নভেল করোনাভাইরাসে ভারতে লকডাউন

২ হাজার কোটি রুপি ক্ষতির মুখে চা শিল্প

বণিক বার্তা ডেস্ক

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেশব্যাপী তিন সপ্তাহের লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে ভারত সরকার। এতে অচল অবস্থায় পড়েছে দেশটির চা বাগানগুলোর সব ধরনের কার্যক্রম। ফলে চলতি বছর দেশটির চা কোম্পানিগুলো বড় ধরনের লোকসানে পড়তে যাচ্ছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। তারা আশঙ্কা করছেন, বছর ভারতের চা কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ পৌঁছতে পারে হাজার কোটি রুপিতে। খবর বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড ইকোনমিক টাইমস।

নভেল করোনাভাইরাস মাহমারীর শুরুর দিকে ভারতের চা বাগানের স্বত্বাধিকারীরা জানিয়েছিলেন, দেশটির চা বাগানগুলোয় নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা খুবই ক্ষীণ। ফলে প্রথম দিকে দেশটির চা বাগানগুলো খোলা রাখা হয়েছিল। তবে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক ভারতজুড়ে লকডাউন ঘোষণার পর কর্মীদের নিরাপত্তাবিষয়ক সতর্কতার কারণে চা বাগান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

এর আওতায় পড়েছে ভারতের সবগুলো নিবন্ধিত চা এস্টেট। সংখ্যায় যা হাজার ৪২২টি। এছাড়া আড়াই লাখের বেশি মাঝারি ক্ষুদ্র চা উৎপাদনকারীও লকডাউনের আওতায় পড়েছে। এতে দেশটির বাগানগুলো থেকে পানীয় পণ্যটির সরবরাহ একেবারে বন্ধ হয়ে পড়েছে। অভ্যন্তরীণ বাজারে চায়ের চাহিদা নেই বললেই চলে। এমনকি শীর্ষ রফতানি বাজারগুলোতেও পণ্যটির ক্রয়াদেশ সংকুচিত হয়ে পড়েছে। 

টি বোর্ড অব ইন্ডিয়ার ডেপুটি চেয়ারম্যান অরুণ কুমার রায় বিষয়ে বলেন, মুহূর্তে সমগ্র ভারতবাসীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ মহামারীর বিস্তার রোধে দায়িত্বশীল হওয়া। কথা মাথায় রেখেই টি এস্টেটগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে।

ভারতের চা কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, লকডাউনের জেরে দেশটির বাগানগুলোতে চায়ের উৎপাদন ১০ কোটি কেজি কমে যেতে পারে। আর্থিক হিসাবে যার পরিমাণ দাঁড়াতে পারে হাজার কোটি রুপির মতো। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে আসাম পশ্চিমবঙ্গের চা উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো। কারণ মার্চ-এপ্রিল সময়ে ভারতের মোট চা উৎপাদনের শতকরা ১৫ ভাগ উৎপাদিত হয় দুই রাজ্যে। 

এছাড়া বার্ষিক হিসাবে ভারতে উৎপাদিত মোট চায়ের ৫০ শতাংশের মতো উৎপাদিত হয় শুধু আসামে। গত বছর দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যটিতে মোট ১৩৯ কোটি কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল। 

এদিকে লকডাউনের ধাক্কা থেকে রক্ষা পায়নি ভারতের অভিজাত চায়ের রাজ্য দার্জিলিং ডুয়ার্চের স্টেটগুলোও। বরং তাত্ক্ষণিকতা বিচারে অন্য রাজ্যগুলোর চেয়ে ক্ষতির দিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছে অঞ্চল দুটি। বছরের সময়ে রাজ্য দুটিতে চায়ের প্রাক-ক্রয়াদেশ চুক্তি সম্পন্ন হয়ে থাকে। চলতি বছরের এখন পর্যন্ত দেশটির ব্যয়বহুল চায়ের তেমন কোনো চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি বলে জানিয়েছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

পশ্চিমবঙ্গের চা উৎপাদনকারী কোম্পানি গুডারিক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অতুল আস্থানা জানান, লকডাউন তুলে দেয়া মানেই চা বাগানগুলোর কর্মকাণ্ড শুরু হয়ে যাওয়া নয়। উৎপাদন কার্যক্রমে ফিরতে আরো দেরি হয়ে যেতে পারে। বাগানগুলোর বাদামি হয়ে যাওয়া পাতা ছাঁটাই করতে কমপক্ষে ১০ দিন লেগে যেতে পারে। 

ভারতের চা উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর মতে, এস্টেটগুলো যদি এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত বন্ধ থাকে, তবে মে মাসের আগে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে না। মে মাস থেকে ভারতে চায়ের মূল উৎপাদন মৌসুম শুরু হয়। সময় থেকে দেশটিতে সবচেয়ে উন্নতমানের দামি চা পাতার উৎপাদন শুরু হয়। 

দার্জিলিংয়ের একজন চা উৎপাদক বলেন, দ্বিতীয় কিস্তির চা উৎপাদনের জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতির প্রয়োজন পড়ে। তাই বাগানগুলো কার্যক্রমে ফিরতে যদি মে মাস চলে আসে, তবে ব্যয়বহুল চা উৎপাদনের জন্য তা অনেক দেরি হয়ে যেতে পারে। ধরনের চায়ের প্রধান রফতানি বাজার জার্মানি জাপান। 

তো গেল উৎপাদনের কথা। নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপে ভারতের চায়ের রফতানি খাতেও ধস নামতে পারে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। ভারতের চা রফতানির শীর্ষ বাজারগুলোর মধ্যে রয়েছে ইরান, জাপান, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ আরো অনেক দেশ, যারা এখন চা কেনা নয়, বরং নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে ব্যস্ত। ক্রেতার অভাবে দেশটির নিলামগুলোতে অবিক্রীত চায়ের পরিমাণ বাড়ছে। এমনকি কয়েকটি চা নিলাম স্থগিত করা হয়েছে। 

কলকাতার একটি চা রফতানি সংস্থা জানায়, এখন পর্যন্ত চায়ের খুব কম প্রাক-ক্রয়াদেশ চুক্তি হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পানীয় পণ্যটির চাহিদা প্রত্যাশার তুলনায় অনেক বেশি কমে গেছে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন