সীমিত ব্যবসা-বাণিজ্য, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর অত্যধিক চাপ বিরাজমান অবস্থাকে আরো কঠিন পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেবে বলে জানান তিনি। 

তবে মানসিকভাবে নিজেকে প্রফুল্ল রাখতে মানুষকে যেসব ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে সেগুলো হলো

প্রিয়জনের মুখ দেখা

বর্তমান পরিস্থিতিতে ঘরে থাকার কারণে প্রিয়জনদের মুখ খুব একটা দেখা হয়ে উঠছে না। সরাসরি সাক্ষাত করাটা এখন ঝুঁকিপূর্ণ। পরিস্থিতি মানসিক চাপ বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু স্মার্টফোন, স্কাইপ, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ প্রভৃতি মাধ্যম ব্যবহার করে সহজেই প্রিয়জনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা যায়।

 

চাপ মোকাবেলার শক্তি অর্জন

অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাইরাসটির বিস্তার ভয়াবহ গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু এর অর্থ এই নয়, আগামীর দিনগুলোয় একজন মানুষ অসহায়ের মতো দিন কাটাবে। মূলত একজন মানুষকে কঠিন সংকটের সময়ও লড়াই করতে হবে। এর মধ্যে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সব চাপ মোকাবেলা করার মাধ্যমে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। উদ্বেগ উত্কণ্ঠার মধ্যে এসব লড়াকু চিকিৎসকদের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করার মাধ্যমে চাপমুক্ত থাকতে পারে মানুষ। 

 

ভাইরাসবিষয়ক সংবাদ সীমিত পরিমাণে দেখা

নভেল করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক সংবাদ সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন হচ্ছে। সময় সবাই প্রতি ঘণ্টায় চোখ রাখছে সংবাদের ওপর। কিন্তু সংবাদের ওপর মানুষের খেয়াল রাখার প্রবণতা উদ্বেগকে বাড়াবে। মনোবিদ ডব্লিউ ন্যাত অ্যাপসো জানান, তথ্য বিষয়ে অবগত হওয়ার জন্য ভারসাম্য খুঁজে নিতে হবে। একজন বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, আমি কভিড-১৯ বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য জানতে সব সময় সচেতন থাকি। তবে সারাদিন উদ্বেগে না থেকে দিনে দুবার তথ্য সংগ্রহ করেন তিনি। 

সূর্যালোকে যাওয়া

ঘরে অবস্থানের সময় মানুষের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। এছাড়া সূর্যালোকে বের হওয়া খুবই জরুরি। অবস্থায় একজন ব্যক্তির মনোভাব স্বতঃস্ফূর্ত রাখতে সকালের রোদ গায়ে লাগানো প্রয়োজন বলে মনে করেন ডা. অ্যাপসো। তিনি জানান, আমি প্রতিদিন সকালের রোদ গায়ে মাখাতে বাইরে যাই। সকালের রোদ মানুষের শরীরের জন্য খুব কার্যকরী বলে উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়া সকালের রোদ মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতেও ভূমিকা রাখে। কভিড-১৯ মোকাবেলায় রোগ প্রতিরোধ সবচেয়ে জরুরি বলে জানান তিনি। 

 

সংগীত শখের কাজ করা

২০১৭ সালে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ মানসিক পীড়ন থেকে মুক্তির জন্য সংগীতের সহায়তা নিতে পারে। মানুষের অবসাদ থেকে মুক্তির জন্য সময়টায় ঘরে বসে নিজেকে শান্ত স্থির হিসেবে পরিচালিত করতে গিটার বাজানোসহ অন্য সংগীতের দিকে মনোযোগী হওয়া যেতে পারে। সংগীত, মন মেধা বিশেষজ্ঞ রবার্ট উইলিয়ামস জানান, দুশ্চিন্তা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পুরনো শখগুলো চর্চার দিকে মনোযোগী হওয়া যেতে পারে। 

 

মূলত বর্তমানে মানুষের দুশ্চিন্তার পরিধি বেড়ে গিয়েছে। অবস্থায় যোগব্যায়াম, হাস্যরসাত্মক চলচ্চিত্র উপভোগ করার পাশাপাশি নিজের শোবার ঘর, বাড়িঘর পরিষ্কারের দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। এছাড়া রান্নার কাজও মানুষকে মানসিকভাবে দুশ্চিন্তামুক্ত রাখতে সাহায্য করতে পারে।

দ্য হেলদি ডটকম

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন