২০১৮ সালের পর থেকে ডকবিহীন স্কুটার কোম্পানিগুলো সেবা দেয়া শুরু করেছিল। ব্যস্ততম শহরগুলোতে পরিবেশবান্ধব ও স্বাচ্ছন্দ্যময় ভ্রমণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারা। নতুন যুগের বাহন হিসেবে শুরুতে ভেঞ্চার ক্যাপিটালেরও ভালো সমর্থন পেয়েছিল ওই কোম্পানিগুলো। কিন্তু দ্রুতই যে সমস্যাগুলো তাদের সামনে এসে দাঁড়ায় সেগুলো হচ্ছে অস্থিতিশীল ব্যবসা মডেল, নিরাপত্তা উদ্বেগ ও দ্রুত পরিবর্তনশীল নগর নীতিনির্ধারকরা। ২০২০ সালের শুরু থেকেই লোকসানি এ কোম্পানিগুলোর কর্মীবাহিনী সংকুচিত হচ্ছিল এবং স্কুটারসংখ্যা কমছিল। এখন পুরো বিশ্ব যখন করোনাভাইরাস মহামারী ঠেকাতে ব্যস্ত সময় পার করছে, তখন স্কুটার সেবা খাতটি যেন অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে। খবর ব্লুমবার্গ।
মার্চের মাঝামাঝিতেই ব্যাপক হারে স্কুটারসংখ্যা কমিয়ে আনে দুটি বৃহত্তম বৈশ্বিক অপারেটর লাইম ও বার্ড। বিভিন্ন শহরে লকডাউন ঘোষণা এবং চাহিদা ব্যাপক হারে হ্রাস পাওয়ায় হুইলস ও জাম্পের মতো অন্য স্টার্টআপগুলো কীভাবে কাজ চালিয়ে যাবে, তা ঠিক করতে হিমশিম খাচ্ছে। তার ওপরে স্কুটারগুলোতে অসংখ্য মানুষের সংস্পর্শে ভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কাও এ সেবা গ্রহণ হ্রাসে ভূমিকা রেখেছে।
লাইমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও সহপ্রতিষ্ঠাতা ব্র্যাড বাও ২১ মার্চ এক ব্লগ পোস্টে জানান, দক্ষিণ কোরিয়া ছাড়া সব বাজারে সেবা সংকোচন বা স্থগিত করা হচ্ছে। কভিড-১৯ মহামারীর আগে আমেরিকা ও ইউরোপের ৩০টি দেশে ১ লাখ ২০ হাজার স্কুটার ছিল কোম্পানিটির। এদিকে বার্ড বলছে, মিয়ামি, সানফ্রান্সিসকো, স্যান হোসেসহ যুক্তরাষ্ট্রের ছয়টি শহরে কার্যক্রম বন্ধ রাখবে তারা। ইউরোপের ২১টি দেশ থেকে এরই মধ্যে তাদের স্কুটারগুলো তুলে নিয়েছে কোম্পানিটি।
উবারের নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান জাম্প বলছে, ইউরোপীয় বাজারের বেশির ভাগ অংশ থেকে বৈদ্যুতিক বাইক ও স্কুটার ভাড়া স্থগিত করা হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রে সেবা কমিয়ে আনা হয়েছে। নগর কর্তৃপক্ষের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে স্যাক্রামেন্তো শহরে সেবাটি একেবারে বন্ধ করা হয়েছে।
করোনাভাইরাস মহামারীতেই যে এ শিল্প সংকটে পড়েছে তা নয়, বরং এর আগে থেকেই কয়েক মাস ধরে এ খাতে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছিল এবং বিভিন্ন শহর থেকে স্কুটার ও ই-বাইকগুলো উঠে যেতে শুরু করেছিল। বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহে হিমশিম খাচ্ছিল লাইম ও বার্ড এবং গত বছরের শেষের দিকে উভয় কোম্পানিই তাদের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কর্মী ছাঁটাই করেছিল। প্রবৃদ্ধি নিয়ে আশাবাদী ওই কোম্পানিগুলো তখন বুঝতে পেরেছিল, তাদের জটিলতাপূর্ণ ব্যবসা পরিকল্পনা নিয়ে পুনরায় ভাবার সময় এসেছে।
এ মুহূর্তে বিশ্বজুড়ে যে শারীরিক বিচ্ছিন্নতা কার্যকর এবং বেশির ভাগ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে, সেই মুহূর্তে স্কুটার সেবা গ্রহণের কোনো প্রশ্নই আসছে না। এ কথারই প্রতিধ্বনি করে লাইমের চিফ পলিসি অফিসার ডেভিড স্পিয়েলফগেল বলেন, সবাই যদি যার যার বাড়িতে অবস্থান করেন এবং চলাচল না করেন, তাহলে এ ব্যবসা তো টেকসই থাকতে পারে না। আগে পর্যটকরা যেখানে এ সেবার বড় গ্রাহকশ্রেণী ছিলেন, তারা এ পরিস্থিতিতে সম্পূর্ণ হারিয়ে গেছেন। একই সঙ্গে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসেবে নিজেদের কর্মী ও গ্রাহকদের নিরাপত্তার স্বার্থেও কার্যক্রম স্থগিত রাখা জরুরি বলে মনে করেন স্পিয়েলফগেল।
ই-স্কুটার ব্যবসা নিয়ে শুরু থেকেই সন্দিহান ছিলেন অনেক বিনিয়োগকারী। আর্থিক, নিরাপত্তা ও নীতিনির্ধারণী বিধিনিষেধের বেড়াজালে বিদ্ধ খাতটির কফিনে যেন শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি।