কারখানা কার্যক্রমে গতি ফিরলেও অনিশ্চিত চীনের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার

ফেব্রুয়ারিতে নভেল করোনাভাইরাসের কারণে টালমাটাল অবস্থার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে চীনের কারখানা কার্যক্রম। তবে মার্চে অপ্রত্যাশিতভাবেই দেশটির কারখানা কার্যক্রমে দারুণ গতি পরিলক্ষিত হয়েছে। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে খুব আশাবাদী হওয়ার তেমন কোনো সুযোগ নেই। কারণ বিশ্বব্যাপী ভাইরাসটির সংক্রমণে ব্যাপক হারে কমে গেছে বৈদেশিক চাহিদা, একই সঙ্গে চোখ রাঙাচ্ছে অর্থনৈতিক মন্দা। ফলে খুব শিগগির চীনের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। খবর রয়টার্স।

মার্চে চীনের পারচেজিং ম্যানেজার্স ইনডেক্স (পিএমআই) আশ্চর্যজনকভাবে বেড়ে ৫২ পয়েন্টে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ ফেব্রুয়ারিতে সূচক কমে রেকর্ড সর্বনিম্ন ৩৫ দশমিক পয়েন্টে দাঁড়ায়। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার তথ্য নিশ্চিত করেছে দেশটির দ্য ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্টাটিস্টিকস (এনবিএস) পিএমআই সূচক ৫০ পয়েন্টের বেশি হওয়া সংকোচন থেকে প্রবৃদ্ধির লক্ষণ। তাছাড়া রয়টার্সের বিশ্লেষক জরিপ অনুসারে মার্চের পিএমআই সূচক আশা করা হয়েছিল ৪৫ দশমিক শূন্য শতাংশ।

ফেব্রুয়ারির তুলনায় পিএমআই সূচকের অবিশ্বাস্য ঊর্ধ্বগতি সত্ত্বেও চীনের অর্থনীতি নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে এনবিএস। সংস্থাটি বলছে, সূচকের পাঠ বর্তমান প্রেক্ষাপটে আর্থিক কার্যক্রমের স্থিতিশীলতা নির্দেশ করছে না। দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছেন অনেক বিশ্লেষকও। তাদের মতে, নভেল করেনাভাইরাসের সংক্রমণ এখন আর একটি অঞ্চলে সীমাবদ্ধ নেই। ভাইরাসটি পরিণত হয়েছে বৈশ্বিক মহামারীতে। বহু দেশ শহর বর্তমানে লকডাউন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক কার্যক্রম থমকে যাওয়ায় প্রায় অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছে মন্দা। পরিস্থিতিতে চীনের ব্যবসা বিস্তৃত অর্থনীতিকে আরো বেশকিছু সময় ধরে সংকট মোকাবেলা করতে হবে।

বিষয়ে ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের চীনবিষয়ক জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ জুলিয়ান ইভানস-প্রিচার্ড বলেন, পিএমআই সূচকের উন্নতির মানে এমন নয় যে উৎপাদন ভাইরাস-পূর্ব অবস্থায় ফিরে গেছে। সত্যি হলো, চীনের অর্থনৈতিক কার্যক্রম ফেব্রুয়ারির তুলনায় মোটামুটি বেড়েছে। কিন্তু তা অবশ্যই ভাইরাস-পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় অনেক কম।

এদিকে অর্থনীতিবিদরা প্রথম প্রান্তিকে চীনের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ব্যাপক সংকোচন হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন। কেউ কেউ বছরওয়ারি সংকোচন শতাংশ কিংবা তারও বেশি হবে বলে মনে করছেন। তিন দশকে চীন আর কখনই এমন সংকোচনের সম্মুখীন হয়নি।

সাংহাইভিত্তিক হোয়াবাও ট্রাস্টের অর্থনীতিবিদ নি ওয়েন বলেন, বর্তমানে চীনের উৎপাদকরা নানামুখী সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো দুর্বল হয়ে পড়া রফতানি আদেশ, জমে থাকা পণ্যের মজুদ দরপতন, বাজারের চাহিদা কমে যাওয়া। তবে দ্বিতীয় প্রান্তিকে চীনা অর্থনীতি সবচেয়ে বড় যে সমস্যার সম্মুখীন হতে যাচ্ছে তা হলো, বৈদেশিক চাহিদার পতন। তাছাড়া বিভিন্ন দেশের সরকার নিজ নিজ দেশের অর্থনীতি রক্ষায় একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছে। তারা তাদের অর্থনীতিতে কোটি কোটি ডলার ছাড়ছে। এর অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো, দেশজ ব্যয় সচল রাখা এবং সংকুচিত হতে থাকা বৈদেশিক চাহিদার সম্প্রসারণ। অবস্থায় চীনের জন্য বৈদেশিক বাণিজ্য আরো কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

এদিকে ব্যাপক অর্থনৈতিক ঝুঁকি সত্ত্বেও চীন নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপ রুখতে দেশজুড়ে কোয়ারেন্টিন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়। বিশেষ করে দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে লকডাউন অবস্থায় থাকে কারখানা সমৃদ্ধ হুবেই প্রদেশের উহান। বর্তমানে দেশটিতে ভাইরাস পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। কিন্তু বৈশ্বিকভাবে সংক্রমণ ক্রমবর্ধমান থাকায় চীন ঠিক নিশ্চিন্ত হতে পারছে না। দেশের বাইরে থেকে ফের যাতে সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে, সেজন্য বেশ সতর্ক থাকতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে, যা দেশটির কারখানা কার্যক্রম পুরোদমে শুরুর বিষয়েও প্রভাব ফেলছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন